মাঠে অনেক খেলোয়াড়ের স্টাইল দেখেই মুগ্ধ হন দর্শক। দর্শকমাতানো এসব খেলোয়াড়ের জীবিকার প্রধান অবলম্বন হচ্ছে খেলা। যেমন ফুটবল খেলায় সারা বছরই মেতে থাকে বিশ্ব। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের মতো প্রতিযোগিতায় দর্শক অপেক্ষা করেন বিশ্বসেরা তারকা কে হতে যাচ্ছেন কিংবা তাদের পছন্দের তারকাটি খেলছেন কেমন?
কিন্তু এই খেলোয়াড়দের তারকা বানান যারা, তাদের কথা আমরা কমই জানি। এমন একজন হচ্ছেন রোমান আব্রামোভিচ।
তিনি হলেন ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় ক্লাব চেলসির মালিক।
কে এই রোমান? চেহারার গড়ন অনেকটা ব্রিটিশদের মতো হলেও রোমান হচ্ছেন রাশিয়ান। তিনি রাশিয়ার ব্যবসায়ীদের শীর্ষে অবস্থান করছেন। এমনকি সারা পৃথিবীর ধনীদের তালিকাতেও আছেন ৫৩ নম্বরে। ২০০৩ সালে রাশিয়ার বিজনেস ম্যাগাজিন ‘এক্সপার্ট’ তাকে পার্সন অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করে।
যার হাতে পৃথিবীনন্দিত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসি আছে, এ মানুষটির জন্ম ১৯৬৬ সালের ২৪ অক্টোবর রাশিয়ায়, এক লিথুয়ানীয় পরিবারে। মাত্র দু বছর বয়সে তিনি মাকে হারান। কয়েক বছর পার হতেই রোমানের বাবা দুর্ঘটনায় নিহত হন। শৈশবেই জীবনের খেই হারিয়ে ফেলেন রোমান। এ অবস্থায় দাদা তাকে নিয়ে লালন-পালন শুরু করেন।
দাদা তাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনিস্টিটিউটে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানেই শিক্ষার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন রোমান। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পর্ব শেষ হলে তিনি মস্কোতে স্টেট অটো ট্রান্সপোর্ট ইনিস্টিটিউটে কাজ নেন। যদিও তার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ জীবন নিয়ে গুজব আছে যে, তিনি কখনো কোনো জায়গায় পড়াশোনা করেননি।
আশির দশকে মিখাইল গরবাচেভ রাশিয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসা করার অনুমতি দেন।
ঠিক তখনই রোমান ব্যবসা শুরু করেন। প্লাস্টিকের পাখি বানিয়ে তিনি মস্কোর বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতেন। কয়েক বছর যেতেই তিনি ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে শুরু করেন। ১৯৯২-১৯৯৫ সালে তিনি একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান। তবে সে ব্যবসা তাকে নিয়ে যায় তেল বিক্রির দিকে।
বদলে যেতে থাকে রোমানের জীবন।
এরই মাঝে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় বোরিস বেরেজোভস্কির সঙ্গে। বোরিসের কাছাকাছি গিয়েই রোমানের জীবন আরও বদলে যেতে থাকে। রাশিয়ার উচ্চমহলে বোরিসের কদর ছিল। বোরিসের সহায়তায় নিজের ব্যবসাকে আরও মজবুত করে নেন রোমান।
ফাঁকে বোরিসের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বোরিস ইয়েলৎসিনের সঙ্গেও খাতির জমিয়ে নেন।
বোরিসকে সঙ্গে নিয়েই ব্যবসার বিস্তার করতে শুরু করে রোমান। যদিও পরে এই বোরিসের সঙ্গেই তার দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। একসময় রোমানকে হুমকি দিয়ে বোরিস ব্যবসার সমস্ত কিছু ছিনিয়েও নিতে চান। সে সময় এক জনপ্রিয় পত্রিকা রোমান সম্পর্কে উল্লেখ করে বলে, ‘রোমান মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে ফায়দা নিয়ে তার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করে।
’
তবে এমন সব কথায় তিনি একবিন্দুও ঘাবড়ান না। তিনি এগিয়ে চলেন। এরই মধ্যে হঠাৎই একদিন শুনতে পেলেন ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় ক্লাব চেলসি বিক্রি করে দেবেন সে সময়ের মালিক কেন বেটস। উড়ে চলে যান ইংল্যান্ড। সঙ্গে সঙ্গেই কিনে নেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের জনপ্রিয় ক্লাব চেলসি।
চেলসি সম্পর্কে একবার রোমান বলেন, ‘খেলায় গোল হয় জেতার জন্য। গোল কখনো অর্থের জন্য হয় না। আমি চেলসি ক্লাব কিনে ফেলার চেয়েও অনেক বিপজ্জনক জায়গায় বিনিয়োগ করেছি। তবে আমি অর্থ ছুড়ে ফেলে দেইনি। খেলায় অর্থ দেওয়া মানে হলো, বিনোদন।
বিনোদনের মাঝেই সফলতার অনেক কিছু নির্ভর করে। ’
অর্থ অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় সজাগ থাকে রোমান। তার মনের বিশাল জায়গাজুড়ে আছে তার নিজের দেশের উন্নতি। তিনি রাজনীতিতেও অনেক সোচ্চার। রোমান হচ্ছেন পৃথিবীর একমাত্র ব্যবসায়ী যার সিকিউরিটি স্টাফকে বলা হয় ‘প্রাইভেট আর্মি’।
এমনকি নিজস্ব বিমানেও চলাফেরা করেন রোমান।
ছোটবেলায় মা-বাবা হারিয়ে যে ছেলেটির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে চলে যাচ্ছিল, সে ছেলেটি এখন পৃথিবীর ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম।
তার সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন, `আমি নেপোলিয়নের মতো বিশ্বজয়ের অবাস্তব স্বপ্ন দেখি না। আমি শুধুই একজন পরিশ্রমী এবং আশাবাদী মানুষ। `
সুত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।