আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলদস্যু

আমি খুবই Innocent...!!!

জলদস্যু আপেল মাহমুদ জাহান মণি, সুখবর সামান্যই প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা ছিনতাই হওয়া জাহান মণি জাহাজটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়া এটিই প্রথম বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ। ৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে ইউরোপের পথে সুয়েজ খালের দিকে যাওয়ার সময় আরব সাগরে ভারত উপকূলে জলদস্যুরা হামলা চালায়। হামলার শুরুতে নাবিকরা প্রতিহত করার চেষ্টা চালালেও প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তারা জাহাজটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদের আস্তানা গালফ অব অ্যাডেনে নিয়ে যায়। জাহান মণি ছিনতাইয়ের ৯ দিন পর জলদস্যুরা জাহাজের মালিকের কাছে ৬২ কোটি টাকা দাবি করে।

জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রেড রয়েল শিপিং কোম্পানি থেকে জানায়, জাহাজ ও নাবিকদের উদ্ধারে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন। মুক্তিপণের ব্যাপারে জলদস্যুদের সঙ্গে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে বলেও জানান তারা। কিন্তু কীভাবে টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ৪৩ হাজার মেট্রিক টন পণ্য পরিবহনে সক্ষম বিশালাকৃতির এই জাহাজটির বর্তমান বাজারমূল্য ১শ কোটি টাকার বেশি। আক্রান্ত হওয়ার সময় এটিতে ৪১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য ছিল।

২৬ নাবিক পরিবারের শঙ্কায় দিনাতিপাত ছিনতাইকৃত জাহাজটিতে বর্তমানে ২৬ বাংলাদেশি নাবিক আছেন, যার মধ্যে একজন কর্মকর্তা সপরিবারে ওই জাহাজে আছেন। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তরিকুলের স্ত্রী মাহফুজা খাতুন বলেন, ১২ ডিসেম্বর স্বামীর সঙ্গে কথা বলার সময় তরিকুল জানায়, ৩০ জলদস্যু জাহাজে আক্রমণ করেছে। একটা রুমে ২৬ জনকে আটকে রেখেছে। ভারী অস্ত্র দিয়ে সব সময় পাহারা দিচ্ছে। এখন যা খাবার আছে আগামী ৫/৭ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

এরপর ৩১ ডিসেম্বর আরো প্রায় ৯ মিনিট কথা হয়। এখন তরিকুল জানায়, খাবার ও পানি প্রায় শেষ হওয়ার পথে। জ্বালানিও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে জাহাজ থেকে নামিয়ে জলদসুরা আস্তানায় নিয়ে যাবে। একবার আস্তানায় নিয়ে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন।

কারণ এখানে এর আগে যাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাই দ্রুত মুক্তিপণ না দিলে সামনে বড় ধরনের বিপদের সম্ভাবনা আছে। তিনি আরো বলেন, এতদিন হয়ে গেল আমরা শুধু আশ্বাসের কথা শুনছি। মালিকপক্ষ বলে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কী ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে তা বলা হচ্ছে না।

পরিবারের সবাই মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। জাহাজের চিফ অফিসার আবু নাছেরের স্ত্রী জানিয়েছেন, তারা এখন প্রায় না খেয়ে আছেন। খাবার হিসাবে দুপিস রুটি দেওয়া হচ্ছে। খাবার পানিও প্রায় শেষ। প্রচ- ঠা-ায় সবাইকে বসিয়ে রাখা হয়েছে।

দ্রুত নাবিকদের উদ্ধার করা না গেলে পানি ও খাবারের অভাবে তারা মারা যাবে। জাহাজে আটক নওগাঁর মশিউর রহমানের স্ত্রী বলেন, একমাত্র মালিকপক্ষ পারেন জলদস্যুদের হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করতে। আমাদের আশ্বাস দিলেও আমরা ঠিক আশ্বস্ত হতে পারছি না। ১২ ডিসেম্বর ফোনে কথা বলার সময় আমার স্বামী কাঁদো কাঁদো গলায় কথা বলছিল। শুধু শুকনা খাবার দিয়ে কোনোভাবে তাদের বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে বললেও আল্লাহ জানেন এখন তাদের কী অবস্থা।

তিনি আরো বলেন, স্বামীর আয়ে আমাদের সংসার চলে। পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করতে হচ্ছে। জলদস্যুকবলিত বাংলাদেশি জাহাজ ‘জাহাজ মণি’তে গ্রিমার পদে দায়িত্বরত ছিল সিলেটের কিবরিয়া। সেই জাহাজটির জিম্মি ২৬ বাংলাদেশির একজন। কিবরিয়ার এ ঘটনায় তার পরিবারে যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।

অজানা শঙ্কায় পাগলপ্রায় তার মা রোকেয়া বেগম। একই অবস্থা তার স্ত্রী শারমিন আক্তারেরও। এ অবস্থায় বুক ভরা আশা নিয়ে পরিবারের প থেকে বারবার যোগযোগ করছেন জাহাজ কোম্পানির কর্তৃপরে সঙ্গে। স্ত্রী জানায়, কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কিবরিয়া। ফোনে কথা বলার সময় সোমালি জলদস্যুরা তাকে বারবার ধমক দিচ্ছে আলাপ সংপে করতে।

এছাড়া জলদস্যুরা রান্না করে তাদের খেতে দিচ্ছে। যদিও খাবারের পরিমাণ খুবই সামান্য। একটি রুমে বন্দি থাকার কষ্ট তুলে ধরে কিবরিয়া জানান, সেখান থেকে তাদের কাউকে বের হতে দেয় না। যে কারণে জাহাজটির অবস্থান ও জলদস্যুদের সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে চোখের সামনে এখন শুধু জলদস্যু।

বাথরুমে গেলেও ২/৩ জন পাহারা দেয়। কিবরিয়ার মুখে বন্দি জীবনের ভয়ার্ত বর্ণনা শোনার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অস্থির হয়ে পড়েছেন মা রোকেয়া বেগম। তিনি জানান, ৩ সন্তানকে দুঃখেকষ্টে মানুষ করেছি। কিবরিয়াই আমার বড় সন্তান। তার উপার্জনের ওপর চলছে সংসার।

এখন সোমালিয়ার উপকূলে বন্দি জীবন কাটছে আমার সন্তানের। তার প্রকৃত অবস্থা একমাত্র আল্লাহ জানেন। কিন্তু মায়ের মন। আমি তো স্থির থাকতে পারছি না। মন আমার উতলা হয়ে আছে আমার স্নেহের সন্তানকে ফিরে পেতে।

তিনি বলেন, ৫ মাস ধরে ছেলের মুখ দেখা হয়নি। নাবিকরা সাইন অন করা জাহাজে আটক নাবিকরা জাহান মণি মালিকের সঙ্গে সাইন অন করা। সাইন অন শর্ত অনুসারে যেদিন সাইন অন করবে সেদিন থেকে ওই নাবিকের সব দায়িত্ব মালিকের ওপর বর্তায়। আর যদি কেউ সাইন অন না করে তাহলে শুধু পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে জাহাজে কাজ করতে হয়। আইএলও নিয়ম অনুসারে কেউ সাইন অন করার পর নিখোঁজ হলে নাবিকের স্ত্রী বা সন্তানের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।

আর যদি কেউ মারা যায় তাহলে জাহাজ মালিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৮০ হাজার ডলার ও আইএলও ৩ লাখ ডলার দেবে। বাংলাদেশে ৮০ হাজার ডলার হলেও জাপান ৫ লাখ ডলার দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেরিন সেকেন্ড অফিসার জানান, নাবিকরা যেহেতু সাইন অন করে জাহাজে উঠেছে সেহেতু সব দায়িত্ব মালিকের। তিনি কিছুতেই দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। নাবিকদের উদ্ধারের ব্যাপারে শতভাগ দায়িত্ব জাহাজ মালিকের।

দায়িত্ব এড়াতে পারে না সরকার নাবিকরা সবাই বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। এ দেশের পাসপোর্ট নিয়ে যখনই কোনো বিপদে পড়বে কোনো নাবিক বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব সেই বিপদ থেকে তাকে উদ্ধার করাÑ বলছিলেন মেরিন সেকেন্ড অফিসার সাখাওয়াত হোসেন। তিনি আরো জানান, শুরু থেকেই সরকার বলছে তাদের কিছুই করার নেই। কিন্তু এই কথা বলে সরকার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। জাহান মণির মালিক টাকা দিচ্ছে না জাহাজ মণি মালিক তাদের জাহাজটি লন্ডনের পিঅ্যান্ডআই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে ইন্স্যুরেন্স করেছে।

চুক্তি অনুসারে মুক্তিপণের সব টাকা দেবে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটি। কয়েকটি নাবিক পরিবার থেকে জানানো হয় মালিক তো কোনো টাকা দিচ্ছে না। টাকা দেবে পিঅ্যান্ডআই কোম্পানি। তাছাড়া তারা টাকা দিতেও প্রস্তুত আছে। তাহলে মালিক এত দেরি করছে কেন সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।

আরব সাগর দস্যুদের অভয়ারণ্য জলদস্যুরা আরব সাগরকে জাহাজ ছিনতাইয়ের নিরাপদ স্থান হিসাবে ব্যবহার করছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ বা এশিয়ার দেশগুলোর বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্যে আরব সাগর ব্যবহার করে। এতে অল্প সময়ে কম খরচে যাতায়াত করা যায়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক জলসীমা যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। এখানে প্রত্যেকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আরব সাগরের আশপাশের প্রায় সব দেশ এই চ্যানেল ব্যবহার করে। আন্তর্জাতিক জলসীমানা হওয়ায় যে কোনো দেশ ব্যবসা-বাণিজ্য মাছ ধরাসহ যে কোনো কাজে এটিকে ব্যবহার করে। আর ওই সুযোগ নেয় সোমালি জলদস্যুরা। তারা মাছ ধরার আড়ালে জাহাজ ছিনতাই করছে। তিনি আরো জানান, কোনো দেশ জলদস্যুদের আক্রমণ এড়িয়ে চলতে চাইলে দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে ঘুরে যেতে হবে।

কিন্তু এতে সময় ও ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ লেগে যায়। জাহাজে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বিধান নেই। দস্যুতা ঠেকানোর একমাত্র হাতিয়ার গরম পানি জাহাজে অস্ত্র ব্যবহারের কোনো নিয়ম নেই। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগায় জলদস্যুরা। নিরস্ত্র জাহাজে হামলা করে খুব সহজেই এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) নিয়ম অনুসারে জাহাজে অস্ত্র রাখা নিষেধ। তবে জলদুস্যতা প্রতিরোধ করতে গরম পানি ব্যবহার করতে পারে। হাবিুবর রহমান নামে এক ক্যাপ্টেন জানান, জাহাজগুলোতে গরম পানি মজুদ রাখা হয়। যখন কোনো বোট বা জলদস্যুর দল জাহাজে ওঠার চেষ্টা করে তখন ওপর থেকে গরম পানি ছিটানো হয়। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় বাংলাদেশ আইএমও সদস্যভুক্ত দেশ।

সরকারের পক্ষ থেকে আইএমওর সঙ্গে বসার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে নাবিকরা নিজেদের ও জাহাজের নিরাপত্তার জন্য ভারী অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। সোমালি জলদস্যুতা, ৩ বছরে ৪শ হামলা, সফল ১০৯টি বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সোমালিয়া। সমুদ্রে বিভিন্ন দেশের জাহাজে আক্রমণ চালিয়ে সম্পদ ছিনতাই ছাড়াও নাবিকদের আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করার বিষয়টি সোমালি জলদস্যুদের নিত্যদিনের কাজ হয়ে উঠেছে। গত ১৯৯১ সালে এক গণআন্দোলনে সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সৈয়দ বারির পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটির কেন্দ্রে কোনো শক্তিশালী সরকার গঠিত হয়নি। ফলে সোমালিয়ার সার্বিক অবস্থা ক্রমেই বদলে যেতে থাকে।

নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে দেশটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এর পথ ধরেই সোমালিয়ার উপকূলে শুরু হয় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত জলদস্যুদের উপদ্রব। ঘটতে থাকে একের পর এক জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত ৩ বছরে সোমালি জলদস্যুরা সমুদ্রে প্রায় ৪শটি হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ১০৯টি ছিল সফল। বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করা হয় সমুদ্রপথে।

আর এভাবে সমুদ্রে জলদস্যুদের উত্তাপ বেড়ে যাওয়ায় এসব খাদ্য পরিবহনের খরচের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছুটা বাড়তি খরচও। নিরাপদে জাহাজ পাঠাতে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে নৌবাহিনীর সার্বণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সোমালিয়ার জলদস্যুদের ছিনতাই করা কয়েকটি বড় জাহাজের মধ্যে অন্যতম, ‘মাস্ক আলাবামা’। ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল সোমালিয়ার পোর্ট সিটি ‘এইল’ থেকে ১৭ হাজার মেট্রিক টন কার্গোসহ মার্কিন এ জাহাজটি ছিনতাই করে সোমালি জলদস্যুরা। শুধু জাহাজ কব্জা করেই শান্ত থাকেনি, জলদস্যুরা আটক করেছিল জাহাজটির নাবিকদেরও।

নাবিকদের জিম্মি করার পেছনে শুধু মুক্তিপণই কাজ করে না, কখনো কখনো জলদস্যুতার অপরাধের দায়ে আটক হওয়া সঙ্গীদের ছেড়ে দেওয়ার শর্তও জুড়ে দেয় তারা। জলদস্যুতার তিন বছরের খতিয়ান ২০১০ সালে দস্যুতা জানুয়ারি : ২০১০ সালের প্রথম দিনেই সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়ার পতাকাবাহী এমভি প্রামনি নামে একটি জাহাজ ভারতের জলসীমা থেকে সোমালি জলদস্যুরা ছিনতাই করে। জাহাজটিতে ২৪ নাবিক ছিল, যার ১৭ জন ইন্দোনেশিয়ার। বাকিদের মধ্যে পাঁচজন চীনা, একজন নাইজেরিয়া ও একজন ভিয়েতনামের নাবিক। ইন্দোনেশিয়ার মালিকানাধীন জাহাজটিতে ২০ হাজার টন রাসায়নিক পদার্থ ছিল।

জাহাজটি আজো ছাড়ানো সম্ভব হয়নি। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় দিনে ইংল্যান্ডের পতাকাবাহী এমভি এশিয়ান গ্লোরি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। ১৩ হাজার টনের রাসায়নিক পদার্থবাহী জাহাজটি সিঙ্গাপুর থেকে সৌদি আরবের জেদ্দা যাওয়ার পথে ছিনতাই হয়। এতে বিভিন্ন দেশের মোট ২৬ জন নাবিক ছিল। পরবর্তী সময়ে জুন মাসের ১১ তারিখে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয় ভারত সাগরে ছিনতাইয়ের কবলে পড়া জাহাজটি।

১৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ দাবি করলেও কততে মীমাংসা হয়েছে তা জানায়নি মালিকপক্ষ। ২০১০ সালে জানুয়ারিতে সর্বশেষ সোমালি জলদস্যুদের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে এমভি ফাইলা এস নামে কম্বোডিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ। ২৭ তারিখে বারবারা বন্দর থেকে ছিনতাই হওয়া জাহাজটিতে ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান, পাকিস্তানি ও সিরিয়ার নাবিক ছিল বলে জানা যায়। প্রায় এক বছর পার হলেও জাহাজ ও নাবিকদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা যায়নি। ফেব্রুয়ারি : ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় দিনে লাইবেরিয়ার মালিকানাধীন দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাবাহী রিম জাহাজটি সোমালি জলদস্যুরা ছিনতাই করে।

ছিনতাইয়ের ৪ মাস ভেতরে অবস্থানরত ১৭ নাবিক পুনরায় জাহাজটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করে। স্লোভেনিয়ার মালিকানাধীন এরিয়ালা জাহাজটি ৫ ফেব্রুয়ারি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ঘটনার দিন জাহাজ থেকে সঙ্কেত পাঠালে ন্যাটো ও ডেনিস যৌথ বাহিনী অক্ষত অবস্থায় ২৫ নাবিকসহ জাহাজটি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করলেও জলদস্যুরা পালিয়ে যায়। ২৩ ফেব্রুয়ারি জলদস্যুরা তানজানিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। কিন্তু আমেরিকান নেভির একটি ফ্রিগেট তাদের সেই চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়।

মার্চ : মার্চ মাসে মোট ছয়টি জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ৩ মার্চ সৌদি আরবের তেলবাহী আলী নাসের আল সৌদি নামক জাহাজ জাপান থেকে জেদ্দা যাওয়ার পথে ছিনতাই হয়। জাহাজটিতে ১৩ জন শ্রীলঙ্কান ও একজন গ্রিক নাবিক ছিল। পরবর্তী সময়ে ৭ ডিসেম্বর মুক্তিপণের মাধ্যমে জাহাজটি মুক্ত করা হয়। ৫ মার্চ ইউবিটি ওসান নামক নরওয়ের জাহাজটিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তানজানিয়ায় তেল নিয়ে যাওয়ার পথে জলদস্যুরা ছিনতাই করে।

এ জাহাজের অধিকাংশ নাবিক ছিল মিয়ানমারের নাগরিক। ২০ জুলাই মুক্তিপণের মাধ্যমে জাহাজটি মুক্তি পায়। ১৭ মার্চ নেদারল্যান্ডসের এইচএনএসএমএস (এফ ৮০৩) নামক জাহাজ জলদস্যুরা অপহরণের চেষ্টা করে। এ সময় তারা রকেটলঞ্চার, একে-৪৭সহ ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা করলে পাল্টা হামলা করা হয়। এতে মোট ১৩ জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়।

৩০ মার্চ ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে তাইওয়ানের এফভি জিন চাংতুসা নামক জাহাজটি। জাহাজটিতে ১৪ জন নাবিক ছিল, যাদের মধ্যে ১১ জন ইন্দোনেশীয়, ২ জন চীনা ও ১ জন তাইওয়ানের নাগরিক। জাহাজটি আজো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আল মিজান নামে পানামার কার্গো জাহাজটি ২৩ মার্চ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এ সময় দায়িত্বরত আর্মড ফোর্স জলদস্যুদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করলে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।

এতে একজন জলদস্যু মারা যায় এবং ছয়জন গ্রেফতার হয়। ২৯ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের মালিকানাধীন পানামার পতাকাবাহী আইসবার্গ জাহাজটি জলদস্যুরা ছিনতাই করে। দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হওয়া জাহাজটিতে ২৪ জন নাবিক ছিল। জাহাজটি আজো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এপ্রিল : এপ্রিল মাসে ৬টি জাহাজ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

আমেরিকার পতাকাবাহী ইউএসএস নিকোলাস জাহাজটি দখল করতে এলে ইউএস নেভি পাল্টা হামলা করলে জলদস্যুদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। এতে জলদস্যুদের নৌকা ডুবে যায় এবং পাঁচজন গ্রেফতার হয়। সিঙ্গাপুরের মালিকানাধীন উত্তর কোরিয়ার পতাকাবাহী সামহো ড্রিম ২৪ জন নাবিক নিয়ে ৪ এপ্রিল জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এরপর জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ৯.৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ চায়। পরে ৯ মিলিয়নে তারা সম্মতি দেয় এবং ৬ নভেম্বর জাহাজটি মুক্ত হয়।

৫ এপ্রিল জার্মানির এমভি তাইপান নামক কনটেইনার জাহাজটি জলদস্যুরা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ১৩ নাবিকসহ আক্রান্ত জাহাজের পক্ষ থেকে ডাচ ফ্রিগেটের কাছে সাহায্য চাইলে তারা জলদস্যুদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। এতে ১০ জলদস্যু গ্রেফতার হয়। এপ্রিল মাসে দ্বিতীয়বার আমেরিকার আরো একটি জাহাজে জলদস্যুরা আক্রমণ করে। এ সময় ইউএস নেভি গুলি চালালে তাদের নৌকা ডুবে যায়।

এতে ৫ জলদস্যু গ্রেফতার হয়। ২৩ নাবিকসহ ১১ এপ্রিল সেন্ট ভিনসেন্টের পতাকাবাহী জাহাজটি জলদস্যুরা ছিনতাই করে। র‌্যাক আফ্রিকানা নামক কার্গো জাহাজটি আজো মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। মে : মে মাসে ৫টি জাহাজে সোমালি জলদস্যুরা আক্রমণ করে। ৫ মে রাশিয়ার মালিকানাধীন লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী মস্কো ইউনিভার্সিটি নামক জাহাজটিতে জলদস্যুরা আক্রমণ করে।

এ সময় রাশিয়া যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি উদ্ধার করে। এতে একজন ছিনতাইকারী মারা পড়ে এবং ১১ জন গ্রেফতার হয়। জাপানের মালিকানাধীন মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজটি আক্রান্ত হয় ৩ থেকে ৯ মের মধ্যে। ন্যাটো ফোর্সের হস্তক্ষেপে ছিনতাইকারীদের হাত থেকে জাহাজটি রক্ষা পায় এবং সব জলদস্যু গ্রেফতার হয়। তাইওয়ানে মাছ ধরার নৌকাও জলদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা পায়নি।

৬ মে জলদস্যুরা তাই ইয়ান নামক একটি নৌকায় হামলা করে। এতে ৯ জন চীনা, ৭ কেনিয়ান, ৩ ভিয়েতনামি, ৩ ফিলিপিনো এবং ২ জন মোজাব্বিকের নাবিক ছিল। ৫০ মিটার লম্বা এ নৌকাটি আজো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মে মাসে জার্মানির মালিকানাধীন একটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়ে। আমেরিকার পতাকাবাহী জাহাজটি রাসায়নিক পদার্থ পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হতো।

ছিনতাই হওয়া জাহাজটিতে ১৯ ভারতীয়, দুই বাংলাদেশি ও ১ জন ইউক্রেনের নাবিক ছিল। জলদস্যুদের সঙ্গে ৫৫ লাখ ডলারে মীমাংসা হলে ২৮ ডিসেম্বর জাহাজটি মুক্তি পায়। বর্জ্যবহনের কাজে নিয়োজিত গ্রিসের মালিকানাধীন সাইবেরিয়ার পতাকাবাহী এলিনিপি নামক জাহাজটি ৬ মে আক্রান্ত হয়। ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি তারা ওমানের বন্দর থেকে ছিনতাই করে। ৭ মাস জলদস্যুদের কবলে থাকার পর ১১ ডিসেম্বর জাহাজটি মুক্তি পায়।

জুন : জুন মাসে দুটি জাহাজে জলদস্যুরা আক্রমণ করে। এর মধ্যে একটি পানামার পতাকাবাহী কিউএসএম দুবাই কার্গো; অন্যটি চীনের মালিকানাধীন সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী গোল্ডেন ব্লেজিং রাসায়নিক পদার্থ পরিবহনের জাহাজ। পানামার জাহাজটি সোমালিয়া সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপে উদ্ধার করা হলেও জাহাজের একজন ক্যাপ্টেনকে মৃত অবস্থায় এবং বাকি ২৩ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ সময় ৭ জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য জাহাজটি ২৮ জুন ছিনতাই হলেও এর চার মাস পর উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

তবে এর জন্য মালিককে গুনতে হয়েছে ২.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জুলাই : জুলাই মাসে একটি জাহাজ ছিনতাই হয়। ১৮ জন নাবিকসহ লুব্রিকেটিং তেল পরিবহনে ব্যবহৃত এমটি মটিভেটর জাহাজটি গ্রিসের মালিকানাধীন এবং মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী। ৪ জুলাই লোহিত সাগর থেকে ছিনতাই হওয়া ওই জাহাজের মুক্তির ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয়নি। আগস্ট : আগস্টে দুটি জাহাজে জলদস্যুরা আক্রমণ করে।

দুটি জাহাজের একটি মুক্তি পেলেও অন্যটি এখনো মুক্তি পায়নি। মিসরের মালিকানাধীন সুয়েজ নামক জাহাজটি পানামার পতাকা বহন অবস্থায় ২ আগস্ট আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত জাহাজটিতে মোট ২৩ জন নাবিক ছিল। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা সম্ভব হয়নি। ৬ আগস্ট ২৪ নাবিকসহ আক্রান্ত হয় সিরিয়ার মালিকানাধীন সেন্ট ভিনসেন্ট পতাকাবাহী সিরিয়ান স্টার জাহাজটি।

একদিন পর জাহাজটি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হলেও দুজন নাবিককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সেপ্টেম্বর : ৮ সেপ্টেম্বর ৯ জলদস্যু জার্মানির মালিকানাধীন এন্টিগুয়ার পতাকাবাহী জাহাজটি আক্রমণ করে। ১১ জন নাবিকসহ কনটেইনারবাহী ম্যাগলান স্টার জাহাজটি একদিন পর উদ্ধার করা হয়। নাবিকরা নিজেদের একটি নিরাপদ কক্ষে আশ্রয় নিয়ে আমেরিকা ফোর্সকে খবর দেয়। অতঃপর তারা ৯ জনকে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া গ্রেফতার করে জাহাজটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এই মাসে একই দিনে দ্বিতীয় ছিনতাইটি হয় গ্রিসের মালিকানাধীন মাল্টা পতাকাবাহী জাহাজটি। ১৮ জন নাবিকসহ এমটি অলিভ জি জাহাজটি মুক্তিপণের জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করা হলেও এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ২৮ তারিখে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মালিকানাধীন পানামার পতাকাবাহী জাহাজটিতে মোট ১৫ জন ভারতীয় নাবিক ছিল। ভারত মহাসাগরে ছিনতাই হওয়া জাহাজটি আজো মুক্ত হয়নি।

অক্টোবর : অক্টোবরে ৫টি জাহাজ ছিনতাই হয়, যার মধ্যে দুটি জার্মানির এবং বাকি ৩টি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও লাইবেরিয়ার মালিকানাধীন। জার্মানির জাহাজ দুটির মধ্যে বেলুগা ফরচুন নাবিকের বুদ্ধিমত্তার কারণে ও ব্রিটিশ ফ্রিগেটের সহযোগিতায় একদিন পর জলদস্যুর কবল থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু অন্য জাহাজটি ২৩ অক্টোবর কেনিয়ার উপকূল থেকে ১৫০ মাইল দূরে থেকে ১৭ নাবিকসহ অপহরণ হলেও আজো জাহাজটি উদ্ধার হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার গোল্ডেন ওয়েভ জাহাজটি ৪৩ নাবিকসহ ৯ অক্টোবর এবং জাপানের জুমি কার্গো জাহাজটি ১০ অক্টোবর ২০ ফিলিপিনো নাবিকসহ জলদস্যুরা ছিনতাই করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই জাহাজটির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

৩০ অক্টোবর লাইবেরিয়ার পোলার জাহাজটি ২৪ জন নাবিকসহ ছিনতাই হয়। ভারত মহাসাগর থেকে ছিনতাই হওয়া জাহাজটির সঙ্গে নভেম্বরে যোগাযোগ সম্ভব হলে এখন পর্যন্ত এটি মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। নভেম্বর : নভেম্বরে মোট ৪টি জাহাজ সোমালি জলদস্যুরা আটক করে নিয়ে যায়। এগুলোর মধ্যে ৭ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার ২ নাবিকসহ চোজিল, ১২ তারিখে ৩১ নাবিকসহ পানামার হ্যানিবাল, ১৪ তারিখে ২৯ নাবিকসহ চীনের ইয়ান জিয়ান কার্গো এবং ২৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ার আলবিদো জাহাজ রয়েছে। জানা যায়, আলবিদো জাহাজের ২৩ নাবিকের মধ্যে বাংলাদেশিও রয়েছে।

ডিসেম্বর : ডিসেম্বরে বাংলাদেশের জাহান মণি ছাড়াও আরো ৫টি জাহাজ জলদস্যুরা ছিনতাই করেছে। এগুলোর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর আমেরিকার মালিকানাধীন পানামা, ১১ ডিসেম্বর লাইবেরিয়ার মালিকানাধীন রিনিয়ার, ২০ ডিসেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওমা, ২৬ তারিখে থাইল্যান্ডের থোর নেক্সাস ও জার্মানির মালিকানাধীন ইমস রিভার রয়েছে। ছয়টি জাহাজের একটিও এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ২০০৯ ও ২০০৮ সালের জলদস্যুতা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ৯টি জাহাজে সোমালিরা আক্রমণ করে। এর মধ্যে ৩টি আক্রমণ ব্যর্থ হয়।

বাকি ৬টির মধ্যে ২টি মুক্তিপণে ছাড়া পায় এবং বাকিগুলো এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে ১টি জাহাজ অপহরণ হলে ২ মাস পর মুক্তিপণে ছাড়া পায়। মার্চ মাসে ১২টি জাহাজে আক্রমণ হয়, এর মধ্যে ৬টি আক্রমণ ব্যর্থ হয়। বাকি ৬টির মধ্যে ৩টি মুক্তিপণে ছাড়া পেলেও অবশিষ্ট ৩টি এখনো তাদের দখলে আছে। এপ্রিল মাসে ২২টি জাহাজে জলদস্যুরা হামলা চালায়।

এর মধ্যে ১৪টি হামলা প্রতিহত করা হয়। ৭টি জাহাজ মুক্তিপণে ছাড়া পায়। বাকি একটি এখনো উদ্ধার করা যায়নি। ৪টি জাহাজে মে মাসে আক্রমণ হলেও ২টি ব্যর্থ এবং ২টি বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে ছাড়া পায়। জুন ও সেপ্টেম্বরে ৩টি জাহাজে হামলা হলেও ৩টিকেই উদ্ধার করা হয়।

তবে এর মধ্যে একটি সোমালি জাহাজও রয়েছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০টি জাহাজে হামলা হলেও এর মধ্যে ৩টি হামলা ব্যর্থ হয়। ৮টি জাহাজ মুক্তিপণের মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনা হলেও বাকিগুলো এখনো সোমালি জলদস্যুদের দখলে রয়েছে। ২০০৮ সালে ৫১টি জাহাজে আক্রমণ চালায় জলদস্যুরা। এর মধ্যে ২টি ফ্রান্সের, ২টি চীনের, জাপানের ৪টি, ডেনমার্কের ৩টি, ভারতের ১টি, পানামার ২টি, দক্ষিণ কোরিয়ার ২টি, গ্রিসের ৩টি, জার্মানির ২টি, তুরস্কের ৩টি, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইরান, সৌদি আরব, আরব আমিরাতের ২টি করে এবং ইউক্রেন, ইজিপ্ট, ইথিওপিয়া, সাইপ্রাস, আমেরিকা, জার্মানি, ইয়েমেন, মার্শাল আইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও নাইজেরিয়ার ১টি করে জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

জলদস্যুতায় অত্যাধুনিক অস্ত্র সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হলে এই উপকূলীয় অঞ্চল অরতি হয়ে পড়ে, বেড়ে যায় বেআইনি জাহাজের আনাগোনা। ফলে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। চলতে থাকে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের ওপর বেআইনি ট্রলার থেকে ফুটন্ত জল ছুড়ে দেওয়া, ছোট নৌকাকে ডুবিয়ে দেওয়া, মাছধরার জাল কেটে দেওয়ার মতো ঘটনা। পরের দিকে আত্মরার জন্য স্থানীয় মৎস্যজীবীরা অস্ত্র রাখতে শুরু করলে বেআইনি জাহাজগুলোও অস্ত্র নিয়ে মাছ লুট শুরু করে। বর্তমানের সব ধরনের অত্যাধুনিক অস্ত্রই আছে এসব দস্যুদলের কাছে।

এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই ইয়েমেন থেকে সংগ্রহ করা। তবে কিছু আবার দেশটির রাজধানী মোগাদিসু থেকেও পেয়ে থাকে। অস্ত্র কিনতে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠালে হাতে চলে আসে অস্ত্র। তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের মধ্যে আছে ৭.৬২ রাশিয়ান রাইফেল, রকেট লঞ্চার ও অটোমেটিক পিস্তল। এছাড়া আর জি ডি-৭ মডেলের হ্যান্ড গ্রেনেডও তারা ব্যবহার করে।

সোমালিয়ার মাফিয়ারাও পিছিয়ে নেই এই দৌড়ে। কিছু ইউরোপিয়ান কোম্পানির সঙ্গে আঁতাত করে জাল লাইসেন্স বানিয়ে লুটের অংশীদার এরাও। ল্য করার মতো বিষয় হলো, ইংল্যান্ডের নামি ফার্ম ম্যাকঅ্যালিস্টার এলিয়ট অ্যান্ড পার্টনার্সের মতো সংস্থাও মাফিয়াদের টেকনিক্যাল উপদেষ্টা। সোমালিয়ায় পাইরেটস নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আমেরিকানরা সোমালিয়ার জলদস্যুতা নিয়ন্ত্রণ হয় দেশের বাইরে থেকে। আর আমেরিকার অ্যান্টি টেররিজম কর্মকা- মূলত এ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রিত হয় জিবুতি থেকে।

সামরিক মহড়া এবং অভিযানগুলোও জিবুতি থেকে পরিচালিত হয়। ইউএস নেভি এডন উপসাগরের এবং লোহিত সাগরে অ্যান্টিপাইরেসি মুভমেন্ট শুরু করে। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত এক কর্নেল বলেন, ওরা এসেছে পাইরেসিকে সহায়তা করতে। কারণ ওদের উপস্থিতির পর পাইরেসির হার বেড়ে গেছে। ইউএস আর্মি সোমালিয়া সরকারকে চাপ দিয়ে কোস্টাল শহর বসাসোতে অ্যান্টিপাইরেসি ক্যাপাসিটি বিল্ডিং সেন্টার নামে ঘাঁটি স্থাপন করছে।

সোমালিয়ায় প্রচুর আমেরিকান সন্দেহজনকভাবে বিশাল নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এরা কী করে তা কাউকে বলে না। মূলত জলদস্যু দলের লোকেরা এদের প্রোটেকশন দেয়। এরা আর্মার্ড গাড়িতে ঘোরে আর সঙ্গে থাকে কমপে ২০ জনের বাহিনী, যারা সরাসরি বা পরোভাবে পাইরেসির সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় মানুষের ধারণা অবশ্য এই যে, এরা সোমালিয়ার খনিজসম্পদ লুটপাটের ধান্ধায় আছে।

সোমালিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনা হচ্ছে জলদস্যুদের সঙ্গে আল-শাবাব গেরিলাদের ঐক্য। আবার পুন্টল্যান্ড সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা পিআইএস আমেরিকার অর্থায়নে চলছে। সব মিলিয়ে অবস্থা এমনই জটিল যে, সিদ্ধান্তে আসা খুবই দুরূহ আমেরিকা কার কার সঙ্গে আছে আর কার কার সঙ্গে নেই। ইউএস নেভি আমেরিকান জাহাজের প্রতিই শুধু সহায় হচ্ছে পাইরেসি রোধে। সব দেশের জন্য অ্যান্টিপাইরেসি সহায়তা প্রদান করছে না।

তাছাড়া আমেরিকা তো বলেই দিয়েছে আমাদের জন্য টাকা দিয়ে দেওয়াই উত্তম, তাও যত দ্রুত নেগোসিয়েশন করে হয় তত দ্রুত। শক্তি প্রয়োগ করেও সুফল মিলছে না রাশিয়া জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে সোমালিয়ার তীরে গ্রেফতারকৃত জলদস্যুদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। যার ল ছিল যারা জলসীমানায় ডাকাতি করবে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের বিচার করা। রাশিয়াসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই আইনি বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে জলদস্যু সমস্যা সমাধানের জন্য। তা স্বীকার করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি আন্দ্রে নিস্তারেনকো গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান সময়ে গ্রেফতারকৃত জলদস্যুদের জাতীয় আইনের মাধ্যমে বিচার করা হবে।

এ ল্েয বিশেষ আন্তর্জাতিক আদালত এখনো গঠন করা হয়নি। এ বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের উদ্যোগে একটি প্রস্তাব আমাদের অংশীদারদের দেওয়া হয়েছে বিশেষ আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের মাধ্যমে জলদস্যুদের বিচারের সম্মুখীন করতে পর্যালোচনা করার জন্য। আর এর মাধ্যমে বিশ্বে স্ট্যান্ডার্ডস ও ইউনিভারস আদালত গঠনের প্রক্রিয়া কাজ করতে পারবে যাতে করে জলদস্যুতা প্রতিরোধ করা যায়। রাশিয়ার প্রস্তাব বহু রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সমর্থন জানিয়েছে। একই সঙ্গে জলদস্যু দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে এ অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পাবে।

এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন যে, এই বিশেষ আন্তর্জাতিক আদালত গঠনে বিশাল আর্থিক ব্যয় হবে এবং এটি বাস্তবায়নে অত্যন্ত দীর্ঘ সময় লাগবে। তবে দেখা গেছে, শুধু শক্তি প্রয়োগ করে জলে ডাকাতি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, জলদস্যু দমনে প্যাকেজ পদেেপর প্রয়োজন। ২০০৯ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর জলদস্যুদের সোমালি নৌ সীমানায় ধাওয়া এবং জলদস্যুদের জাহাজগুলোকে ডুবিয়ে দেওয়ার আইন পাস করা হয়। তবে এখানে যুক্ত রাখা হয় সোমালিয়ার শান্তি প্রক্রিয়া এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সামরিক শক্তির সমর্থন, বিশ্ব শান্তিরী বাহিনী ও সোমালিয়ান নিরাপত্তা বাহিনীকে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এর আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আফ্রিকা ইউনিয়নের কনটিনজেন্ট বৃদ্ধি করার জন্য। কিন্তু আফ্রিকার ৬০টি দেশের মধ্যে ৪টি দেশ জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে সোমালিয়ায় শান্তিরী বাহিনী পাঠাতে সম্মত হয়। জাতিসংঘের তথ্যমতে, সোমালিয়ার জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে ১৬টি জাহাজ ও প্রায় ২৭০ জন নাবিক রয়েছেন। জলদস্যু দমনে অ্যাডেন উপসাগরে ১৬টি দেশের নৌবাহিনী যৌথভাবে টহল দিচ্ছে। এ অঞ্চলে রাশিয়া নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়েছে মূলত টহলের মাধ্যমে জলদস্যু দমন ও নিজেদের জাহাজকে নিরাপত্তা দিতে।

যখন শিপিং কোম্পানিগুলো ভাবতে শুরু করেছিল যে, পূর্ব আফ্রিকার উপকূল অপোকৃত নিরাপদ হয় উঠেছে, ঠিক তখনই সক্রিয় হয়ে উঠেছে জলদস্যুরা। পশ্চিমা এবং আরো কিছু শক্তিশালী দেশের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি সত্ত্বেও সোমালি জলদস্যুরা ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দখল করে নিয়েছিল দুটো কেমিক্যাল ট্যাংকার। এ আক্রমণগুলোও হয়েছে সোমালি উপকূল থেকে ৩৮০ থেকে ৪৯০ মাইল দূরে। এ থেকে পরিষ্কার, জলদস্যুরা তাদের ঘাঁটি থেকে বহুদূরেও তাদের কার্যক্রম চালাতে সম। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর টহলদারির কারণে যে সাফল্য জমা হয়েছিল সাম্প্রতিক ঘটনায় তা ম্লান হয়ে যাওয়ার পথে।

এখন পর্যন্ত বিদেশি নৌবাহিনীর সাফল্য হাতেগোনা। গত বছর জলদস্যুরা দখল করে নিয়েছিল ৩০ ক্রুসহ ফ্রেঞ্চ ইয়ট লা পোনান্ট । ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি জিবুতি ভিত্তিক ফরাসি কমান্ডোদের অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দেন। দু মিলিয়ন মুক্তিপণ দেওয়া হলে জলদস্যুরা ইয়টকে মুক্ত করে দেয়। তবে এদের একটা গ্রুপ মরুভূমি দিয়ে জিপে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ফরাসি সামরিক হেলিকপ্টার সেটাকে আক্রমণ করে এবং জলদস্যুদের আটক করে ফ্রান্সে পাঠায় বিচারের জন্য।

নভেম্বরে গালফ অব অ্যাডেনে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয় জলদস্যুদের একটি মাদারশিপকে। তবে আফ্রিকার উপকূলের দেশগুলোর সরকার এখনো এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সম হয়নি। এখানকার কোনো দেশেরই নৌবাহিনী সমৃদ্ধ নয়। তাঞ্জানিয়ার নৌ প্রধানের ভাষ্য অনুযায়ী তার দেশের যুদ্ধজাহাজ বড় জোর সমুদ্রে বিশ মাইল গভীরে যেতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ম্যারিটাইম ব্যুরো জানায়, বিশটারও বেশি দেশের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি সত্ত্বেও গালফ অব অ্যাডেনে গত তিন মাসে আক্রমণের সংখ্যা হচ্ছে ৫১।

ইন্টারন্যাশনাল শিপিং অ্যাসোসিয়েশন বিমকো বলছে যে, এ আক্রমণ এখন আর শুধু গালফ অব অ্যাডেনেই সীমাবদ্ধ নেই। ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এখন জলদস্যুতা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এর ম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.