সাত মাস পর তার গ্রামে ফিরেছে র্যাবের (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন) গুলিতে পা হারানো লিমন। কেমন কাটছে তার সময়? ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সাতুরিয়া ঘুরে এসে লিখেছেন
—মশিউল আলম
রোববার, ১৬ অক্টোবর ২০১১
কাঁঠালিয়া
চারদিকে গভীর ছায়াঘন সুপারির বন, মাঝখানে হঠাৎ ঝলমল করে উঠল একটি সবুজ মাঠ। সাদা সাদা পুঞ্জমেঘ নিয়ে হেমন্তের আকাশ সবুজ মাঠকে মুখ দেখানোর সুযোগ পেয়েছে এখানে। মাঠের এক পাশ দিয়ে চলে গেছে কালো পিচঢালা সড়ক। দুই পাশে সারিবদ্ধ পাকা ঘর, আর একটি পাশ সুপারিবনের দিকে খোলা।
ইমারতের এক অংশের গায়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা: কাঁঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
প্রায় সাত মাস পর আজ এই বিদ্যায়তনে ফিরে এসেছে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মো. লিমন হোসেন। কিন্তু এই ফিরে আসা তার সেই আগের দিনগুলোর মতো নয়। এই সাত মাসে বদলে গেছে অনেক কিছু: আগে যে কিশোর কাদাপানি ভেঙে খানাখন্দভরা পথ পায়ে হেঁটে, নৌকায় নদী পার হয়ে বাকিটা পথ আবার পায়ে হেঁটে এসে পৌঁছাত বিদ্যালয়ে, আজ তাকে আসতে হয়েছে অন্য পথে, অনেকটা রাস্তা ঘুরে। একা নয়, মায়ের সঙ্গে।
হেঁটে নয়, রিকশায়। কারণ, আজ তার একটি পা নেই।
সিঁড়ি ভেঙে বিদ্যালয়ের দোতলার বারান্দায় উঠে আমরা লিমনের মুুখোমুখি হই। বিহ্বল চোখে তাকায় অসহায় কিশোর। আমরা তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিই; ছল ছল করে ওঠে তার চোখ।
তার হাতে বই-খাতা, পরনে সাদা রেখাটানা ঝকঝকে নীল টি-শার্ট, নীল জিনস ট্রাউজার, পায়ে নতুন কেডস। জিনস ট্রাউজার আর এক পাটি নতুন কেডস আড়াল করে রেখেছে তার জীবনের সবচেয়ে মর্মান্তিক সত্যটাকে—বাঁ পায়ের হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত রক্ত-মাংসহীন নিরেট বস্তু, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দানে সংযোজিত কৃত্রিম পা। একজন শিক্ষক হঠাৎ মারা গেছেন, তাই একটি ক্লাস হওয়ার পরেই কলেজ ছুটি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের অনেকে চলে গেছেন সহকর্মীকে শেষবারের মতো দেখতে। বাড়ি ফিরে গেছে শিক্ষার্থীরাও।
আমরা আসছি, মুঠোফোনে এই সংবাদ পেয়ে রয়ে গেছে শুধু লিমন আর ওর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহপাঠী। লিমনকে ফিরে পেয়ে সহপাঠীরা বেশ খুশি। আনন্দ প্রকাশ করলেন বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক ও কয়েকজন কর্মচারী। সবার মুখে একই কথার প্রতিধ্বনি: লিমন বড় ভালো ছেলে। ওর সহপাঠী তরিকুল বলে, ‘লিমন যদি সন্ত্রাসী হতো, তাইলে না হয় মানা যাইত।
কিন্তু লিমনের মতন ভালো পোলা আর হয় না। তাইলে এই অন্যায় কেমনে মানা যায়?’ সহপাঠীদের কাঁধে হাত রেখে সিঁড়ি বেয়ে দোতলা থেকে নেমে এল লিমন। তাকাল খোলা মাঠের দিকে, যে মাঠে সে খেলাধুলা ও দৌড়ঝাঁপ করেছে একসময়। আজ সেই মাঠের ধার দিয়ে কৃত্রিম পা টেনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে সে; তার পিছু পিছু চলেছেন মা হেনোয়ারা বেগম। ছোটখাটো সে নারী সজল চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছেন নিজের ‘পঙ্গু পোলারে’।
একবার তিনি এমন একদৃষ্টিতে এই প্রতিবেদকের দিকে তাকালেন, যেন জানতে চাইছেন, এর প্রতিকার কী?
পুনশ্চ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন
বুধবার, ২৩ মার্চ ২০১১, বিকেল পৌনে চারটা
‘বিকেলে গরু আনতে গেছি জমাদ্দারবাড়ির ব্রিজের কাছে। সাথে মাও আছিল। মা একটু পেছনে ছিল, আমার সাথে ছিল দুই বন্ধু। আমাদের একটা বাছুর ছিল। আমি ব্রিজের নিচে নামছি, বন্ধুরা ব্রিজের ওপরে।
একটু পরে দেখি মোটরসাইকেল নিয়া আসছে তিনটা র্যাব। আমি রাস্তার পাশে দাঁড়াইছি যে র্যাব গেলে পরে আমি যাব। র্যাব আইসা দাঁড়াইছে, একজন আমার কলার ধইর্যা কয় তুই সন্ত্রাস। আমি বললাম, ছার আমি সন্ত্রাস না, আমি ছাত্র, কলেজে পড়ি। এভাবে অনেক রিকোয়েস্ট করছি।
এক র্যাব কয়, তুই র্যাবের সাথে চালাকি করতাছ? একজন আমার কলার ধইর্যা একটা বেড়ার কাছে নিছে। আমার কাছে মোবাইল ছিল, আমি মোবাইল বাইর কইর্যা দিয়া কইছি, ছার আমি ছাত্র, আমার ছারেদের লগে কথা বলেন, আমি ছাত্র, না সন্ত্রাস। র্যাব মোবাইলটা পকেটে রাইখ্যা আমার বাম পায়ে অস্ত্র ঠেকায়া গুলি কইরে দেছে। আমি চিৎকার দিয়া পইড়্যে গেছি। তখন আমারে জিগায় তোর নাম কী, তোর বাপের নাম কী।
তারপর কী হইছে আমি আর কইতে পারি না, অজ্ঞান হইয়া গেছি। ’
বরিশাল শহর থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সাতুরিয়ার দরিদ্র গৃহবধূ হেনোয়ারা বেগম আর দিনমজুর তোফাজ্জল হোসেনের কিশোর ছেলে লিমন তাদের ঝোপজঙ্গলময় ছায়াচ্ছন্ন বাড়ির স্যাঁতসেঁতে উঠানে বসে বলে তার জীবনের সেই গল্প, যা এই সাত মাসে তাকে বলতে হয়েছে অনেকবার। মোরশেদ জমাদ্দার নামের এক সন্ত্রাসী বা তার সহযোগীকে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত অভিজাত সশস্ত্র বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কয়েকজন সদস্যের ‘র্যাপিডেস্ট অ্যাকশন’ সারা দেশে বেশ শোরগোল তুলেছিল। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে লিমনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। সংবাদকর্মীদের সামনে তিনি বলেছিলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি এখনই, এই মুহূর্তে এ ঘটনা তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করুন।
খুঁজে বের করুন, কে সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, যে এভাবে অস্ত্র প্রয়োগ করে একটি ছোট ছেলেকে পঙ্গু করে...। ’
কিন্তু র্যাবের ভাষ্যে সেই চিরাচরিত গল্পের পুনরাবৃৃত্তি। সংস্থাটির আইন ও জনসংযোগ শাখার প্রধান এম সোহায়েল লিমনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর ছিল তাদের কাছে অস্ত্র আছে। তাকে [লিমন] ধরতে গেলে একটা পর্যায়ে সে [লিমন] গুলি করে র্যাব সদস্যদের ওপর। র্যাবও পাল্টা গুলি চালায়।
এ রকম পরিস্থিতিতে যেকোনো পক্ষের যে কেউ আহত বা নিহত হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে কেউ নিহত হয়নি। একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ’ এবং অবৈধ অস্ত্র বহন ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে র্যাব যথারীতি দুটি মামলা করে গুলিবিদ্ধ কিশোর লিমনের বিরুদ্ধে।
একবার, লিমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ১৯ দিন পর, ১১ এপ্রিল ২০১১ র্যাব সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, লিমন হোসেন সন্ত্রাসী নয়।
সে ঘটনার শিকার। কিন্তু তার পর পরই কী এক রহস্যজনক কারণে এই বক্তব্য থেকে সরে যায় র্যাব। ভুল স্বীকারের পরিবর্তে র্যাব লিমনকে সন্ত্রাসী প্রমাণের চেষ্টাই অব্যাহত রাখে। র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করেন লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম। মহাপরাক্রমশালী রাষ্ট্রের রোষের মুখে পড়ে একটি অসহায় দরিদ্র পরিবার।
গণমাধ্যমে আমরা রচিত হতে দেখি একটি মর্মান্তিক উপাখ্যান—রাষ্ট্র বনাম একটি পরিবার।
লিমনের ফেরা
সাত মাস পরে সাতুরিয়া গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছে লিমন, যাকে শুধু বরিশাল-ঝালকাঠি নয়, সারা বাংলাদেশের মানুষ এখন জানে র্যাবের গুলিতে পা-হারা লিমন নামে। গণমাধ্যমের কোলাহল ইতিমধ্যে থেমে গেছে, হেনোয়ারা বেগমের ঝঞ্ঝাময় দিনগুলো হয়েছে প্রশমিত। এই স্থিতধী মানসিক অবস্থায় পৌঁছেই যেন তিনি ফিরে পেয়েছেন সংবিৎ: তাঁর ছোট ছেলেটির এক পা নেই। আট কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এখন সে কী করে কলেজে যাওয়া-আসা করবে প্রতিদিন?
লিমনের বিরুদ্ধে র্যাবের দায়ের করা দুটি মামলা এখনো চলছে।
আশপাশের কিছু খারাপ লোক হেনোয়ারা বেগমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকাপয়সা আদায়ের চেষ্টা করছে। কিন্তু এই সবকিছুকে তাঁর মনে হচ্ছে লঘু সমস্যা। ছেলের ওপর যে অন্যায় করা হয়েছে, তার প্রতিকার চেয়ে র্যাবের বিরুদ্ধে তিনিও ঠুকে রেখেছেন একটি মামলা: লড়াই করে টিকে থাকার মনোবল তাঁর যথেষ্টই রয়েছে। এখন তাঁর মনে হচ্ছে, সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা লিমনের একটি পা নেই। ‘লিমন কাদা ভাঙতে পারবে না, লাফ দিয়া বাসে উঠতে পারবে না’—মায়ের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা, ছেলেটির চলাফেরা হয়ে পড়েছে ভীষণ সীমাবদ্ধ।
সাত মাস আগেই কেটে ফেলা হয়েছে লিমনের পা, কিন্তু সে এত দিন ছিল হাসপাতালে ও আশ্রয়কেন্দ্রে। তার চলাফেরার বাস্তব সীমাবদ্ধতা স্বচক্ষে দেখতে হয়নি মাকে। এখন তা দেখতে পেয়ে যেন নতুন করে উপলব্ধি করছেন রাষ্ট্রের একটি বাহিনীর কাছে কী হারিয়েছে তাঁর এই সন্তান।
সাতুরিয়া গ্রামে একটি মাত্র ঘর লিমনদের। সেখানে থাকেন মা হেনোয়ারা বেগম, বড় বোন কাউখালী কলেজের বিএর শিক্ষার্থী ইসমত লাকি আর লিমন।
বাবা তোফাজ্জল হোসেন ঢাকার আশুলিয়ার কাছে একটি ফলের আড়তে কাজ করেন। লিমনের বড় ভাই হেমায়েত হোসেন একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা করেন স্নাতক পর্যায়ে। হেনোয়ারা বেগম খেয়ে না খেয়ে, ছেঁড়া কাপড় পরে সব ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। কাপড় কেনার জন্য স্বামীর দেওয়া ৮০০ টাকা থেকে মাত্র ১০০ টাকায় নিজের জন্য পুরোনো কাপড় কিনে ৭০০ টাকা দিয়েছেন ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট টিউটরকে। সন্ত্রাসীর মা তিনি নন, বাংলাদেশকে উপহার দিতে চেয়েছেন তিনটি শিক্ষিত লোকবল।
লিমনকে তিনি পড়াচ্ছেন কারিগরি কলেজে, যেন স্নাতক পাস করেই সে একটা কাজে ঢুকে পড়তে পারে।
‘আমার হেই পোলারে সরকারের লোকেরা পঙ্গু বানায়া দেছে!’ বললেন লিমনের মা, ‘বিএ পাস দেওনের পরে আপনেরা হেরে একখান সরকারি চাকরি দিবেন, এই আমার দাবি। ’লিমনের জন্য জাতীয় মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যানের কান্না অরণ্যে রোদন হয়েছে: র্যাবের যে সদস্য লিমনের পায়ে গুলি করেছেন, তিনি এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করে চলেছেন। লিমনের মায়ের দাবিটি কি সরকারের বিবেচনা পাবে?
হেনোয়ারা বেগমের দুঃস্বপ্ন
ছেলের পায়ে গুলি করার শব্দ পৌঁছেছিল মায়ের কানে। হেনোয়ারা বেগম বললেন, ‘ফেচাৎ কইরে শব্দ হইছে, পোলা মোর মা বইল্যা জোরসে চিক্কর দিয়া পইড়ে গেছে।
র্যাব আমারে পোলার কাছে যাইতেই দেয় নাই। পরদিন বরিশাল মেডিকেলে গেছি, পোলা মোর মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল কইরে চাইয়া রইছে। দুই চোখ দিয়া পানি ছাইড়া দেছে। হের দুই পাশে বইস্যা রইছে দুই র্যাব। ’
গুলিবিদ্ধ ও সংজ্ঞাহীন লিমনকে র্যাবের সদস্যরা প্রথমে নিয়ে যায় ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে পাঠানো হয় বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুলিতে লিমনের পায়ের শিরা ছিঁড়ে গিয়েছিল, জরুরি হয়ে উঠেছিল তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রোপচার করা। কিন্তু সেখানে সে ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকদের পরামর্শে হেনোয়ারা বেগম ছয় হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ছেলেকে নিয়ে আসেন ঢাকার জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে। সেখানকার ভাসকুলার সার্জনরা রক্তসঞ্চালন যাচাইয়ের পরীক্ষা চালিয়ে দেখতে পান লিমনের গুলিবিদ্ধ পায়ের রক্তনালির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গেছে। এত বেশি সময় পেরিয়ে গেছে যে তাঁরা তা সচল করতে পারেননি।
‘সরোয়ার্দিতে ডাক্তাররা কয়, পাও নষ্ট হইয়া গেছে, কাইটা ফালাই দিতে হইবে। আমি ডাক্তারগো পাও ধরি আর কান্দি, আমার ছেলের পাওডা কাইড্ডা হালাইয়েন না। আমার ছেলে কলেজ ছাত্র, বাসন লইয়া চৌরাস্তায় বইয়া খয়রাত কইর্যা খাইতে পারবে না, হের পাওডা যেন যায় না। আমার কান্দাকাটি দেইখ্যা হেরাই ভ্যানগাড়িতে কইর্যা হেরে পাঠায় দেছে পঙ্গুতে। ’ অনুপুঙ্খ বর্ণনা শুনি হেনোয়ারা বেগমের কণ্ঠে: ‘তেইশ তারিখ গুল্লি দেছে, চব্বিশ তারিখ বরিশাল ছেলো, পঁচিশ তারিখ ঢাকা নিয়া পাডায়া দিছে পঙ্গুতে।
ছাব্বিশ তারিখ তো ছাব্বিশে মার্চ, ডাক্তাররা প্রায় নাই। কিছু কিছু কম্পাউন্ডার দেখে আর কয় পাও কাইট্যা ফালাইতে হইবে। তখন এমন কোনো ডাক্তার নাই আমি পাও ধরি নাই; কানছি আর কইছি, আমার পোলার পাওডা যানি কাটা না লাগে। ছাব্বিশ তারিখ এমারজেন্সিতে সারা রাত টুলির উপর পোলারে নিয়া খাড়াই রইছি, পোলা মোর গলা ধইরা কান্দে আর কয়, মা আমার পাও কাইট্যা ফালাই দেবে? হ্যার চাইতে আমারে ইনজেকশন দিয়া মাইর্যে ফালাউক। আমি পঙ্গু হইয়া দ্যাশে যামু না।
যে ডাক্তার আহে হেরেই কয়, ছার আমারে ইনজেকশন দিয়া মাইর্যা হালান, আমি পঙ্গু হইয়া দ্যাশে যামু না। ’ কিন্তু পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দেখতে পান, লিমনের গুলিবিদ্ধ পায়ে পচন ধরেছে, দ্রুত অবনতি ঘটছে তার শারীরিক অবস্থার। ‘ডাক্তাররা বোর্ড বসায়া মিটিং দিয়া কয়, ১২ ঘণ্টার মধ্যে পাও কাইট্যা না ফালাইলে কিডনি নষ্ট হইয়া যাইবে। দুই-তিনডা লোক পাঠায়া দেছে, হের মারে বুঝায়া রাখো, হেরে কইয়ো না যে পাও কাডা লাগবে। হেরা আমারে কয়, আপনার ছেলের পাও কাডা লাগবে না।
পাওয়ের মাংস হালাইয়া বিদেশি মাংস আইন্যা লাগাইয়া দেবে। দুই ঘণ্টা পর বাবুরে আমার লইয়া আইছে। দেহি যে ডান পাও এই রকম সোজা, বাম পাও অর্ধেক। ও বেহুঁশ, ওরে একখান সাদা ত্যানা দিয়া ঢাইক্যা রাখছে। এইডা দেইখ্যা আমি ঠাস কইর্যা পইড়া গেছি ফোলোরে।
’
২৭ মার্চ লিমনের গুলিবিদ্ধ বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলে দেওয়ার বিবরণ দিতে গিয়ে হেনোয়ারা বেগমের চোখ দুটি ছল ছল করে ওঠে, ভারী হয়ে আসে গলা।
সূত্র ঃ প্রথম আলো ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।