বাংলাদেশে বন্দি আসামের উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিতে সম্মতি জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই তাকে ভারতের হাতে তুলে দিবেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যে এমনটি আবাস পাওয়া গিয়েছে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার সফরে এসে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার দাবি আদায় করে গেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম।
এখন কথা হচ্ছে, অনুপ চেটিয়া সাধারণ কোনো বিদেশী নন। তাকে শুধু অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিবেচনা করলেও চলবেনা।
আসামের স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন উলফা’র সাধারণ সম্পাদক তিনি। দিলির বৈষম্যের শিকার অহমীয়রা ১৯৭৯ সালের এপ্রিল থেকে উলফার নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ চালাচ্ছে। অনুপ চেটিয়া তাদের নেতা। অর্থাৎ তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা। তাই অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিলে রাজনৈতিক বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
তা না হলে বাংলাদেশের জন্য বিপদও হতে পারে। ভারত ও আসামের ভবিষৎ যুদ্ধের মধ্যবর্তী ময়দানে পরিনত হওয়ার সম্বভাবনা আছে।
১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকার তাকে তখনই ভারতের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গ্রেফতারের খবর প্রকাশিত হয়ে পড়ায় এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠায় পারেনি।
পরে অনুপ চেটিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি পৃথক মামলায় তাকে মোট সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কারাদন্ডের মেয়াদ শেষ হলেও তার মুক্তি বিলম্বিত হওয়ার কারণ, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়ার জন্য আবেদন করেছে। এ সম্পর্কিত রিট আবেদনের এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
বন্দি নেতা অনুপ চেটিয়া আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, ভারতের কাছে তুলে দেয়া হলে ভারত সরকার সাজানো মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে হত্যা করবে। এ কারণে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার অর্থ হবে বিশ্বের দেশে দেশে চলমান মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী রাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে এ ধরনের পদপে বিশ্ববাসী আশা করে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে স্বারকারী রাষ্ট্র হিসেবেও বাংলাদেশ অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিতে পারে না। উলেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অনুপ চেটিয়া আসামে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশীদের সর্বতোভাবে সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং তার মতো বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু ও স্বাধীনযোদ্ধাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে না।
২০০৯ সালে অরবিন্দ রাজখোয়া, শশধর চৌধুরী ও চিত্রাবন হাজারিকাসহ কয়েকজন উলফা নেতাকে গ্রেফতারের পর সরকার নাটক সাজিয়েছিল। বলেছিল, তারা নিজেরাই নাকি বিএসএফের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন! অনুপ চেটিয়াকে নিয়ে এধরনের নাটকা কামন্য নই।
অনুপচেটিয়াকে ভারতে হাতে তুলে দেয়া যেতে পারে। তবে এজন্য তাড়াহোড়া না করে বিষয়টি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাধানে যাওয় উচিত। তাকে একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মুক্ত অনুপচেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিতে হবে।
যাতে ভারত সরকার কোন ষড়যন্ত্র করে অনুপচেটিয়াকে হত্যা না করতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।