জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে চাই। গতানুগতিকতার গন্ডি থেকে মুক্তি চাই। এতে হয়তো শুনতে হবে অনেক অপমানের বাণী। ভয় করি না।
গত মাসে সেন্ট মার্টিন গেলাম।
অনেক দিন ধরেই ইচ্ছা ছিল যে সেন্ট মার্টিন যাব। কিন্তু এই যান্ত্রিক লাইফের এক ঘেয়েমি তে আর হয়ে উঠছিল না। আমরা চার বন্ধু মিলে ঠিক করলাম সেন্ট মার্টিন যাব এবারে ঈদের ছুটিতেই। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য ২ টি। একটি কারণ হল নিজের আনন্দ সবার সাথে শেয়ার করা আর আরেকটি হল নিজের অভিজ্ঞতায় আপনারাও হয়তো উপকৃত ও অনুপ্রাণিত হতে পারেন।
ঈদের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই সেন্ট মার্টিনের যাবতীয় টিকেট আমরা কেটে ফেললাম। সেন্ট মার্টিন আপনি ২ ভাবে যেতে পারেন। এক সুম্পূর্ণ নিজেরর উদ্যেগে,...। এক্ষেত্রে আপ্নাকেই টেকনাফের বাস ঠিক করতে হবে,বাস কাউন্টারে যেতে হবে...টেকনাফে গিয়ে নিজেকেই লঞ্চের টিকেট কাটতে হবে। সেন্ট মার্টিন গিয়ে হোটেল খুঁজতে হবে।
দরদাম করতে হবে। হাজারও ঝামেলা। তবে আপনি চাইলে কোন প্যাকজের সাথে যেতে পারেন। যেমন আমরা গিয়েছি কেয়ারী প্যাকেজে। এ ক্ষেত্রে কেয়ারী আমাদের টেকনাফের বাসের টিকেত,সকালের নাস্তা,দুপুরের লাঞ্চ,বিকালের নাস্তা,লঞ্চ ভাড়া আপ-ডাউন ,আর রাতের খাবার ৩ দিন দিয়েছে।
আমাদের এর জন্যে খরচ হয়েছে মাত্র ২৮০০ টাকা। আমরা ছিলাম হোটেল অবকাশে। হোটেল অবকাশ আবার খুব সুন্দর। সেন্ট মার্টিন এ যে ইটের বিল্ডিং আছে জানতামই না। অবকাশের বাথরুম অনেক ভাল।
টাইলস করা। আমি তো বেশ অবাকই হলাম। অবকাশে কারেন্ট থাকে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত। প্রথম দিন আমি বেশ আপসেট ছিলাম রাতে গরমে কি করে ঘুমাব?কিন্তু পরে দেখি এত বাতাস বইছে আমার বারান্দা দিয়ে যে বাধ্য হয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমালাম। সেন্ট মার্টিনে গিয়েছেন কিন্তু সাগরে সাঁতার আর গোসল করেননি।
আমি মনে করি তার সেন্ট মার্টিন যাওয়া অসম্পূর্ণ। আমার এক বন্ধু যে কখনই সাগরে নামতে চায়নি। আমি তাকে জোর করে পানিতে নিয়ে গেলাম এবং গোসল করালাম। পরে সেই বন্ধু আমাকে বলে আজকে তোমার জন্যই আমি প্রকৃত আনন্দ পেলাম। ধন্যবাদ।
প্যাকেজ বিষয়ে বলে রাখি আপনি যদি প্যাকেজে যান তাহলে আপনার থাকা খাওয়া এসব বিষয় নিয়ে খুব চিন্তা করতে হবে না। আর খরচও অনেক কম। অপ্র পক্ষে আপনি যদি নিজের উদ্যেগে যান তাহলে আপনাকে অনেক খরচ বহন করতে হবে। এমনও হতে পারে আপনি দ্বীপে গিয়েছেন কিন্তু রুম পান নি। তখন আপনাকে হয়তো রাতের বেলা খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হতে পারে।
যেমনটী হয়েছিল আমার স্কুলের এক বড় ভাইয়ের। তিনি আমাদের এরকম আরাম শুনে হায় হুতাশ করতে লাগলেন এবং আফসোস করলেন কেন তারা প্যাকেজে আসেনি। ইচ্ছে মত পুরা দ্বীপ চষে বেরালাম। পানির বিকল্প হিসেবে ডাব খুবই কার্যকারী। একই সাথে আপনার পিপাসা এবং ডাবের শাঁসের মাধ্যমে ক্ষুধা নিবারণ করা খুবই সম্ভব।
ছেঁড়া দ্বীপে যেতে পারেন। ঈশ্বর যে কি সুন্দর করে সাজিয়েছে এ সম্পর্কে শুধু একটা কথাই বলতে পারি। আই ক্যান্ট এক্সপ্ল্যাইন অর ইউ ক্যান্ট ইমাজিন। এই কথাটা মনে হবে ছেঁড়া দ্বীপে গেলে। ছেঁড়া দ্বিপে কোন বসতি নাই।
জোয়ারের সময় এই দ্বীপটি মূল দ্বীপ থেকে আলাদা হয়ে যায় তাই এর নাম ছেঁড়া দ্বীপ। আমি খুব বেশী জায়গায় যাই নি বাংলাদেশের। কিন্তু আমার সব চাইতে ভাল লেগেছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। হোটেল অবকাশের সামনে একটা উঠানের মত জায়গা আছে। জায়গাটা আড্ডা বাজি গল্প করার জন্যে আমি বাজি ধরে বলতে পারি এর চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না।
বিশেষ করে যদি ভরা পূর্ণিমা আর জোৎস্না রাত থাকে আর আকাশে অসংখ্য তারা থাকে। আমার এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল। সে সেই চাঁদনী রাতে আমাদের জন্য বার বি কিঊ পার্টি করল। সেটিও অসাধারণ। আমরা ১ দিন বেশী দ্বীপে ছিলাম ।
আমাদের যেদিন ফিরার কথা সেদিন সিন্দবাদ আসতে পারে নি আমাদের নিতে। সাগর অনেক উত্তাল ছিল। দ্বীপে তাই একদিন বেশীই ফ্রী ফ্রী থাকতে আর খেতে পারলাম। এটি এমন এক জায়গা যেখানে বার বার শুধু যেতে ইচ্ছে করে। সাগর এমন উত্তাল ছিল ফেরার সময় সিন্দবাদ শুধু একবার নিচে যাচ্ছিল আবার এক তালা সমান উঁচুতে উঠছিল ।
যাত্রীরা বিশেষ করে মহিলা যাত্রীদের অনেক কেই কান্না কাটি করতে দেখলাম। যদিও আমার খুব ভাল লাগছিল। পুরো দ্বীপ টা ডিম্বাকৃতির । আপনি সহজেই হেঁটে রাউন্ড দিতে পারেন। প্রবাল দ্বীপে আছে অসংখ্য প্রবাল ।
কি সুন্দর বলে বুঝানো যাবে না। সেন্ট মার্টিনের মোবাইল নেট ওয়ার্ক খুবই ভাল । আমি তো রীতিমত জিপি ইন্টারনেট আর আমার ল্যাপ্টপ দিয়ে হাই স্পীড নেটে ব্রাউজ করলাম।
পরিশেষে যখন জাহাজ সেন্ট মার্টিন ঘাট ছাঁড়ল তখন শুধুই চিন্তা করছিলাম আবার আমি এখানে আসবই ইনশাল্লাহ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।