স্বাধীনতার চেতনা বুকে সদা জাগ্রত ছিলাম, আছি
পাকিস্তানের জন্মের বিরোধীতাকারী জামাত শুরুতে আয়ুব খানের সামরিক শাসনকে সমর্থন দিলেও পরবর্তী জনসমর্থনের কথা বিবেচনা করে আযুব বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। কিন্তু ইতোমধ্যে জামায়াতের চরিত্র জনসাধারনের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায় আন্দোলনরত আয়ুব বিরোধী দলগুলোর কাছে জামায়ত কোনভাবেই গ্রহনযোগ্যতা পায়নি।
যখন আয়ুবের শাসনের বিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রাস্তা উত্তপ্ত - সেই সময়ে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী ইসলামী ছাত্র সংঘের (বর্তমান ছাত্র শিবির) প্রাদেশিক সন্মেলন উপলক্ষে ঢাকায় আসে। মওদুদীর আগমন উপলক্ষে জামায়াত ও ছাত্র শিবির (সংঘ) ১৮ই জানুয়ারী ১৯৭০ সালে পল্টন ময়দানে একটা সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে মওদুদী সেই সভায় উপস্থিত হয়নি।
তার অনুপস্থিতিতে জামায়াতের চট্রগ্রাম জেলার আমীর আন্দোলনরত দুই দল - ন্যাপ ও আওয়ামীলীগের ১১ ও ৬ দফা নিয়ে সমালোচনা শুরু করলে সমাবেশে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং এক পর্যায়ে জনতার সাথে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মতে - " জামাত তার সভামঞ্চের পাশে চাঁদোয়া ও পর্দা দিয়ে ঘেরা একটা বিরাট কক্ষ তৈরী করে রেখেছিলো। তাতে লেখা ছিলো 'রিসেপশান'। এইপর্দার ভেতরে রক্ষিত ছিলো কাঁচা বাঁশের লাঠি এবং 'ফাস্ট এইডের' দ্রব্যাদি। এখান থেকেই জামাতকর্মীরা দলে দলে লাঠি নিয়ে জনতার উপর মারমুখী আক্রমন চালায়।
"
তিনি আরো জানান - "এক পর্যায়ে পল্টনের জনতা ভেঙ্গে পড়ে জামাত কর্মীদের উপর এবং তাদের লাঠি উপস্থিত জনতা কেড়ে নেয় এবং পাল্টা হামলা চালায়। এক পর্যায়ে পল্টন ময়দান পরিনত হয় রণক্ষেত্রে। "
এই দিনের সরকারী দৈনিক পাকিস্তান জানায় - বেলা যখন ৫টা তখন স্টেডিয়ামের প্রধান গেটের কাছে পুলিশ অবস্থান নেয় - এসময় একজন জামায়াত নেতা কর্মীদের মাইকে নির্দেশ দিতে থাকে - "উত্তর দিকে পুলিশ আছে, আপনারা দক্ষিন দিকে আক্রমন চালান"।
কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা জামায়াত কর্মীদের হঠিয়ে দেয় এবং প্যান্ডেল, মাইক এবং অন্যান্য আয়োজনে আগুন লাগিয়ে দেয়। একটি ক্ষুদ্র দল মিছিল নিয়ে মতিঝিলে অবস্থিত হোটেল ইডেনেও যায় এবং সেখানকার ইসলামী ছাত্র সংঘের মঞ্চে আগুন লাগিয়ে দেয়।
এই সংঘর্ষের ব্যাপ্তি ছিলো দুই ঘন্টা আর এতে পাঁচ শতাধিক মানুষ আহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর পর একজন আহত মারা যায়।
জামাতায়াত কর্মীদের মারমুখী ভুমিকার ছবি তুলতে গেলে দৈনিক আজাদের ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ আলম, ইত্তেফাকের বড়ুয়া এবং এপিপির মোকাদ্দেমকে পেটানো হয় এবং জামায়াত কর্মীরা তাদের ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে।
ঘটনার পরদিন হাসপাতালে আরেকজনের মৃত্যু হয়। ইসলামী ছাত্র সংঘ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এ নিয়ে নিহতের সংখ্যঅ দুই এ দাড়ালো।
তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয় - এই দুইজনই ছাত্র সংঘের কর্মী - প্রথমজনের বাড়ী মোড়েলগঞ্জে আর দ্বিতীয় জনের বাড়ী নোয়াখালীর চর লক্ষীগঞ্জে - এরা দুইজনই ছাত্র সংঘের কর্মী।
এই দুইজনের জানাজার পর জামায়াতের নেতা গোলাম আজম "রক্তের বিনিময়ে জেহাদ করার অং। গীকার" ঘোষনা করে।
এই ঘটআর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৮০ জনকে গ্রেফতার করেছে - তার মধ্যে ঢাকা শহরে ছাত্র সংঘের নেতা রুহুল কুদ্দুস ও ছাত্র সংঘের ফরিদপুর শাখার সভাপতি মুহম্মদ মুজাহিদ অন্যতম।
সুত্রঃ
১) দৈনিক পাকিস্তান, আজাদ ও ইত্তেফাক, ১৯ জানুয়ারী, ১৯৭০।
২) দৈনিক পাকিস্তান, ২০ জানুয়ারী, ১৯৭০ ।
৩) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ড. মোহাম্মদ হাননান।
^- ছবি - আফতাব আহমেদ
কৃতজ্ঞতা: এস্কিমো ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।