আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি রহস্যময় প্রেমকাহিনী

মনের এলোমেলো ভাবনাগুলোকে শব্দের ফ্রেমে বাঁধার এক অপচেষ্টা। আক্কাস আলীর সবচেয়ে প্রিয় উক্তিটি হলো, “গ্রন্থগত বিদ্যা , পরহস্তে ধন; নহে বিদ্যা, নহে ধন, হলে প্রয়োজন”। এই নীতিবাক্যটিকে মনেপ্রাণে ধারণ করে বলেই, আক্কাস আলী ধার দেয়ার চাইতে ধার নেয়ায় বেশী উৎসাহী এবং জাগতিক কোন বইয়ের উপরই তার বিশেষ কোন আস্থা নাই । বলাই বাহুল্য পাওনাদারদের অতি প্রার্থিত এই ব্যক্তিটিকে স্কুল কলেজের প্রথাগত বিদ্যা খুব একটা টানতে পারেনি । অকালকুষ্মান্ড পুত্র দায়গ্রস্থ পিতা পুত্রকে ধিক্কার দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলে ফেললেন, পীর ফকিরের কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে মার ছেড়া স্যন্ডেলের সংখ্যা হাজার ছাড়ালো, তবুও আক্কাস আলী তার নীতিবাক্য থেকে নড়লোনা ।

একই পাড়ার চরম পড়াকু নারী বিদ্যাময়ী বেগম । এই বিপ্লবী নামের জন্যই হয়তো বিদ্যাময়ীর ধ্যাণ, মন সবই ছিলো বইয়ের পাতার সাথে সুপার গ্লু দিয়ে আটকানো । পাড়ায় কথিত আছে বিদ্যাময়ীর প্রথম বলা শব্দ “মা” ছিলোনা, বাবাও ছিলোনা, শব্দটি ছিলো “book” । এ নিয়ে যথেষ্ট র্তকও আছে, বিদ্যাময়ী কি আসলেও book বলেছিল । যদি বলেই থাকে তাহলে বাংলায় বই না বলে ইরেজীতে book বলতে গেল কেন? আমরা বরং সেই ইতিহাসের দিকে না গিয়ে মূল গল্পের দিকে চলে যাই ।

অষ্টাদশী বিদ্যাময়ীকে আক্কাস আলীর ব্যপক পছন্দ । কিন্তু এই বিদ্বান নারীর মন কোন বিদ্যায় গলবে তা তার জ্ঞান সীমানার মধ্যে ছিলোনা । প্রথমবারের মতো আক্কাস আলী নীতিবিরুদ্ধ হয়ে, অনেক বই খাতা ঘেঁটে একটা প্রেমপত্র লিখে ফেললো । সুযোগ বুঝে একদিন বিদ্যাময়ীর হাতে সেটা গুজে দিয়ে চোখমুখ লাল করে পালালো । তারপর স্বপ্নের ঘোরে কেটে গেল বেশ ক’টা দিন ।

স্বপ্ন ছেড়ে আক্কাস আলী মাটিতে নেমে এল বিদ্যাময়ীর একটা রিটার্ন চিঠি পেয়ে । সেই চিঠিতে আক্কাস আলীর প্রেমপত্রের সব ভুল বানানের লিস্ট দেয়া ছিল, আর নিচে লেখা ছিল, “দয়া করে ক্লাস ফাইভের বই দেখিয়া শুদ্ধ করিয়া লইবেন । ভবিষ্যতে টাকা চাহিয়া বাপের নিকট পত্র লিখিতে কামে দিবে” । এতবড় অপমান আক্কাস আলী সইতে পারলোনা । সে সাথে সাথে বুক চেপে ধরে মাটিতে চিৎপটাং হয়ে গেলো ।

কিন্তু আক্কাস আলী হাল ছাড়ার পাত্র নয় । তখন ডিসেম্বর মাস চলে, এলাকার সব ছেলেপেলেরা, থার্টির্ফাস্ট নাইটের প্রোগ্রাম নামানো নিয়ে ব্যস্ত । এ ধরণের কাজে আক্কাস আলী কে কখনো দুইবার ডাকতে হয়না, সে নিজ থেকেই সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজে লেগে যায় । এবার এলাকার সিনিয়র বেকার হিসেবে সে প্রধান সংগঠকের পদ দখল করে বসলো । কিন্তু কাজে তো তার আর মন বসেনা ।

ছেলেরা যখন ব্যান্ডপার্টি এনে ধুন্ধুমার প্রোগ্রাম করার জল্পনা কল্পনা করছে আক্কাস আলীর মাথায় তখন বিদ্যাময়ীর মনের বিদ্যা জানার ভুত চেপে বসেছে । অত:পর এক শুভ সকালে সেই ভূত আক্কাস আলী কে মুক্তি দিল । সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা আক্কাস আলীর জন্য এক রকম ব্যঙের সর্দি হওয়ার মতো ঘটনা । কিন্তু বিদ্যাময়ী বলে কথা, আক্কাস আলী সেই অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেখালো । খুব সেজেগুজে এক ভোরবেলায় সে বিদ্যাময়ীর বিদ্যাপীঠের সামনে দাড়িয়ে রইল ।

বিদ্যাময়ী তো ঘটনা দেখে হতবাক (বলাই বাহুল্য, আক্কাস আলী এলাকার নামকরা কুলাঙ্গার ছিল) । ঘটনা অন্যকোন দিকে মোড় নেয়ার আগেই আক্কাস আলী তড়িঘড়ি করে মুখস্ত করা লাইনগুলো ডেলিভারি দিতে লাগলো । "ইয়ে মানে বলছিলাম কি (আক্কাস আলীর কান দিয়ে গরম ভাপ বের হতে লাগলো) তুমি তো এলাকার সবচেয়ে ভালো স্টুডেন্ট, তাই তোমাকে আমাদের থার্টির্ফাস্ট নাইটের প্রোগ্রামে ইনভেন্ট করতে আসছি”" বিদ্যাময়ীর খিল খিল হাসির শব্দে আক্কাস আলীর র্নাভাসনেস আরো বাড়তে থাকে “"আক্কাস ভাই শব্দটা ইনভেন্ট না, ইনভাইট, আমি এইসব ফালতু প্রোগ্রামে যাই টাই না, আমাকে ইনভেন্ট বা ইনভাইট কোনটা করারই দরকার নাই । ” বলেই বিদ্যাময়ী হাঁটা শুরু করে" । আক্কাস আলীও মরিয়া হয়ে পেছন পেছন দৌড়ায়, "“বলছিলাম কি তুমি এত ভালো একটা ছাত্রী, এত ভালো রেজাল্ট করলা, তোমারে একটা সংর্বধনাও দিতে পারলাম না ।

তাই ভাবলাম এইবার থার্টির্ফাস্ট নাইটের সাথেই তোমারেও একটা সংর্বধনা দিয়ে দেই" । ” এইবার বিদ্যাময়ীকে যথেষ্ট উৎসাহী দেখায় । সে বলে, "কিন্তু অই অনুষ্ঠানে গিয়ে আমি করব কি"?” আক্কাস আলি এইবার ফাস্যাদে পরে, এত কিছু মুখস্ত করে তো আর আসেনি, মাথা চুলকিয়ে বললো, "ইয়ে মানে ছড়া কবিতা যা পার একটু বলে আসলে আর কি’"। বিদ্যাময়ী এইবার বাকবাকুম করে উঠে," “ছড়া কবিতা তেমন জানিনা, কিন্তু আমার লেখা একটা প্রবন্ধ আছে, ওটা পড়তে পারি"। আক্কাস আলির কাছে ছড়া, কবিতা, গদ্য, পদ্য সব একই রকম লাগে ।

কিন্তু অতকিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর টাইম কই? আক্কাস আলির মনটা ততোক্ষণে প্রেমের ময়দানে পাগলা গরুর মত লাফানো শুরু করেছে। অতঃপর সেই মধুরক্ষন এসে উপস্থিত। ধুন্ধুমার অনুষ্ঠান চলছে । গুটিকয় দর্শকের চেঁচামেচি আর হাততালিতে কানে তালা লেগে যাওয়ার দশা । দুইটা ব্যান্ড গানের পর এখন বিদ্যাময়ীর পালা ।

কাঁপা কাঁপা পায়ে বিদ্যাময়ী ষ্টেজে উঠছে । বিদ্যাময়ীর চোখে বিশাল সাইজ চশমা, কোঁকড়ানো কাল চুল , সেই বিশাল সাইজ চশমার ভেতর থেকে দুটি রাগী রাগী চোখ উকি দিচ্ছে । আক্কাস আলী খোলা চোখেই স্বপ্ন দেখা শুরু করে। বিদ্যাময়ী তার জ্ঞানী জ্ঞানী চোখ মেলে এক দৃষ্টিতে আক্কাস আলীর দিকে তাকিয়ে আছে। এক্ষুনি এসে যেন বলবে, “আক্কাস, apple বানান করত, পারনা, ছি ছি কি লজ্জার কথা, যাও এখখনি ষ্টেজে গিয়ে নীল ডাউন করে বসে থাক” ।

নীল ডাউনের চিন্তায় আক্কাস হঠাৎ মাটির দুনিয়ায় নেমে এল । বিদ্যাময়ী বিশ্বমন্দা নিয়ে একটানা কি জানি বলে যাচ্ছে । দুর্ভাগ্যবশত দর্শক সম্প্রদায়কে খুব একটা উৎসাহী দেখা যাচ্ছেনা । ধুমধারাক্কা গানের মধ্যে হঠাৎ বিশ্বমন্দা চলে আসায় তারা রীতিমত ক্ষিপ্ত । কেউ একজন পেছন থেকে বলে উঠলো, “বিশ্বমন্দা দিয়ে আমাদের মেজাজ গরম করার ধান্ধা করছে নাকি” ।

বিদ্যাময়ী বজ্রাহতের মত থেমে গেল । তার চশমার মোটা কাচেঁর পেছনের চোখগুলো একটু যেন ভিজে উঠল । আর সহ্য করা যায়না । বীর বিক্রমে উঠে দাড়াঁল আক্কাস আলি, সব কটাক্ষ উপেক্ষা করে ছুটে গেল সামনে । মারমুখী দর্শকের সামনে দাঁড়িয়ে একাই হাততালি দিতে লাগলো ।

বিদ্যাময়ী করুন চোখে তাকিয়ে রইলো আক্কাস আলির দিকে । অশ্রু ভেজা চোখগুলোতে কি তার জন্য ধন্যবাদ ? আনন্দে চোখে পানি চলে আসে, কান দুটোও বন্ধ হয়ে যায়। দর্শকদের সুমধুর(!) সম্ভাষণগুলোও কোন ব্যাকগ্রাউন্ড রোমান্টিক ইন্সট্রুমেন্টালের মত মনে হয়। কিন্তু এতো আনন্দ আক্কাস আলীর সইলোনা। সে আরেকবার মাটিতে চিৎপটাং হয়ে গেলো।

তবে সেটা বিদ্যাময়ীর ছোড়া মোহময় দৃষ্টিবানের কারনে নাকি কোন ক্ষিপ্ত দর্শকের ছোড়া পাদুকাদ্বয়ের আঘাতের সাইড ইফেক্ট, তা আজো রহস্যই রয়ে গেলো। ---------------------------------------------------------------------------------- এটা বেশ আগের একটি লেখা। বেশ কিছু অংশ পরিবর্তন করে আবার দেয়া হল।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.