অপ্রিয় এবং অবাঞ্ছিত...
জলে দস্যু! সাগরের হাজার বছরের আতঙ্ক! কিন্তু অত্যধিক অত্যাচারে অভিশপ্ত হয়ে তারা জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে আটকে গেছে। সারা পৃথিবী তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে। এক আশ্চর্য সুধার সন্ধানে তারা সবাই। সৃষ্টিকর্তার নিয়ম অনুযায়ী এ সুধা পেতে হলে দু’পক্ষকেই এক হতে হবে।
কেউ কাউকে মারতে পারবে না। সহঅবস্থানে থাকলেই কেবল সুধার সন্ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু স্বভাব যায় না মরলে। সুধা পাওয়া গেল ঠিকই কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বেইমানি করল। জলদস্যুরাও কম যায় না।
তারাও নতুন চাল চালল। সুধার জন্য মরিয়া জলদস্যু এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। কে কাকে ধোঁকা দিয়ে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিতে পারে এ সুধা।
এমনই গল্প নিয়ে বাংলাদেশে নির্মিত ভিন্নধারার মুভি জলদস্যু রক্ত রহস্য প্রচারিত হল আরটিভিতে ঈদের তৃতীয় দিন। ছুটির দিনে সাধারণত ঘুম থেকে উঠি বেলা করে।
এই মুভিটা দেখার জন্য সেদিন আগেভাগে উঠে পড়লাম। কিন্তু মুভিটা পুরো দেখতে পারলাম না। বিজ্ঞাপণের জ্বালায় এমনিই অতিষ্ট ছিলাম। তার উপর... সেটা রিভিউএ বলছি।
প্রথমত, ক্যামেরা যেভাবে চালনা করা হয়েছে আর তাতে যে শটগুলো পাওয়া গেছে তাতে এটাকে সিনেমা মনে হয়নি।
নাটকের উপযোগী শট নেওয়া হয়েছে। অবশ্য নোমান রবিন মুলত নাটকের পরিচালক। যেখানে ক্লোজ শট নিলে ভালো হত, সেটা নেওয়া হয়েছে দূর থেকে, যার ফলে কে কী ডায়ালগ দিচ্ছে সেটা মাঝে মধ্যেই বোঝা যাচ্ছিল না।
দ্বিতীয়ত, জলদস্যুদের নৌযানটা মোটেই সেরকম জাহাজ ছিল না, ট্রলার জাতীয় ছিল। চিন্তা করেন, অইটুক একটা ট্রলার আর গুটিকয়েক জনবল নিয়ে জলদস্যুরা ব্রিটিশদের সাথে পাল্লা দিচ্ছিল!
তৃতীয়ত, গানগুলো ওই প্রেক্ষাপটে বেমানান।
এই ফিলিমে রোমান্টিক গান কেমনে আসে!
চতুর্থত, ইংরেজদের চরিত্রে বাঙ্গালীদের অভিনয়টাও খুবই বাজে লেগেছে। সাজু খাদেমকে কমেডি চরিত্রে দেখেই আমি অভ্যস্ত। তাকে ব্রিটিশদের সেনাপতি দেখতে অড লেগেছে। ডিপজল-মিশা-কাবিলা নাই। পলি-ময়ুরি নাই।
তাই হিরো অন্তুকে তো চিন্তেই পারি নাই। হিরোইনের গায়ে কয়েক ছটাক মাংস বেশি হইল মানাইত মনে হয়। জাদুকরের মাইয়া অ্যাসিস্ট্যান্টএর কোমর যেহেতু ভালো মতোই দেখানো হয়েছে, তাই তার কোমরের সাইজ আরেকটু কম হলে ভালো হত।
পঞ্চমত, অ্যাকশনগুলো, যেমন তলোয়ার যুদ্ধটা একেবারেই নিষ্প্রাণ হয়েছে।
উমম... শুনেছি গানে অশ্লীল কথা ও চিত্রায়ণের অভিযোগে সেন্সর বোর্ডে আটকে গেছিল ছবিটা।
সেন্সর বোর্ডের দৃষ্টিতে অভিযুক্ত চিত্রায়িত আইটেম গানের আপত্তিজনক গানের কথাগুলো হলো ‘আমার অঙ্গভরা জলাভূমি, সেচবি তুই আজ চুমি চুমি, তুই ছাড়া কি বন্ধু আমার নেশার ঘোর কাটে। ’ এতে পারফর্ম করেছেন আমেরিকা প্রবাসী মডেল-অভিনেত্রী সিন্ডি রোলিং (কিডা গো )।
তবে বরাবরই যেটা খারাপ লাগে, সেটা হচ্ছে একজন পরিচালক তার বিভিন্ন নাটক-সিনেমায় কয়েকটি কমন মুখ বারবার ব্যবহার করেন। যেমন হুমায়ুন আহমেদের নাটকে শাওন-চ্যালেঞ্জার, ফারুকীর নাটকে তিশা-হাসান মাসুদ-মারজুক, রাজের নাটকে মিশু-মোশাররফ করিম, তেমনি আবার নোমান রবিনের নাটক মানেই সাজু খাদেম-অন্তু। এই সিনেমাতেও ব্যাতিক্রম হল না।
যতই সমালোচনা করি না কেন, কস্টিউমগুলো হয়েছে একদম ১০০ তে ৯৯.৫। ক্যাপ্টেন জ্যাকের অভিনয়টা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে। ডায়ালগও চরম, বিশেষ করে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারটা ভালো হয়েছে।
আর টিভি বলছে এটা কোন নকল কাহিনী না। নতুন গল্প।
এটাকে তারা "পাইরেটস অফ দ্যা ক্যারিবিয়ান" সিনেমার সিক্যুয়েল (বাংলাদেশে নির্মিত) বলছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, স্বপ্ল বাজেটের মধ্যেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের চিরায়ত "আমি তোমার তুমি আমার" দশা থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সেজন্য নোমান রবিন অবশ্যই ধন্যবাদের দাবীদার।
এখন বলেন, আপনার কেমন লাগলো মুভিটা?
[এই পোস্টখানা প্রিয় ব্লগার জাহাজী পোলা কে উৎসর্গ করলাম]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।