আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি প্রশ্নবোধক সময়ের গল্প

আমি একজন অতিসাধারণ মানুষ, স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। স্বপ্ন আছে বলেই এখনও বেঁচে আছি ব্যস্ত সময় কাটছে, চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভয়, আশঙ্কা। সর্বত্র ভাঙন আর বিচ্যুতির সমাহার। কোথাও একটু থেমে যে জীবন নিয়ে ভাববো, প্রিয় কোন মুখের সুখ কল্পনায় সময় কাটাবো তার কোন উপায় নেই। কেমন যেন একটা ভীতি নিয়ে বসবাস করছি আর ছুটে চলছি প্রতিনিয়ত, এখানে থামার অর্থ মৃত্যু।

আমরা যারা প্রবাসে থাকি তাদের একটি বিলাসিতা হল, প্রতিদিন দু' একটি বাঙলা সংবাদপত্র পড়া, দেশের মানুষের খবর নেয়া। এখন ঢাকায় বৃষ্টি হলে সামাজিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমি যেন সেই বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করি! কারো সাফল্যের খবর শুনে এতো ভাল লাগে, আবার খারাপ কিছু শুনে বিচলিত হই। পরিস্থিতির সামনে থেকে কোন দিন পালাতে শিখিনি তাই বুঝি ব্যাকুলতা এত বেশি, আশঙ্কা হয়, তবু আশাবাদ ভুলিনা। সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনা আমার কাছে বিশেষ বার্তা বহন করে; তা নিয়েই আজকের লেখা। ১. অতিসাম্প্রতিক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রান হারান চলচ্চিত্রকার তারক মাসুদ, সাংবাদিক মাশুক মুনীর এবং আরো তিনজন।

দূর্ঘটনাতো দূর্ঘটনাই। কিন্তু আমাদের জীবনে এটি খুব সহজলভ্য হয়ে পরেছে সেটাই ভয়ের কথা। এই দূর্ঘটনার কারনে কয়েকজন মহামানবের সাথে আমাদের পরিচয় হলো; তাদের একজন যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব আবুল- যিনি দূর্ঘটনার জন্য ড্রাইভারকে দায়ী মনে করেন, আবার নৌ- পরিবহন মন্ত্রী জনাব শাহজাহান ড্রাইভারদের কোন দোষ ই দেখতে পান না বলে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেবার আগেই লাইসেন্স পাইয়ে দেবার ব্যাবস্থা করেন। আমি জানি এটি প্রথম বা শেষ দূর্ঘটনা নয়। বছরের পর বছর পরিবহণ খাতটি সেবা দেবার পরিবর্তে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে অথচ কারো কোনো ভাবনা নাই, প্রতিবার সরকার গঠন হয় আর একটি বিশেষ প্রানীকে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

ক্যালেন্ডারের পাতা বদলে যায় শুধু সড়কের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন হয় না। এভাবে আর কতদিন? ২. সামাজিক নেটওয়ার্ক ফেইসবুক 'এই মুহূর্তে আমার মনে কি আছে' এই একটি প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে দিয়ে অনেক আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করতে সাহায্য করছে। আমার ভালো লাগার বিষয়টি হল- এখানে ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক বিষয়েও একটি সন্মিলিত সচেতন অবস্থান লক্ষ্য করা যা্য। কিছুদিন থেকেই ফেইসবুক এ দেখতে পাচ্ছি ক্রমাগত হতাশার কথা, আবার তাতে আশার আলো ও দেখতে পাই। সম্ভবত সময়ের সবচেয়ে সচেতন সমাজ এই ফেইসবুক।

কিছু ঘটলো আর সেখানে স্ট্যাটাসের বন্যা শুরু হয়ে গেলো। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে দু'একটা জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দিলাম এবং মনে মনে সুখ পেতে থাকলাম এই ভেবে যে আমি আমার আমার দায়িত্ব পালন করেছি! এভাবেই কী আমারা সামাজিক নিষ্ক্রয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছি? এই সেই ফেইসবুক যেখানে বলবে, আপনি সাংঘাতিক ভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন; আপনি কোন মাত্রায় আপনার ক্ষোভ প্রকাশ করতে চান? ৩. আমদের অনেক সমস্যার একটি হলো,আমরা নিজেদের অজান্তে আমাদের প্রাপ্তিগুলোকে সুবিধাভোগীদের হাতে তুলে দিয়ে, সবকিছুর জন্য ঢালও ভাবে রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করছি। যা কিছু ঘটছে তার ষোলআনা না হলেও কয়েক আনার দায়ভাগ তো আমাদেরই। আবার নির্বাচনের ফলাফল যেমনই হোক না কেন সংসদ কার্যকর হয় না। তাহলে আমরা যে মত প্রকাশ করলাম তার মূল্যয়ন হলো কি? বসবার আসন সামনে না পিছনে ( খুব ছোটবেলায় স্কুলে যেমন করতাম) তার জন্য বিরোধীদলের সংসদ বর্জন! সম্মানিত বিরোধী দল, আপনাদের আমরা এ কারনে ভোট দিয়েছি আপনারা আইন প্রনয়নে ভূমিকা রাখবেন, সরকারের সমালোচনা করবেন, ভুল ধরিয়ে দেবেন, আপনাদের কাজের মূল্যয়ন জনগন করবে।

অথচ আপনারা সংসদে না গিয়ে কী এটাই প্রমান করলেন না যে জনগণের উপর আপনাদের আস্থা নেই? ৪. বেশ কিছু সরকারের সময় লক্ষ্য করছি প্রতিবার কিভাবে যেন কিছু অযোগ্য লোক মন্ত্রিসভার সদস্যপদ পেয়ে যান! এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি; এবং এইসব কর্মবীরদের তৎপরতার কারনে পরবর্তী নির্বাচন দুঃস্বপ্নময় হয়ে ওঠে। নিচে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই যেগুলোকে আগামি নির্বাচনের নির্ধারক হবে বলে মনে করছি; ক. দ্রব্য মূল্য ক*. যুদ্ধাপরাধের বিচার খ. আইন শৃংখলা গ. বিদ্যুত ব্যবস্থা ঘ. সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা ঙ. উন্নয়ন খাত চ. শেয়ার বাজার চাইলে এ তালিকা আরো লম্বা করা যেতে পারে তবে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো উপরের বিষয়গুলোর জন্য আমরা অনেকেই হয়তো আগামি নির্বাচনে ভোটের সিলমোহরটি অন্য প্রতীকে দিয়ে আবারো কিছু অযোগ্যকে মন্ত্রী হবার সুযোগ করে দেবো। দুঃখের কথা এই যে নিকট ভবিষ্যতে এইসব অযোগ্য, চাটুকার, স্বার্থপরদের মিছিলে ছন্দপতনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে; আশার কথা -এই যে আমার ভাবনা, এটি আজ অনেকেরই মনের কথা। ৫. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পরপরই চাটুকার বেষ্টিত এক দূর্ভদ্য দেয়াল তুলে দেন আর তা ভেদ করে আমজনতার সুখ- দূঃখ, চাওয়া- পাওয়ার কথা তাদের কানে পৌঁছে না। আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়েছে আমদের সরকারগুলোর ব্যর্থ হবার অন্যতম কারন- জনবিচ্ছিন্নতা।

আমাদের প্রতি তাদের আচরন এ কথা মনে করাতে বাধ্য করে যে তারা আমাদের আবেগ, অনুভূতির তোয়াক্কা করেন না, বরং পণ্যের মত ব্যবহার করতে চান। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, একবার জনগণের কাতারে নেমে এসে দেখুন, আমরা কীভাবে বেঁচে আছি। আমদের কথা না হয় নাই ভাবলেন, প্রিয় শেখ হাসিনা, আপনার কি মনে পরে আপনি সর্বশেষ কবে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেছেন, আপনি কি বলতে পারবেন খালি পায়ে গ্রামের মেঠো পথে হাঁটতে কেমন লাগে; আপনি বলতে পারেন শিশির ভেজা শিউলি মালার স্পর্শ কেমন লাগে কিংবা আপনি জানেন কি নিউ মার্কেটের ফুচকার স্বাদ কেমন। আপনি আমার প্রশ্নে হাসতে পারেন, আচ্ছা বলুন তো শেষবার কবে আপনি আপনার প্রিয় বান্ধবীকে তার জন্মদিনে নিজে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, এখানেই শেষ নয়, বলবেন কি, কবে শেষবার কবিতা পড়েছেন অথবা প্রিয় কোন গানের কথা গুনগুন করে গাইবার চেষ্টা করেছেন? আমি জানি আপনার হাতে এসব কোনটির জন্য সময় নেই। আমার ভাবতে ভালো লাগে আমাদের আমাদের প্রধানমন্ত্রী হবেন এমন- যিনি কবিতা পড়েন, গান শোনেন, কোথাও যাবার পথে গাড়ি থামিয়ে ঝিলের জলে শালুক তোলা কিশোরীর স্বপ্নের কথা শোনেন, বৈশাখের প্রথম প্রহরে আমাদের সাথে রমনা বটমূলে যান, মোটের উপর তার একটি সহজ সরল জীবন আছে প্রিয় শেখ হাসিনা, আপনি কি বুঝতে পারছেন, আপনি সব কিছু পাচ্ছেন আর তার বিনিময়ে আপনার মানবীয় জীবনটি হারিয়ে ফেলছেন? অন্যদের কথা জানিনা, আমার মনের গভীরে আপনার জন্য কিছু কষ্ট তোলা রইলো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.