আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপের পাখি

আমি নতুন কিছু লিখবো বুকে বাদামি রঙ। ডানায় নীল, ঠোঁটে হালকা হলুদ, লেজে গাঢ় নীল। কী রঙ নেই তার! ২৫ থেকে ৩১ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এ ছোট্ট পাখিটির ঠোঁট লম্বা। ঠোঁটের পাশেই আবার শক্ত কাঠির মতো আছে উজ্জ্বল নীল রঙের ছোপ। প্রকৃতির সব রঙই যেন মিশে আছে নীলকণ্ঠের শরীরে।

সারাবিশ্বে নীলকণ্ঠের আটটি প্রজাতি আছে। তবে বাংলাদেশে একটি প্রজাতির দেখাই মেলে। নীল ডানার এ পাখিটি বসে থাকলে এক রঙ আর উড়তে থাকলে দেখা যায় আরেক রঙ। বসে থাকা অবস্থায় এর পিঠে দেখা যায় লালচে বাদামি রঙ। আর উড়তে গেলে পর্যায়ক্রমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ফিকে নীল থেকে কালচে নীল।

আবার ওড়ার সময় ঘাড়ের পেছনের ভাগ, গলা ও বুকে দৃশ্যমান হয় কালচে বাদামি। পাখিটির ডানার গোড়ার পালকে আছে বাদামি-জলপাই-সবুজ রঙের মিশেল। আর পায়ে আছে হলদে-বাদামি রঙ। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত বলেন, আকারে ছোট হলেও নীলকণ্ঠের মতো রঙিন পাখি কমই আছে প্রকৃতিতে। তবে ছোট্ট এ পাখিটি তার সন্তানদের বড় করে তোলে পরম মমতায়।

বছরে তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে নীলকণ্ঠ। আড়াই থেকে সাড়ে তিন সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের এসব ডিমের রঙ সাদা। ছোট নীলকণ্ঠের গায়ে পালক উঠতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ দিন। এ সময় তাদের দিনরাত পালাক্রমে পাহারা দেয় পুরুষ ও স্ত্রী নীলকণ্ঠ। প্রজননের এ বিশেষ সময়ে পুরুষ ও স্ত্রী নীলকণ্ঠ একজন আরেকজনের আহার সংগ্রহ করে।

পোকামাকড়, টিকটিকি, ব্যাঙ ও ছোট সাপ খেয়ে বেঁচে থাকে এরা। কখনও বাতাসে ভেসে থাকা পতঙ্গ ছোঁ মেরে খায়। আবার কখনও জলাশয়ের ছোট ছোট মাছ ছোঁ দিয়ে তুলে নিয়ে উড়াল দেয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বার্ড ক্লাবের সমন্বয়ক তারেক কবির জানান, এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে প্রজননের প্রস্তুতি নেয় নীলকণ্ঠ। এ সময় পুরুষ ও স্ত্রী নীলকণ্ঠ সমবেতভাবে ওড়ার মহড়া দেয়।

আর তীক্ষষ্ট সুরে মুখে আওয়াজ করে ক্রাক ... ক্রাক ... ক্রাক। ডিম পাড়ার জন্য পছন্দের জায়গাও ঠিক করে স্বামী-স্ত্রী দু'জনে। ডিম রাখতে প্রথমে তাল, খেজুর কিংবা নারকেল গাছের কোটর খোঁজে তারা। সেটি পাওয়া না গেলে দালানকোঠার ফাঁকফোকরে খড়কুটো দিয়ে বাসা বাঁধে নীলকণ্ঠ। পারস্য উপসাগর থেকে এ উপমহাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত নীলকণ্ঠের বিচরণ।

এক সময় বাংলার আনাচে-কানাচে অবাধে দেখা মিলত নীলকণ্ঠের। ঝোপঝাড় কমে যাওয়ায় বাগেরহাট এলাকায় সীমিত হয়ে পড়েছে এ পাখির বিচরণভূমি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।