মানুষ তার একজীবনে কত রকম আজব অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়েই না যেতে পারে, আগে থেকে তা কল্পনা করাও কঠিন বৈকি। কথাটি আমি বলছি সম্প্রতি আমার নিজের জীবনে দেখা এমন এক ঘটনার প্রেক্ষিতে।
আমার ভাইয়ের বিয়ের জন্য আমাদের মেয়ে দেখতে যাওয়ার কথা। তার দির্ঘর্দিনের পরিচয় সেই মেয়ের সাথে। তো এখন সময় এসেছে পারিবারিকভাবে ব্যাপারটিকে বিয়ের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
দিনক্ষন ঠিক হলে আমরা মেয়ের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। আমরা আগে থেকে জানতাম পরিবারটি একটি রক্ষনশীল পরিবেশ বজায় রাখে। কিন্তু কোন পর্যায়ের রক্ষনশীল তা জানতাম না।
যা হোক, বাড়িঘর দেখতে ভালই। ড্রয়িংরুমে বসা মাত্র প্রথম যে কাজটি তারা করলো তা হচ্ছে বাড়ির ভিতরে মহিলা অতিথীদেরকে নিয়ে গেলো।
সে বাড়ির কোনো নারী বাইরের পূরূষের সামনে আসেনা। ভাবলাম, হতে পারে। এমন পরিবার তো দেশে আছেই। কিন্তু কারো সাথেই দেখা হলোনা ব্যাপারটা মনে একটু খচখচ করলো।
বাড়ির সব পূরুষ সামনে এসে ঘিরে বসলো।
সবারই মখে বেশ লম্বা দাড়ি। পরনে গোড়ালি পর্যন্ত পাঞ্জাবি। মেয়ের বাবা আর ছোটোভাই মাত্র ৬ মাসের চিল্লা দিয়ে ফিরেছে আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে। কথাবার্তা , প্রশ্ন শুরু হলো। এখনই শুরু আসল অভিজ্ঞতা, সেদিনের কোনো কথাই তারা কয়েকটি বিষয় ছাড়া বলেননি- তাবলিগ, চিল্লা, তালিম, সময় লাগানো, পর্দা, পরকাল ইত্তাদি।
দেড় ঘন্টার আলাপে বিয়ের ব্যাপারে, তারিখের ব্যাপারে, ছেলের কাজ কি করে, ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি, বাড়ি কোথায় – এইরুপ কোনোপ্রকার জীবন সম্পর্কিত স্বাভাবিক কোনো কিছু জানার আগ্রহ তাদের ছিলনা।
আমি নিজেকে খুবই ধার্মিক বলবনা কিন্তু ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ার চেষ্টা ঠিকই করি। কিন্তু, বলতে হয় প্রশ্নগুলি এমন ছিলো যার কোনো উত্তরও আমাদেরও জানা ছিলোনা। যেমন-
“কবে শেষ চিল্লায় গিয়েছো?”
“বাসায় মা-বোনের সাথে তালিমে বসো?”
“কি শিখেছো সময় লাগিয়ে?”
“next কবে সময় লাগাবে?”
“বিয়ের পরে পর্দায় কোনো সমস্যা নেই তো?”
“তোমার মা-বোন কি পর্দা করা শুরু করবে?”
বলাবাহুল্য বাকি সব প্রশ্ন ছিলো একই প্রসঙ্গে। এই যদি থাকে বাইরে আমার অবস্থা তাহলে ভিতরে কি হতে পারে একবার চিন্তা করুন তো?
আমার মা আর বোন ভিতরে যাওয়ার পরে বাসার অবস্থা দেখে স্তম্ভিত।
বাসায় পুরু মোটা কাপড়ের পর্দা লাগানো যা মনে হয়না শেষ কয়েক বছরে খোলা হয়েছে আদৌ। জানালা দিয়েও কখনো বাতাস ঢুকেনি বাসার ভিতরে। সব রুমে স্তুপ করা অঢেল সংখ্যক জায়নামায আর তসবিহ। একেকটি তসবিহ প্রায় ফুটবলের সাইজের কাছাকাছি। কত দানা থাকতে পারে? ২০০০? ৫০০০?
ভিতরে আমার মা কেও জীবনভিত্তিক কোনো কথা বলা হয়নি।
তাদের সাফ কথা এই জীবন কিছুই না, সব কিছু পরকালের জন্য। বাসার সব নারীসদস্য বাসার ভিতরেও কঠিন হিজাব পরে থাকে সবসময়। বাসার কোনো অংশে কোনো আলো ঢুকতে পারেনা। যাই হোক, তাদের অসবাভাবিক জীবনের কিছু চিত্র তুলে ধরলাম-
- বাসার কোনো পুরুষ সদস্য মহিলাদের সামনে কখনও আসেনা।
- খাওয়া সবসময় আলাদা।
পুরুষ মহিলা একসাথে খায়না কখনো।
- বাড়ির ছেলের বৌরা(৩ জন) কখনো তাদের শ্বশুর, দেবর, ভাসুর, ননদের স্বামীকে কখনো দেখেনি।
- মেয়ের মা তার মেয়ের জামাইকে অনেক বছর ধরে দেখেনি, একসময় একই বাসায় থাকলেও।
- মেয়ে তার বোনের জামাইকে ৯ বছরে কখনো দেখেনি।
- তাদের বাসায় কখনো শার্ট, গেঞ্জি, প্যান্ট এইরুপ কিছু পরা হয়না।
বাসায় ১ বছরের এক শিশুর জন্যও না। শুধু পাঞ্জাবী পায়জামা।
- মেয়েরা তাদের পুরুষ cousin দের সামনে আসেনা।
- মেয়ের বড় বোনের কথা- “জন্মনিয়ন্ত্রন ঠিক না। আল্লাহ নারাজ হয়।
আমাদের তা আটকানো ঠিক না। আমাকে আল্লাহ বখশিশ দিয়েছেন, ৪ জন। ” She has a degree called M.B.B.S .
- তাদের বাসায় কদমবুছি নিষিদ্ধ। ঈদে সালামী দেয়া হয়না।
- বিয়ে ছাড়া ছেলে মেয়ের দেখা করা কবীরা গুনাহ।
- No dinig table.
- এই বাড়ির বাকি কোনো বিয়ের আগে ছেলে মেয়েকে দেখেনি। বিয়ের কোনো অনুষ্ঠান হয়নি, যদিও তারা সম্ভ্রান্ত পরিবার।
এছাড়া বাকি সবসময় তো তাবলিগের বাণী আর পর্দার উপদেশ তো আছেই। বাড়িঘরের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে নাহয় নাই বললাম, বলার মতো না। ছেলে কি কাজ করে শুনতে চায় না কারন আল্লাহ আছে আল্লাহ খাওয়াবে।
প্রযুক্তিগতভাবে ক্রম অগ্রসর এই বিশ্বে এখনও এই ধরনের একটি পরিবার ঢাকা শহরে বাস করে, নিজের চোখে না দেখলে কোনোভাবেই বিশ্বাশ হতোনা। এই বাড়ির কেউ না কেউ সবসময় থাকে লম্বা সময়ের জন্য বাসার বাইরে পরিবার পরিজন ফেলে। বাসার সবাইমিলে একসাথে জীবন কাটানোর মানুষের যে স্প্রিহা, এ থেকে তারা সম্পুর্ন বঞ্ছিত। রখনশীল পরিবার আমরা আগেও অনেক দেখেছি কিন্তু এইরকম কখনো শোনাও যায়নি আগে। এ কি ধর্ম আমাদের শিখা দেয়? এইরকম জীবনযাপন?
আমার প্রশ্ন হলো, উপোরোক্ত কথাগুলি কি কোনোভাবে একটি স্বাভাবিক পরিবারের চিত্র হতে পারে? মতামতের অপেক্ষায় থাকলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।