তখন ভোরের কাগজের যুগ। সঞ্জীব চৌধুরী নামটি জানা হয়ে গেছে। খুব ইচ্ছা ছিলো বহুমুখী প্রতিভাবান ব্যক্তিটিকে স্বচক্ষে দেখবো। আমি তার অনেক গল্পই শুনেছিলাম। যদি সাংবাদিকতার কিছু শিখতে হয়, তবে তার হাত ধরে শেখাটাই নাকি আসল শিক্ষা হবে।
কিন্তু আমার দুভাগ্য, আমি কখনও তাকে পাইনি। কারণ, আবেগ আর স্বপ্ন থাকলেও বয়সটা আর মফস্বলের পরিস্থিতি আমাকে সে সুযোগ দেয়নি। তবে, তার খুব কাছের শিষ্যদের কাছে তার এতোসব গল্প শুনেছি যে, আমার মনে হয় আমাদের প্রজন্মটা তাকে খুব মিস করে।
১৯ নভেম্বর সঞ্জীব চৌধুরির প্রয়াণদিবস। ২০০৭ সালে তিনি পৃথিবী ছেড়ে যান।
সঞ্জীব চৌধুরীকে জানতে তার কাজগুলো আর গানের কথাগুলোর দিকে তাকালেই চলে। তিনি আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ যায়যায়দিনে কাজ করেছেন। তার একটা কথা ছিলো অসাধারণ ‘যেকোনো লেখার মধ্যে প্রাণ ঢেলে দিতে পারলেই সেটি লেখা হয়ে উঠতে বাধ্য..আর সেজন্য পড়তে হয় প্রচুর। যদি, কাউকে ধরতেন..তার অবস্থা খারাপ!শুধু একটাই মিস্টি গালি..তোরা পড়বি ঘোড়ার ডিম..আর লিখবি!!
সঞ্জীব চৌধুরিকে যতোটা না লোকে চেনে তার চেয়ে বেশি চেনে সঞ্জীব দা’ পরিচয়ে। চায়ের দোকানে বসে তার কিছু শিষ্যের কাছে সেদিন শুনছিলাম..অসামান্য একটা সৃষ্টিশীল মানুষের কথা।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো।
ডিসেম্বর ২৫, ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহন করেন তিনি। তার পরিচয় হলো, গীতিকার এবং সাংবাদিক। আর দলছুট ব্যান্ড নিয়ে তার কথা তো সবারই জানা। দারুণ কণ্ঠের সঞ্জীব দা’র সলো অ্যালবামে তাকে আলাদা করেই পাওয়া যায়।
সাদা ময়লা রঙ্গিলা পালে আউলা বাতাস খেলে
সাদা ময়লা রঙ্গিলা পালে আউলা বাতাস খেলে
আর কাদায় ভরা মনের মধ্যে জলের সন্তরণ, শুধুই জলের সন্তরণ
সদ্য ফোঁটা কুঁড়ির মধ্যে ভ্রমরে গান তোলে
সদ্য ফোঁটা কুঁড়ির মধ্যে ভ্রমরে গান তোলে
আর কামে ভরা দেহের মধ্যে জলের সন্তরণ, শুধুই জলের সন্তরণ
সাদা ময়লা রঙীলা পালে ....
হবিগঞ্জে’র ঝাঁকড়া চুলের সঞ্জীব চৌধুরীর সাংবাদিক পরিচয়ের পাশে ছিলো তার হার না মানার মানসিকতা। তিনি ছিলেন আপোষহীন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যা চোখে পড়ে সবার।
শঙ্খচীল’ ব্যান্ড দিয়ে যে গানের জগতে তিনি জড়িয়েছিলেন তার পূর্তা পেয়েছিলো বাপ্পা মজুমদারের দলছুটে এসে। সেটা ৯০’এর পর।
১৯৯৬ সালে দলছুটের প্রথম অ্যালবাম ‘আহ’ এলো। সঞ্জীবদাকে নতুন করে আবিষ্কার করা সম্ভব হলো। এরপর ‘হৃদয়পুর’। এ অ্যালবামটি পেলো আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। শাহ আবদুল করীমের ‘গাড়িচলেনা..চলেনা..চলেনা..রে..গাইলেন সঞ্জী্ব আর বাপ্পা দা’।
এরপর সলো ‘আমি তোমাদের বলে দেবো’। আমাদের সত্যিই কিছু বলে দিলেন তিনি। আকাশচুড়ির বায়োস্কোপ দেখা গেলো এরপর। ‘স্বপ্নবাজি’ আর ‘জোস্নাবিহার’ বাংলা গানের একটা অসম্ভব সুন্দর কিছু কথামালায় সাজানো আমাদের সঞ্জীবদা’র কল্পলোক।
সাংবাদিকতায় যারা সরাসরি সঞ্জীবদা’র সংস্পর্ পেয়েছেন, তারাই জানেন কতোটা প্রতিভাবান ছিলেন তিনি।
তার কাছে যারা শিখেছেন তারা আজ সবাই আজ নিজস্ব স্থান তৈরি করে নিতে পেরেছেন। কিন্তু তারা সঞ্জীবদা’র মত কতোটা তাদের পরের প্রজন্মকে শেখাচ্ছেন সেটা কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। করোরেট যুগে এসে সঞ্জীবদা’র মতো না হলেও তার শিষ্যদের কাছে অনুরোধ অন্তত পরের প্রজন্মকে সাংবাদিকতার সৃষ্টিশীল কিছু পাঠ অন্তত দিন..যাতে ভুঁইফোড় কিছু সাংবাদিক তৈরি না হয়, অন্তত ভালো কিছু লেখক তৈরি হয়..তার প্রয়াণ দিবসে এটাই চাওয়া।
কাজল ডাক নাম ছিলো তার। কাজলের মতো চোখের কোনে তার অবস্থান সেখান থেকেই তিনি চেয়ে আছেন…গান গাইছেন…স্বপ্নলোকের গান, জোস্নার গান….
যেনো…চোখের সাদার মতো আছে কালোরে ঘিরে..চাইলেই যায়না দেখা মনের মানুষটিরে।
দলছুটের গান শুনি…আর ভাবি…সঞ্জী্ব’দা কার মতো ছিলো লোকটা? উত্তরটা বড়ো দরকার। কারো কাছে উত্তর আছে কি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।