“ কার মাথা থেকে বেরিয়েছিল
জানিনা, তবে আমাদের বেশ
মনে ধরেছিল । পুরোনো পপলার গাছের
দলটা জুটলেই নির্ঘাত কেউ না কেউ
বলে উঠতো:
‘আয় রূপের ডালি খেলি!’
সবাই দাড়াতাম গোল হয়ে,
ছড়া বলে গুনে যেতাম
কে মাঝখানে দাঁড়াবে:
এনা, বেনা,রেস....’
কোন এক দুর্বোধ্য ভাষার এই
কথা গুলো ছিল ঠোঁটস্থ:
কুইন্তের কন্তের জেস!’
কেন জানি সাত নম্বর ফ্লাটের
নিনকাকে মাঝখানে দাড়
করাতে ভালবাসতাম, চেষ্টা করতাম
যাতে ছড়াটা গিয়ে ওর কাছে গিয়ে শেষ
হয়। চোখ নামিয়ে সে তার ফ্রকে হাত
বোলাতো! আগে থেকেই তার জানা থাকত
যে তাকেই
মাঝখানে গিয়ে দাড়াতে হবে রূপসী হয়ে!
কিন্তু নিনকা কি রূপসী ছিল ?
“ এখন আমরা বুঝি যে সাত নম্বর
ফ্লাটের নিনকা ছিল অসাধারন অসুন্দর:
চওড়া খাদা নাক ছিল তার,
মোটা মোটা ঠোঁট, তার চারপাশে আর
কপালে রুটির গুড়োর মত ছুলি। বিবর্ণ
চোখ। সোজা অঘন চুল।
হাঁটতো পা ঘষে ঘষে,
পেটটা সামনে এগিয়ে দিয়ে। কিন্ত এসব
আমাদের চোখে পড়তোনা। যে ন্যায়পর
অজ্ঞতায় আমরা তখন ছিলাম
তাতে ভালো মানুষ
কে ধরা হতো সুন্দর,খারাপ কে অসুন্দর!
আর সাত নম্বর ফ্লাটের নিনকা ছিল
গুনি মেয়ে, তাকেই
আমরা সুন্দরী করতাম!”
দেখুন তো ছেলে বেলাতেই
আসলে আমাদের বোধবুদ্ধি কেমন ঠিক
থাকে!
“ মাঝখানে ও দাড়ালেই খেলার নিয়ম
অনুসারে আমাদের ‘মুগ্ধ হতে’ হতো-
প্রত্যকেই আমরা প্রশংসা করতাম
বইয়ে পড়া কোন না কোন কথা দিয়ে। কেউ
বলতো:
‘কী সুন্দর গলা , রাজহাঁসের মতো’
‘রাজহাঁসের মত নয়, মরাল গ্রীবা,’
সংশোধন করে দিয়ে আরেকজন খেই
টানতো,
কী সুন্দর প্রবালের মত ঠোঁট....’
‘কী সুন্দর সোনালী চাঁচর। ‘
চোখ ওর ইয়ে... ইয়ে...
কেবলি তুই ভুলে যাস! সাগরের মত নীল।
জ্বল জ্বল করে উঠত নিনকা।
ফ্যাকাশে মুখে গাঢ় লাল ছোপ।
পেটটা গুটিয়ে নিয়ে সে লীলাময়ীর মত
একটা পা এগিয়ে দিত! আমাদের
কথা গুলো হয়ে উঠতো আয়না,
নিনকা তাতে নিজেকে দেখতো সত্যিকারের
রূপসী।
আমাদের ও মনে হতে থাকতো সবকিছুই ওর
মরাল, প্রবাল,মুক্তার মতো। আমাদের
নিনকার মতো রূপসী আর নেই!”
এ কারনে নিনকা কখনো আয়নায়
নিজেকে দেখেনি, তার দরকার
হয়নি কখনো! বিপত্তি টা বাধায় নতুন
আসা ছেলেটা, নিনকা ছেলেটার
প্রেমে পড়ে! ছেলেটা প্রথমে টের
পায়নি নিনকা যে সবখানে তাকে অনুসরন
করে ,যখন টের পেল, সে ভীষন চটে গেল।
“আগে আয়নায় নিজেকে দেখগে যা ”!
নিনকা ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেনা,
ভীষন লাজুক ছিল নিনকা ,দমে যায়
ভেতরে ভেতরে! এতদিনকার জীবন্ত
আয়নার বদলে সে প্রথমবারের মত
এসে দাড়ায় ঠান্ডা, নিস্করুন আয়নার
সামনে!
মৃত আয়নাটা এতদিনকার রুপসীকে খুন
করলো!
এই গল্পটার শেষ দিকে হঠাৎ
করে বিষন্নতা এসে জাপটে ধরে, সাত
নম্বর ফ্লাটের নিনকাকে রক্ত মাংসের
মানুষ বলে মনে হয়,
বিষন্নতা ধীরে ধীরে রক্তের
ভেতরে ঢুকে পড়ে, ভাসিয়ে নিয়ে যায়!
.
.....(অনুবাদ:ননী ভৌমিক) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।