সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল আমার এক প্রবাসী বন্ধু বিদেশিনী বধু নিয়ে ঢাকায় এসেছিল। খুব আগ্রহ করেই শশুড়বাড়ির বিনোদন উপভোগের জন্য টিভির সামনে বসেছিল। ছায়াছন্দ বা সিনেমার গান এই রকম একটি অনুষ্ঠান দেখে বধুর মুখ ভার। আমরা দেবর হিসাবে কারণ জিজ্ঞেস করতেই বেমাক্কা বলে বসলো ওই গুলি দেখার চেয়ে নাকি পর্ণ দেখা ভালো।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মন্ত্রিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালি।
প্রথমত তিনি আওয়ামি লিগের সাঃ সম্পাদক। দ্বিতীয়ত তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রানালয়ের মন্ত্রি। এমন একটি শক্তিশালি অবস্থান যিনি থাকেন স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে দ্বায়িত্ববান হবেন, সেটিই স্বাভাবিক।
তবে দেশটা যখন আওয়ামি লিগ চালাচ্ছে, সেখানে হবুর রাজ্যে গবু দ্বায়িত্বশীল পদ পেতে পারে, এমনটি খুবই সম্ভব। তার কিছু কিছু প্রমানও আশ্রাফ সাহেব দিয়ে রেখেছেন।
যেমন ধরুন জিয়া এবং এরশাদের আমলের প্রজন্মকে তিনি নস্ট প্রজন্ম আখ্যা দিয়েছেন। যদিও খোদ এরশাদকে পাশে বসিয়েই তাদের রাজনীতি। আর আজ তিনি যে উড়ে এসে আওয়ামি লিগের গুরুত্বপুর্ণ পদে আসীন, সেটিও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানেরই বদ্যনতায়।
আশরাফ সাহেবের নতুন উক্তি, বাংলাদেশের ব্লগগুলি নাকি পর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছে।
আমার বন্ধুপত্নির মত আশরাফ বিদেশি বংশোদ্ভুত না হলেও বিদেশেই জীবন যৌবন কাটিয়েছে।
সুতরাং পর্ণ কি সেটা তার না জানার কিছু নেই।
বাংলা ছবিতে অশ্লীলতা নতুন কিছু নয়। তবে সেটা মাত্রাছাড়া বা এমনকি দক্ষিণ ভারতীয় অর্ধপর্ণের মতও না। কাটপিসের কথা উল্লেখ করা যুক্তিযুক্ত না, কারণ সেটা সেন্সর বোর্ড অনুমোদিত নয়।
আমার বন্ধুপত্নি একটা প্রি কন্সিভড নোশন নিয়েই বাংলাদেশে এসেছিলেন।
কারণ তাদের মিডিয়াতে বাংলাদেশ মানেই দরিদ্র পীড়িত এক দেশ। যাদের ভাষা সংস্কৃতি তাদের সমমান তো দুরের কথা সভ্যতার মধ্যেও পড়ে না। সুতরাং তাদের ছবির গানকে পর্ণের সাথে তুলনা দিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সুযোগ তিনি ছাড়েননি। বলা বাহুল্য সেদিনের পর আমরা কোনদিন সেই বন্ধুপত্নীর সাথে কোন কথাও বলিনি। দরকার পড়েনি, কারণ বিয়েটাই টিকেছিল মাত্র ৩ সপ্তাহ।
বন্ধু পত্নি না হয় বিদেশি এবং মিডিয়ার কথা ১০০% বিশ্বাস করে বাংলাদেশের প্রতি একধরণের বিতৃষ্ণা পোষণ করতো। আশরাফ সাহেব যৌবনকাল বিদেশে কাটালেও তো জন্ম বেড়ে উঠা সবই বাংলাদেশে। তিনি কেন এ ধরণের বিতৃষ্ণা পোষন করবেন? বিশেষ করে ব্লগিং যখন খুব নতুন একটা ধারণা। এবং আমার বিশ্বাস আশরাফ সাহেব নিজে কোনদিন সেপথে হাটেননি।
আগে চলুন পর্ণগ্রাফির সংজ্ঞা এবং ইতিহাস জেনে নেই।
পর্ণগ্রাফি হচ্ছে মানুষের যৌনকর্মকে কথামালা, কিংবা স্থির চল চিত্রের মাধ্যমে সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। আধুনিক পর্ণগ্রাফির যে চল, তার শুরু হয়েছিল ভিক্টোরিয়ান যুগের ইউরোপ থেকে।
ফ্রেঞ্চ চিত্রকর এদোওয়ার্ড মানেটের আকা অলিম্পিয়া নামের এই ছবিটিকেই আধুনিক পর্ণগ্রাফির শুরু মানা হয়ে থাকে।
১৮৬০ সালে ইটালির পম্পেই শহরে প্রত্মতাত্তিক খনন কার্য চালানোর সময় উদ্ধার করা হয় রোমান সম্রাজ্যের সময় আকা বিপুল পরিমান যৌনতা সর্বস্ব চিত্রকর্ম। রোমানদের উত্তরসুরি হিসাবে খ্যাতি পাওয়া ভিক্টোরিয়ানরা সে সময় রক্ষণশীল সমাজের কথা চিন্তা করে সাধারণের জন্য সেসব উন্মুক্ত করেননি।
তবে উচুতলার মানুষদের জন্য এই বাধা কার্যকর ছিল না। সে সব চিত্রকর্ম নেপোলিতে খুবই গোপন একটা যাদুঘরে সেগুলি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।
১৮৫৭ সালে পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে বৃটেন এবং আয়ারল্যান্ডে কঠোর আইন প্রনয়ন করা হলেও, চলচিত্রে পর্ণগ্রাফির শুরু হয়ে যায় চলচিত্রের আবিস্কারের পর পরই ( ১৮৯৫ সালে)।
কঠোর আইনের কারণে এর বানিজ্যিকরণ বন্ধ থাকলেও, ১৯২০ সাল থেকেই ফ্রান্স আর যুক্তরাস্ট্রে ব্যাক্তিগত পর্যায়ে গোপণেই এগুলি তৈরি হতে থাকে। যার উপভোগকারিরা ছিলেন সমাজের প্রভাবশালিরাই।
তবে ১৯৬৯ সালে ডেনমার্ক পর্ণগ্রাফিক চলচিত্রকে আইনি অনুমোদন দিলে সারা বিশ্বে পর্ণগ্রাফিক চলচিত্র আমদানিরর হিড়িক পড়ে যায়। তবে যা ছিল গোপণে এবং বিশেষ শ্রেণীর কাছেই লভ্য।
বস্তুত অর্থনৈতিক লাভের কথা বিবেচনা করেই, পশ্চিমা বিশ্ব পর্ণগ্রাফির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় সময়ে সাথে আজ পর্ণগ্রাফি সারা বিশ্বে প্রসার লাভ করেছে। আর অন্তর্জাল সৃস্টির পর পরই দেখা যাচ্ছে ইন্টারনেট ব্যাবহারকারিদের একটি বিশাল অংশ, তাদের ইন্টারনেট ব্যাবহারের একটা বড় অংশ পর্ণগ্রাফি উপভোগের পেছনে ব্যয় করছেন।
বাংলাদেশে পর্ণগ্রাফির প্রচলনের মুল হোতা কারা জানেন? যারা পুরানো ঢাকায় ভিসি আরে প্রথম ছবি প্রদর্শন শুরু করেছিল।
গুঞ্জন রয়েছে যে, এর নেপথ্যে ছিল আজিজ মোঃ ভাই, তার শশুড় বান্টি (ভি ডিও কানেশনের মালিক) এবং জাহাঙ্গির মোঃ আদেল। এই সেই আদেল, যে হচ্ছে কুখ্যাত মোনায়েম খানের জামাতা। এই তো বেশ কিছু বছর আগেও যার বাড়িয়ে পাকিস্থানি পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছিল।
ধরে নিচ্ছি আশরাফ সাহেব পর্ণগ্রাফি উপভোগের বিপক্ষ্যে। ভালো কথা।
তাহলে তার শক্তিশালি অবস্থান থেকে কেন মোবাইল কিংবা ভিসিডি পর্ণ বন্ধ করছেন না?
কেন অন্তর্জালে পর্ণগ্রাফি বন্ধ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না?
কেন গোপণে ধারণ করে পর্ণগ্রাফি ছড়িয়ে দেবার বিপক্ষ্যে কঠোর আইন প্রণয়ন করছেন না?
কেন সারা দেশের আনাচে কানাচে চলা প্রেমের নামে চলা উন্মুক্ত পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে কথা বলছেন না?
আশরাফ সাহেবের শশুরবাড়ি থেকে যে ধরণের চলচিত্র বানানো হয়, সেটি পর্ণ না হলেও চরম অশ্লিল এবং সমাজ অবক্ষায়ক। কই, আশরাফ সাহেবদের দেখি সেটা নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই।
যে সব উদ্যোগ প্রকৃত অর্থেই দেশ ও সমাজের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে সে সব উদ্যোগ নেবার পরিবর্তে নিতান্তই মুর্খের মত ব্লগগুলিকে পর্ণগ্রাফি বলে বক্তব্য দিলেন। যার মুল কারণ তিনি যতই আড়াল করতে চান, সচেতন মানুষের চোখকে ফাকি দিতে পারেনি।
দেশের মিডিয়াগুলিকে বলা যায় আওয়ামি বাপ বেটির বাক্স।
চ্যানেল আই, একুশে টিভি, দেশ টিভি, আর টিভি , অমুক টিভি তমুক টিভির মালিকপক্ষ যে একনিস্ট আওয়ামি প্রেমিক সেটা মুখে বলার দরকার হবে না। পত্রিকাগুলির মধ্যেও একই অবস্থা। ব্যাতিক্রম শুধু আমার দেশ পত্রিকা।
যতই রাখ ডাক আর কথায় পেচিয়ে রাখা হোক না কেন, আওয়ামি লিগের "সুশাসন" আর ভারতপ্রেম ডেকে রাখা সম্ভব হয় না। মিডিয়াতে জনগণের কথা চিন্তা করে খুব হাল্কা করে প্রচার করা হয় এবং ফলো আপ না করে সেই ইস্যুটিকে জনগণের স্মৃতির পাতা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।
কিন্তু ব্লগে সেটা সম্ভব হয় না। তাই আশরাফ সাহেবদের সব রাগ এখন ব্লগের উপরে। কেননা তিনি এবং তার দলের বহু জারিজুরি ফাস হয়ে যায় এই ব্লগেই। আর এই ব্লগ বিচ্ছুরা বরাবরই আশরাফ সাহেবদের আইন পুলিশ আর পেটোয়া বাহিনীর ধরাছোয়ার বাইরে থাকে।
ব্লগে এই বিচ্ছুদের এভাবে চলতে দিলে আশরাফ সাহেব এবং তার দলের মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠির প্রতাপ এবং সম্মান ধুলায় লুটিয়ে যাবে।
তার এবং তার দলের পোষ্য লেজনাড়াদের প্রচার করা মিথ্যা ইতিহাস আর মানুষকে গেলানো যাবে না। একারনেই ব্লগের বিরুদ্ধে পর্ণগ্রাফির মত একটি বিশ্ব নিন্দিত এবং ঘৃণিত মিডিয়ার অপবাদ দিয়ে এর বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতলবেই আশরাফ সাহেবের ঐ বালখিল্য উক্তি।
বিরোধীদের মতামত সহ্য করতে না পেরে, এবং স্বীয় দলের দুর্ণীতি লুটপাট আর সন্ত্রাসের খবরগুলি আড়াল করতেই ১৯৭৫ সাথে বাকশাল গঠন করা হয়েছিল। সেই "মহান কাজে" আশরাফ সাহেবের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামও জড়িত ছিলেন।
আর ২০১১ সালে সৈয়দ আশরাফ সাহেবেও পিতার পদাংক অনুসরণ করার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।
১৯৭৫ সাল আর ২০১১ সাল এক নয়, এই বাস্তবতাটি আশরাফ সাহেব ও তার দলকে বুঝতে হবে। আরো বুঝতে হবে যে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি অতীতেও হয়েছে। বর্তমানেও যে হবে না, এমন নিশ্চয়তা দেবার মত আত্মবিশ্বাস কি আশরাফ সাহেব কিংবা তার দলের রয়েছে?
শেষ কথাঃ ব্লগে আছি ৩ বছর দুই মাস। ১৮+ পোস্ট দিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের লোভ কোনদিন ছিল না, এখনও নেই।
নব্য বাকশালিদের বিরোধী মত রুদ্ধ করার নব্য চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্যই এমন একটি পোস্ট দিতে বাধ্য হলাম।
আমার অনেক গুণমুগ্ধ গুরুজন সতীর্থ অনুজপ্রতিম এবং সমালোচক আছেন। তাদের মনে এই পোস্ট ও পোস্ট সংক্লিস্ট ছবি কস্ট দিয়ে থাকলে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ধন্যবাদ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।