প্রথম আলো সম্পাদকীয়, ২৯-০৪-২০১১
লিমনের ওপর ধারাবাহিক নিষ্ঠুরতা
লিমনের ওপর একের পর এক যে নিষ্ঠুরতা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, আমাদের সমাজ সব ধরনের সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছে। একজন নাগরিকের ওপর এই নিষ্ঠুরতা চলছে, আর তাতে মনে হয় সায় আছে আমাদের সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার। পায়ে গুলি করে এইচএসসি পরীক্ষার্থী লিমনকে পঙ্গু করে দিল RAB, এখন পুলিশও লেগেছে তার পেছনে। সন্ত্রাসী হিসেবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তাকে। এক পা হারানো হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান লিমনকে এই ধারাবাহিক নিষ্ঠুরতা থেকে বাঁচাবে কে?
এইচএসসি পরীক্ষার্থী লিমন পা হারাল RABএর কথিত ক্রসফায়ারে।
লিমন ও তার পরিবারের লোকজন অভিযোগ করল, তাকে ধরে পায়ে গুলি করা হয়েছে। যথারীতি শুরুতে পুরো ঘটনাই অস্বীকার করে RAB। তাদের অভিযোগ, লিমন সন্ত্রাসী। পরে যখন প্রমাণ মিলল, লিমনের বিরুদ্ধে থানায় সন্ত্রাসের অভিযোগ নেই, নিয়মিত ক্লাসও করার প্রমাণ মিলল, তখন RABএর পক্ষ থেকেই বলা হলো লিমন ‘ঘটনার শিকার’। ঘটনাটি হচ্ছে ‘ক্রসফায়ার’।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান গিয়ে লিমনের সঙ্গে কথা বললেন, সরকারের তরফে ছয় ধরনের তদন্তের কথা বলা হলো, কিন্তু লিমন RAB-পুলিশের যে ফাঁদে পড়ে গেছে, তা থেকে তার আর মুক্তি মিলল না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের তদন্ত যখন নিজেরাই করে, তখন তা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়ে পারে না। RABএর বিতর্কিত ক্রসফায়ারে মৃত্যু নিয়ে ‘নিজস্ব’ তদন্ত যা হয়েছে, তা কার্যত অর্থহীন প্রমাণিত হয়েছে। এসব তদন্ত ও RABএর ক্রসফায়ারের বিবরণ বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। লিমনের বাবা-মা RABএর বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করলেও পারেননি পুলিশের টালবাহানায়।
সময়ক্ষেপণ করে উল্টো লিমনের বিরুদ্ধে RABএর করা অস্ত্র আইনে মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। পুলিশ RABএর পক্ষ নেবে—এটাই তো স্বাভাবিক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এক পা হারানো লিমন, যার চিকিৎসা চলছে বিভিন্ন মানুষের দানের টাকায়, তার পক্ষ নেওয়ার কি কেউ নেই?
‘ক্রসফায়ার’ ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে এটা অনেকটাই স্পষ্ট, বড় নিষ্ঠুরতা ও অন্যায় হয়ে গেছে লিমনের প্রতি। যাঁরা এই অন্যায় করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে আসল সত্য খুঁজে বের করা যেখানে সবচেয়ে জরুরি, সেটা না করে লিমনের প্রতি অন্যায় আচরণ অব্যাহত রেখেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কোনো আধুনিক ও গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের আচরণ প্রশ্রয় পাওয়া উচিত নয়।
আমরা মনে করি বিভাগীয় তদন্ত নয়, এর বাইরে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পুরো ঘটনার একটি তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।