আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপার হয়ে দাঁড়ায়ে আছি!

শফিক হাসান মরমি একটা গানের শুরু হয়েছে এভাবে_ আমি অপার হয়ে বসে আছি...। সব মানুষই জীবনের কোনো না কোনো ক্ষেত্রে, কিছু না কিছুর জন্য অপার হয়ে বসে থাকে! কে কীসের জন্য অপার হয়ে বসে আছেন? [বি.দ্রঃ সবাই খারাপ নন, বরং বেশির ভাগ মানুষ ভালো। না হলে পৃথিবীটা এখনো টিকে আছে কীভাবে?] হলুদ সাংবাদিক : চাঁদা। সাংবাদিকদের কেউ কেউ সাংঘাতিক বলেও সম্বোধন করেন। তাই বলে সাংবাদিক মানেই যে সাংঘাতিক তা মোটেও নয়।

নীতি-নৈতিকতা বেনোজলে ধুয়ে-মুছে উজাড় করে দিয়ে এক শ্রেণীর তথাকথিত সাংবাদিক কর্মযজ্ঞ চালায়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সৎ মানুষকে জিম্মি করে। 'আপনার ওই কাজটা অন্যায় হচ্ছে, দিলাম সংবাদ ছেপে' ধরনের টোপ লাগিয়ে মানুষকে সহজেই খেলার পুতুল বানিয়ে ফেলে এরা! ডাক্তার : টেস্ট। ডাক্তার বসে থাকেন রোগীর জন্য। রোগীর পথ ধরে যে আরও কিছু আসবে সেই গোপন জিনিসটারও অপেক্ষায় থাকেন।

এ দেশের অধিকাংশ মানুষই নিরীহ, দরিদ্র। দরিদ্র মানুষরাই যখন তুচ্ছ কারণে কোনো ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়, অমনিই ডাক্তার এই টেস্ট লাগবে, অমুক জায়গা থেকে তমুক রিপোর্ট আনতে হবে_এসব বলে অফসিজনেও রোগীর মাথায় কাঁঠাল ভাঙার চেষ্টা করেন। পুলিশ : ঘুষ। পুলিশ অপার হয়ে বসে থাকা মানেই ঘুষ কিংবা দুর্নীতির তরে। দুর্নীতিবাজ শুধু নয়, নীতিবান মানুষও তাদের যাত্রাপথে কোনো বাধা নয়।

বরং নীতিবানরাই বড় মক্কেল। তাদের বিভিন্ন ভুজংভাজং বুঝিয়ে, বেহুদা কারণ দেখাতে পারলেই হলো! হাত বাড়ালে সহজেই টাকা মেলে। তাছাড়া ঘুষ তো পুলিশের প্রাপ্য। কোনোদিন ঘুষের নাগাল না পেলে মনে হয়, তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে! ক্ষমতাবান কর্মকর্তা : ফাইল। চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, মাস্তানরা রাস্তাঘাটে অস্ত্র ঠেকিয়ে মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নেয়।

তাই বলে ক্ষমতাবান কর্মকর্তারা তো অতটা অমানবিক হতে পারেন না। তারা পড়াশোনা জানা শিক্ষিত মানুষ। সুতরাং সরাসরি কাউকে হয়রানি না করে ফাইল ঠেকিয়ে যা দু'চার পয়সা নেওয়ার চেষ্টা করেন। তাও আবার জোরপূর্বক নয়_ সমঝোতা এবং আলোচনার ভিত্তিতে! এনজিওকর্মী : ফান্ড। এনজিওকর্মীরা এখন নিজেদের উন্নয়নকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

যদিও কী উন্নয়ন, কীভাবে উন্নয়ন, কোথায় উন্নয়ন তারা নিজেরা যেমন বোঝেন না_ তেমনি সাধারণ মানুষও। বেসরকারিভাবে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটানোর লক্ষ্যে তারা অগ্রসরমান। উন্নয়নে যদি দেশকে ডুবিয়েও দিতে হয়, তাতেও পিছপা হন না। সবার আগে উন্নয়ন, অবদান রাখা চাই! সরকারি দলের রাজনীতিবিদ : উন্নয়ন। সরকারি দলের নেতাকর্মী, সমর্থকরা দিনে কিংবা রাতে একটা খোয়াবই দেখেন_ উন্নয়ন! এটি তাদের প্রিয় শব্দে পরিণত হয়েছে! যদিও দেশের মানুষ উন্নয়ন কী আর স্থবিরতাই কী_ কোনো পার্থক্যই পায় না।

কোনো স্কুলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও সরকারি দলের নেতারা নিজের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ফিরিস্তি দিতে ভোলেন না! আগের সরকার ছিল ব্যর্থ, কিছু করেনি; তারা এসে কত কিছু দিয়ে ভাসিয়ে ফেলছেন! বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ : ইস্যু। চুরি-বাটপারি, দুর্নীতির জোরে এ দেশের বিরোধী দলের অভাব তেমন একটা থাকে না। অভাব তাদের একটাই_ ইস্যু। সমস্যা হচ্ছে এই ইস্যু দেশে বা বিদেশের কোনো ডিপার্টমেন্ট স্টোরে কিনতে পাওয়া যায় না। নিজেদেরই বানাতে হয়।

বড় কঠিন কাজ। বিরোধী দলের আন্দোলনের পূর্বশর্ত এই ইস্যু। ইস্যু বানাতে না পেরে মাঝে মধ্যে ভেবে বসে_ সূর্য আজ একটু ত্যাড়াভাবে উঠল কেন, এটাকে ইস্যু করে একটা হরতাল দিলে কেমন হয়! অভিনেতা : জনপ্রিয়তা। একটা সময় ভালো অভিনয়ই ছিল অভিনেতাদের আরাধ্য। আর এখন অধিকাংশ অভিনেতার আরাধ্যের বিষয় একটাই_ জনপ্রিয়তা।

জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য যা কিছু করতে হয় তার কোনোটিই করতে পিছপা হন না তারা। এমনকি সব পত্রিকার বিনোদন সাংবাদিকদের ফোন নম্বর সেভ রাখেন। যাতে সময় করে বলতে পারেন, আপনাদের পত্রিকায় আমার একটা ইন্টারভিউ নেন... কিংবা আমি অমুক কাজ করেছি দুই লাইন লিখে দেবেন? গায়ক : দর্শক। একটা সময় পর্যন্ত গান শোনার জিনিস ছিল। আর এখন গান শোনার জিনিসই নয়, দেখারও।

গায়কদের পারফর্ম আর পেশাদার অভিনেতাদের পারফর্মের মধ্যে খুব একটা তফাতও করা যায় না। স্টেজ প্রোগ্রামও বেড়েছে অনেকগুণ। গান আড়ালে বা চোখের অগোচরে শোনাই হয় বেশিরভাগ, তাই গায়করা তক্কে তক্কে থাকেন সুযোগ পেলে মঞ্চ কাঁপানোর। এই কাঁপাতে গিয়ে দর্শকরা নাচে-কুঁদে আর এই নর্তন-কুর্দনকে নিজেদের সফলতা ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন গায়করা! ব্যবসায়ী : ভেজাল। ব্যবসা নিয়ে সুন্দর সুন্দর কিছু কথা, এর সপক্ষে ইতিবাচক উক্তিও কম উচ্চারিত হয় না।

কিন্তু ব্যবসায়ীদের চরিত্র নাকি সুন্দর নয়। তারা সুযোগ পেলেই ভেজাল করার চেষ্টা করেন! খাঁটি জিনিসে ভেজাল মিশিয়ে সেটাকে 'বরকত' তো করেনই, দাম নিয়েও ভেজাল করতে ভোলেন না। দেখা গেল, সরকার কোনো জিনিসের দাম বাড়াবে কি-না এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে আর তা দেখেই ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ দাম বাড়িয়ে দিলেন! সরকারি 'হুকুম' পালন করেন তারা, এর মাধ্যমে নাকি আনুগত্যও পোষণ করা হয়! ছিনতাইকারী : মক্কেল। পেশাদার ছিনতাইকারীর মায়া-দয়া, মানবতা বলে কিছু নেই। এটা তাদের পেশায় দুর্বলতা হিসেবে গণ্য হয়।

সাধারণ মানুষ এদের কাছে মক্কেল, পাবলিক হিসেবেই পরিগণিত। এই মক্কেলরা যখন রাতের আলো-আঁধারে বা প্রকাশ্য দিবালোকে চলাচল করে, তখন নীরবে সামনে এসে দাঁড়ায় ছিনতাইকারীরা। যদিও রাস্তায় পুলিশ থাকে কিন্তু তারা স্বজাতির দিকে তাকাবেও না। আর সাধারণ মানুষও থাকে, তারা 'কী দরকার যেচে গিয়ে ঝামেলায় পড়ার' ভেবে যার যার পথ ধরে! সব মিলিয়ে ছিনতাইকারীদের পোয়াবারো! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।