পালোয়ানের প্রলাপ ১.
তুহিনের ঘরে বড় কোনো আয়না নেই। ছেলেদের ঘরে বড় কোনো আয়না থাকার কথাও না। সে তাই বেসিনের ওপাশের আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে নিজেকে। গাল, চোখের কোল টেনে টেনে দেখছে।
হালকা দাঁড়িতে বেশ ভালই লাগে তাকে। আর এলোমেলো চুল। কেমন একটা উদাস উদাস ভাব থাকে চেহারায়। তুহিনের ধারণা, তার চেহারায় একটা মায়া আছে।
সে ভাবছে, "আহারে কী সুইট একটা পোলা! কিন্তু পোলাটারে কেউ ভালবাসে না।
কান্দিস না তুহিন! আমি নিজেই তোরে ভালবাসি। "
তুহিনের ভাবতে ভাল লাগে যে তাকে কেউ ভালবাসে না, এতে বেশ একটা দুঃখবোধ সৃষ্টি হয়, যা কি না তুহিন উপভোগ করে!
তুহিন এবার এদিক ওদিক তাকালো। না, কেউ দেখছে না তাকে। সে আবার তার ঘরে ফিরে এলো।
আয়নার সামনে যাবার কারণ হচ্ছে আজ সে আদৃতার সাথে প্রথম দেখা করবে।
আদৃতার সাথে তুহিনের পরিচয় ফেসবুকে। তুহিন টুকিটাকি কবিতা পোস্ট করতো ফেসবুকে আর একটা ব্লগে। সেখান থেকেই এক দিন মেয়েটা তাকে ফেসবুকে খুঁজে বের করে খাতির জমিয়ে ফেললো। তুহিনের অবশ্য সেসময় মেয়েদের প্রতি আগ্রহ কমে গিয়েছিলো। কারণ সে তার প্রথম প্রেমিকাকে ভুলে উঠতে পারেনি তখনো।
সে তখন ঘোরের মধ্যে বসে বসে প্রলাপের মত কিছু লাইন লিখতো। লোকের কাছে সেগুলোই আধুনিক কবিতা বলে পরিচিত হল এবং আদৃতার মত অনেক মেয়েই তার লেখার প্রশংসা করে তার ফেসবুক বন্ধু হয়েছিলো। অনেকেই হাই/ হেল্যো বলতো। অনেকেই কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতো। তুহিন শুধু সেগুলোর উত্তর দিয়ে যেত রবোটের মত।
নিজে থেকে কিছুই বলত না। ফলে অনেক মেয়েই আগ্রহ হারিয়ে ফেলত!
কিন্তু একমাত্র আদৃতাই অসীম উৎসাহে তার সাথে কথা চালিয়ে গেলো। আর দীর্ঘদিন কথা বলে তাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হলো, ফোন নম্বর আদান প্রদান হলো। আজ দেখাও হতে চলেছে।
মেয়েটার সাথে কথা বলে খুব ভালই লেগেছে তুহিনের।
ফেসবুকে একটা মাত্র ছবি ছিলো ওর। তুহিন একবার ভেবেছিলো প্রেমের প্রস্তাব দেবে কি না! কিন্তু না দেখে প্রেম করাটা কি ঠিক হবে?!
২.
আজকাল কত খারাপ কিছুই ঘটে। পত্রিকায় সে সব নিত্যই দেখা যায়। আদৃতা কোনো ঠগ না তো? এ চিন্তাও তুহিনের মাথায় আসতো। ফেসবুকের পরিচয়ে দেখা করাটা কী ঠিক হচ্ছে?
কিন্তু তুহিন শেষ পর্যন্ত বিকেল চারটায় চন্দ্রিমা উদ্যানে পৌঁছে আদৃতাকে কল করলো, "তুমি কই?"
আদৃতা বলল, "তোমাকে আমি দেখতে পাচ্ছি।
যেখানে আছো, সেখানেই দাঁড়াও। "
তুহিন নীল পাঞ্জাবি গায়ে উদাস ভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ এক শাড়ি পড়া মহিলা এসে বললেন, "আমিই আদৃকা!"
৩.
তিন মাসের পরিচয়ে তুহিন কখনো আদৃকা কী করে, কীসে পড়ে এসব জানতে চায় নি! আসলে সব কথা তো আদৃকা নিজেই বলত! ইশ কী ভুলটাই সে করেছে। কয়েক বছরের সিনিয়ার একটা মেয়ের সাথে আরেকটু হলে প্রেম হয়েই যাচ্ছিলো! কিন্তু আদৃকার কণ্ঠ শুনে বোঝা যায় নি যে আদৃকার বয়স ত্রিশ!
তুহিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলো। আদৃতা বললো, "কী? আমি নিশ্চিত তুমি আমাকে বাচ্চা মেয়ে ভেবেছিলে! চলো ওদিকটায় বসি।
"
তুহিন বললো, "চলুন। "
আদৃতা বললো, "আপনি করে বলছ যে হঠাৎ! আমরা তো বন্ধুই, তাই না?"
ইতস্তত করে তুহিন বলল, "এঁ, আচ্ছা চলো। "
৪.
তুহিন এবার উদাস ভাব ছেড়ে কিছুটা সচেতন হয়েছে। সেদিন বাসায় ফিরেই রাতের বেলা ফোন করে আদৃতার বিষয়ে অনেক কিছু জেনে নিয়েছে। আদৃতা তুহিনের চেয়ে পাঁচ বছরের বড়! উঁহু উঁহু সে তো আদৃতার প্রতি তিন মাসে অনেক টা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
আর দুর্বল হওয়া যাবে না। তার পক্ষে সিনিয়ার মেয়ের সাথে কিছু করা সম্ভব না। সে সব সময়ই একটা পিচ্চি সুইট মেয়েকে ড্রিমগার্ল হিসেবে ভেবেছে। কী করা যায়?
"আচ্ছা আদৃতা, তোমার কী প্রেমিক আছে?"
"ক্যান?"
"নাহ, এম্নি। আচ্ছা শোনো, ফেসবুকে তোমাকে সিস্টার হিসেবে লিস্টেড করি? তুমি তো আমাকে ভাইয়ের মতই অনেক টেক কেয়ার করেছ এতদিন।
"
"হাহাহা। হ্যাঁ, করো। সমস্যা নেই। "
৫.
আদৃতার মন খারাপ। তুহিনকে সে ভাইয়ের মত দেখত না মোটেও।
এখন কী আর করা। সে তুহিনকে বানিয়ে বানিয়ে টেক্সট করলো, "দ্যাখো, আমার এক জন বয়ফ্রেন্ড আছেন। কিন্তু এতদিন তোমার সাথে যে রকম আচরণ করেছি, তাতে তোমার ভেবে বসাটা স্বাভাবিক যে আমি তোমার প্রেমে পড়েছি। কিন্তু আমি তোমার লেখা পড়ে তোমার বিদ্ধস্ত অবস্থার কথা বুঝতে পেরেই তোমাকে মানসিক সাহায্য করেছিলাম স্বাভাবিক হতে। আমার মনে হয় আমি সফল হয়েছি।
আমার মনে হয়, এখন আর আমার প্রয়োজন নেই তোমার টেক কেয়ার করার। ভাল থেকো। "
তুহিন এই মেসেজটা পড়ে আর রিপ্লাই দিতেও পারলো না কারণ আদৃতা ততক্ষণে তাকে ব্লক করে ফেলেছে। আশ্চর্য! ফোন নম্বর ও বন্ধ।
কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে মেসেজ দিলো, "হাই!" ...এবং কবি তুহিন আহমেদ তার সাথে মেসেজিং করতে করতে আদৃতাকে ভুলে গেলো সাময়িক ভাবে।
আর আদৃতা? আদৃতা তখন সেই মেয়েটার আইডি থেকেই তুহিনের সাথে চ্যাট করছিলো! সে তুহিনকে 'ভাই' ভাবতে পারবে না। ফোনে না হোক, অন্তত ফেসবুকে সে তুহিনকে প্রেমিক হিসেবে পেতে চায় ফেইক আইডি দিয়ে হলেও!
#একটি_ফালতু_ফেসবুকীয়_কাহিনী
সন্ধি মুহিদ
৯/৭/১৩ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।