*****
‘বেড়াও ক্ষেত খায়’ বলে যে বদনামটা ছিল আমাদের সীমান্ত প্রহরীদের সম্বন্ধে, সেটা এবার অনেকাংশে ঘুচে গেল। তারা যে অদক্ষ নয় সেটাও প্রমাণিত হলো।
ট্যানারি মালিক সিণ্ডিকেট চাইলো ‘চামড়া পাচার বন্ধ হোক্’, --অতিরিক্ত কোনো চৌকিদার নিয়োগ করে সীমানায় মোতায়েন করতে হয়নি, যারা আগে ছিল, দেখা গেল তারাই যথেষ্ট। নভেম্বর৭, ২০১১-র কোরবানির পশুর চামড়া চোরাপথে দেশের বাইরে যেতে পারলো না। অনুগত সীমান্তরক্ষীরা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিল।
চামড়াখোর সিণ্ডিকেট আগেভাগে চামড়ার দর বেঁধে দেওয়ার পক্ষে সায় দেয়নি। চামড়া পাচার হওয়ার রাস্তাটা তারা সুকৌশলে সরকারের মাধ্যমেই বন্ধ করে নিয়েছিল।
মাঠপর্যায়ে ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী যারা চামড়া সংগ্রহ করে, তাদেরকে আর্থিক ক্ষতিতে ডুবিয়ে এবার যেভাবে পথে বসানো হলো, আমরা কি ধরে নেবো ট্যানারি মালিকরা আগামীতে সরাসরি কোরবানি দাতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজেরাই চামড়া সংগ্রহ করবে? নাকি ট্যানারি মালিক জোট (সিণ্ডিকেট) বিকল্প কোনো মাধ্যম উদ্ভাবন করেছে, কিম্বা বিশেষ কোনো প্রযুক্তিকে কাজে লাগাবে! ফলে, চামড়াগুলো ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের মাধ্যম ছাড়াই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উড়ে উড়ে গিয়ে তাদের গুদামে ঢুকবে?
পরে অবশ্য দর বেঁধে হয়েছিল, সিণ্ডিকেটের চাপের মুখে সিণ্ডিকেটের স্বার্থকেই চরিতার্থ করা হয়েছিল।
মূল্য নির্ধারণের জন্যে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে যোগসাজশ করে অথবা তাদেরকে হুমকি বা চাপের মুখে ফেলে নিজেদের একচেটিয়া লাভকে নিশ্চিত করে চামড়ার ক্রয়মূল্য বেঁধে নিয়েছিল ট্যানারি মালিক সিণ্ডিকেট। অস্বাভাবিক স্বল্পমূল্য বেঁধে দেওয়াতে চামড়া সংগ্রহকারীরা, যারা কোরবানিদাতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে চামড়া কিনেছিল কিছু লাভের আশায়, যথেষ্ট কমদরে কিনেও তারা লাভ করতে পারলো না।
চোরাপথে পাচার করে তারা যে তাদের মূলধনটুকু ফিরে পাবে, সেই পথও বন্ধ, ট্যানারি মালিকজোটের কাছে তাদের বেঁধে নেওয়া নির্ধারিত অস্বাভাবিক কম মূল্যে বিক্রি করা ছাড়া তাদের উপায় থাকলো না।
আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী দক্ষ হিসেবে সুনাম অর্জন করলো আর পূঁজিতে মার খেলো আমাদের মাঠ পর্যায়ের বিশাল সংখ্যক চামড়া সংগ্রহকারী, মৌসুমী খুদে ব্যবসায়ীরা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে পচনশীল চামড়াগুলোকে সহজ কোনো উপায়ে সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে, ট্যানারি মালিকপক্ষ এভাবে অবৈধ বাণিজ্য করতে পাতো না। ট্যানারি মালিকজোট তাদের ঘৃণ্য কৌশলের ফাঁদে ফেলে বেঁধে নেওয়া অনৈতিক স্বল্পমূলে নিজেদের গুদামে এবারের কোরবানির পশুর একটি চামড়াও ঢুকাতে পারতো না।
সাধরণ জনগণ নীরবে ট্যানারি মালিকজোটের শয়তানি আচরণ দেখলো।
ধর্মপ্রাণ কোরবানিদাতারা চামড়ার বিনিময়ে যা’ পেয়েছে, ধর্মীয় রীতিতে তা’ মিসকিন-ভিখারি-অভাবগ্রস্তদের প্রাপ্য হিসেবে পাওনাদাররা নিয়ে চলে গেছে। নইলে এমন অভাবিত সংকট থেকে কোরবানিদাতারা চামড়া সংগ্রহকারীদেরকে উদ্ধার করতে পারতেন।
সাধারণ ছোট ধরণের ভিখারিরা তাদের প্রাপ্য যা’ নিয়ে গেছে, যদি তারা উদারতা দেখিয়ে সব ফিরিয়ে দিয়ে যেতো, তাহলে সবদিক থেকেই একটা সমাধানে পৌঁছানো সহজ হতো।
এখানে ট্যানারি সিণ্ডিকেট যখন এতই করুণাপ্রার্থী মিসকিন, কোরবানির চামড়া বিক্রি করে যে মূল্যটা পাওয়া যায়, পুরোটাই মিসকীন-করুণাপ্রার্থী-অচলদের প্রাপ্য, কোরবানিদাতারা তো তার কোনো অংশ নিজেদের জন্যে রেখে দিতে পারেন না। আগেভাগেই রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করে দিলেই তো মাঝখানের বেচা-কেনার ঝামেলায় কালক্ষয় না-করে সকলেই নিশ্চিন্তে ত্যাগানন্দ উপভোগ করতে পারেন।
আগেভাগে নির্ধারণ করে নিলে রাষ্ট্রীয় পরিবহন ব্যয়ে সমস্ত চামড়া বহন করে নিয়ে গিয়ে বড় জাতের ভিখারিদের ভাণ্ডারে ঢেলে ফেলে দিয়ে আসা নিশ্চয়ই অসম্ভব নয়।
রঙ্গপুর : ২০/১১/২০১১
করণিক : আখতার ২৩৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।