যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য
হ, শাহরিয়ার ভাই, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া সহ সব মুসলিম দেশেই কেবল জঙ্গি উৎপাদন হয়, এদের ধর্মীয় জঙ্গিবাদে সারা বিশ্বের নিরাপত্তা ধ্বংসের মুখে! আপনি তো দেখি জর্জ বুশ, টনি ব্লেয়াররেও হার মানাইছেন! আপনার এই চমৎকার আবিষ্কারে “ওয়ার অন টেরর” প্রজেক্টের কুশীলবরাও বোধ করি হেসে খুন হয়ে যাবেন!
আমি ইতিহাসের আলোচনায় যাব না, আমি বলব না প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কারা ঘটিয়েছিল, কথিত উগ্র জাতীয়তাবাদী ইউরোপীয় আর মার্কিনীরাই, সেই যুদ্ধে কোটি মানুষ হত্যা আপনের চোখে জঙ্গিবাদ নয়!
আমি বলব না উপনিবেশিক আমলের ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের (ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, ব্রিটেন, পর্তুগাল) দেশে দেশে জঙ্গি হামলার কথা (Militancy), এশিয়া, আফ্রিকার দেশগুলোতে মিলিটারি হামলা চালিয়ে সব লণ্ডভণ্ড করে দেয়ার কথা, আপনের কাছে তারাও জঙ্গি নয়।
আমি একেবারে হালের চলমান ইতিহাসের দিকে আপনারে মুখ ফিরাতে বলব-
রাসায়নিক অস্ত্র রাখার মিথ্যা অজুহাতে আর কথিত জঙ্গি আল কায়েদার সাথে সখ্যতার অপরাধে সাদ্দামের ইরাকে ইঙ্গ মার্কিন ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ আপনার চোখে জঙ্গিবাদ না, ইরাকের ১০ লক্ষ লোক হত্যা করে আর ইরাকি সভ্যতার নিদর্শন সব ধ্বংস করে কিংবা লুট করে নিয়ে গেলেও পশ্চিমারা আপনের চোখে জঙ্গি না, আপনের চোখে তারা সভ্যতা আর গণতন্ত্রের ধারক বাহক! আপনে পশ্চিমাদের লাগানো দূরবীন দিয়ে খালি ইরাকে আল কায়েদার মত জঙ্গি খুঁজে বেড়াতে পারেন!
আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের জঙ্গিরা কাদের সৃষ্ট তা আপনে ভাল করেই জানেন, ৭৯ তে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতরে ঠেকাইতে আপনের মুক্তিদাতা আম্রিকা যে অস্ত্র দিয়ে তালেবানদের বাহিনী তৈয়ার করেছে তা আপনে ভুলে যান কেমনে? যে তালেবানরে আম্রিকা বানাইল সে তালেবান যখন আম্রিকার কথা না শুইনা বেঁকে বসল, আফগানিস্তানের উপর দিয়ে মধ্য এশিয়ায় যখন তেলের পাইপ (সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠনের জন্য) দিতে সায় দেয় নাই তখনই বৃহৎ জঙ্গি আম্রিকা তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে লাগাতার জঙ্গি হামলা করে দেশটারে শেষ কইরা দিল। তালেবান জঙ্গি আমি মানলাম, কিন্তু জঙ্গিদের গডফাদার আম্রিকারে জঙ্গি কইতে আপনের এত কষ্ট কেন? যে আম্রিকা এসব ক্ষুদে জঙ্গিদের উৎপত্তির দায়ে অপরাধী আপনে এখন তার কাছেই ধর্না দেন জঙ্গিবাদ দমনের লাইগা, ইতিহাসের সেরা মস্করার আর জায়গা পান নাই?
পাকিস্তানের কথাও আনলেন আপনে। পাকিস্তানের উপজাতি (আদিবাসি বলাই উত্তম) অধ্যুষিত এলাকায় আফগানিস্তান এর উগ্রপন্থি জঙ্গি (যারা আম্রিকার আফগান হামলার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট) তৎপরতা রোধে আম্রিকার ড্রোণ হামলায় যখন হাজার হাজার নিরীহ বেসামরিক লোকজন মারা যাচ্ছে তখন আপনে কারে জঙ্গি বলতাছেন? আম্রিকার ফ্রাংকেনস্টাইন আফগান জঙ্গিরা আম্রিকারই তৈরি, তারে দমন এর নামে যখন নির্বিচারে পাকিস্তানে ওবামা জঙ্গি হামলা চালায় আপনে তখনও আম্রিকারে জঙ্গি কইতে পারেন না! আপনের কষ্ট লাগে!
গাদ্দাফির লিবিয়ায় নাকি জঙ্গিরা বাসা বাঁধছে মানে ওখানে আল কায়েদা সক্রিয় এই অজুহাতে আম্রিকা, ফ্রান্স, ইটালি যখন ন্যাটোর মাধ্যমে মিলিটারি জঙ্গি হামলা চালাইয়া দেশটারে ধংস কইরা তেলসম্পদের ভাগবাটোয়ারা শুরু করে দিল, আপনে এসব আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের জঙ্গি বলতে পারেন না! সাদা চামড়ার পশ্চিমা জঙ্গিদের জঙ্গি বলা যাবে না কারন তারা গনতন্ত্রের ফেরিওয়ালা! মিলিটারি গণতন্ত্র যে জঙ্গিবাদেরই অপর নাম তা আপনাদের বুঝাবে কে?
সিরিয়ায় আপনের সভ্যতার পূজারী পশ্চিমা শক্তি মানে আম্রিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স তার আরবীয় দালাল সৌদি আরব, কাতার যখন আল কায়েদারে অস্ত্র দিয়া “ফ্রি সিরিয়ান আর্মি” তৈরি কইরা আসাদ সরকাররে উৎখাতের জন্য যুদ্ধ বাধাই দিল, তখনও আপনের কাছে মনে হইতে থাকবে পশ্চিমা শক্তি গুলা জঙ্গিবাদী না, যেই আল কায়েদার জঙ্গিবাদের জুজু দেখাইয়া আম্রিকা আপনেগো মত লোকদের চোখে ধুলা দিতেছে সেই আল কায়েদারে তারা সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনে অস্ত্র অর্থ দিয়া লালন পালন করতাছে!!
মালির বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে জঙ্গি আখ্যা দিয়ে জঙ্গি দমনের দোহাই দিয়ে মালির তেল, সোনা ও ইউরেনিয়ামসহ নানা খনিজ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ হাতিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী আজ যখন গ্রামে গ্রামে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তখন এইসব আগ্রাসি দখলদারদের জঙ্গি হামলাকে আপনের দর্শনে জঙ্গিবাদি মনে হবে না! আপনে পশ্চিমা আর ইউরোপীয় মিডিয়ার প্রোপাগান্ডায় একদেশদর্শী হয়ে খালি মালির বিদ্রোহীদেরই জঙ্গি কইয়া যাবেন, গণহত্যাকারি দখলদার পশ্চিমা বাহিনী জঙ্গি না আপনের কাছে, আপনের কাছে তারা মুক্তি আর স্বাধীনতার সূর্য-সৈনিক!
ইয়েমেনে আম্রিকার অনুগত শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যখন আরব বসন্তের গণজাগরণ শুরু হইল, তখন ইয়েমেনের উগ্রপন্থি আল কায়েদা দমনের নাম কইরা আম্রিকার নির্বিচার ড্রোণ হামলা চলতে থাকলো! আপনে কারে জঙ্গি কইবেন, আপনে আম্রিকার জঙ্গি হামলারে লুকাই রাইখা আল কায়েদারে জঙ্গিবাদের দায়ে অভিযুক্ত করে তৃপ্তির ঢেঁকুরই তুলতে থাকবেন!
আজকের ৯/১১ এর পরবর্তী নতুন বিশ্ব কাঠামোতে যারাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে তাদেরকেই পশ্চিমা মিডিয়া উগ্রপন্থি জঙ্গিবাদী বলে চিহ্নিত করে তাকে দমনের আইনি এবং নৈতিক বৈধতা আদায় করবে। যেমন হামাস, হিজবুল্লাহ সহ প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জঙ্গি বলে যাচ্ছে পশ্চিমা মিডিয়া।
আবার সত্যিকারের কিছু জঙ্গি গোষ্ঠী যে আছে তা অস্বীকার করার কোন ফুরসৎ নেই কিন্তু এদের জঙ্গিবাদী বলে বিশ্ব মিডিয়া তোলপাড় করলেও এদের প্রতিরোধে সাম্রাজ্যবাদীরা যে নিজেরাই বড় জঙ্গিবাদের আশ্রয় নিচ্ছে তা আমরা খেয়াল করছিনা, মালির ব্যাপারটা তো দেখতেই পাচ্ছি জঙ্গি দমনের নামে ফ্রান্স এবং আমেরিকা নিজেরাই জঙ্গি হামলা করল মালিতে, ফলে আমরা কিন্তু more powerful militant imperialist দের জঙ্গি বলছি না, আমরা জঙ্গি বলছি ক্ষুদে জঙ্গিদের যেই ক্ষুদে জঙ্গি তৈরি হইছে আবার সাম্রাজ্যবাদীদের অবাধ লুণ্ঠন আর মিলিটারি জঙ্গি আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায়। অর্থাৎ সমকালিন বৃহৎ জঙ্গিবাদিদের জঙ্গিপনাকে আড়াল করে কেবল ক্ষুদে জঙ্গিদের তিরস্কার করার এক ধরনের একদেশদর্শী প্রবনতা লক্ষণীয়। এরেই কয় জ্ঞানের ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়ন অর্থাৎ “পশ্চিম হাজারো জঙ্গিপনা করলেও তারে জঙ্গি কওয়া যাবে না, আর পশ্চিমেরই আধিপত্যবাদ, সাম্রাজ্যবাদ আর আগ্রাসনের বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট আফ্রো-এশিয় কিংবা ইসলামপন্থী উগ্রপন্থিদের যে কোন তৎপরতাকেই জঙ্গিবাদ বলে তাবৎ মিডিয়ায় প্রোপাগান্ডা চালিয়ে এসব উগ্রপন্থিরা যেসব দেশে অবস্থান করে সেসব দেশে নির্বিচার সাম্রাজ্যবাদী হামলা চালাবার মতাদর্শিক অধিকার আদায়। জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত এই ইউরোপীয় হেজিমনিক ডিসকোর্স সারা দুনিয়ার দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদীদের সমস্ত আগ্রাসন আর লুটপাটকে বৈধতা দেয়ার জন্য নিরাপত্তা, গণতন্ত্র আর সভ্যতা সুরক্ষার জুজুর ভয় দেখায়, কার নিরাপত্তা? কার গণতন্ত্র? কার সভ্যতা? অবশ্যই পশ্চিমের! উপনিবেশিত আর নয়াউপনিবেশিত জ্ঞানকাঠামো ( Colonial and Post Colonial discourse) আপনের মত এরকম হাজারো বুদ্ধিজীবী তৈয়ার করে যারা ভাবে “ প্রাচ্য হচ্ছে গতিহীন, প্রগতিহীন, স্থবির, বর্বর, সমাজের প্রতিভূ মানে জঙ্গিবাদের কারখানা; আর পাশ্চাত্যই প্রগতিশীলতা, সভ্যতা, উন্নয়নের প্রতিভূ”। জঙ্গিবাদ নিয়ে এখন পশ্চিমারা যে ডিসকোর্সের অবতারণা করতাছে তা মূলত প্রাচ্যবাদ ( Orientalism) এরই বুশীয় উত্তরআধুনিক সংস্করন যা পশ্চিমের প্রাচ্যকে পদানত করার এক আধিপত্যবাদী স্পৃহাকে উদোম করে দেয়।
আপনে ইউরোপীয় ডিসকোর্সের এই অন্ধ অনুকরণ করে যে ইসলামোফোবিয়ার যে তত্ত্ব ফেরি করে বেড়াচ্ছেন তা আপনাকে যে পশ্চিমের “ওয়ার অন টেরর” এর বিশ্বস্ত ধর্মপুত্রে পরিণত করেছে তা বলাই বাহুল্য।
আপনে উগ্র ধর্মীয় জঙ্গিবাদীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে সিনেমা বানান, আমার আপত্তি নাই, ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়বার প্রয়োজন আছে, তা আমাদের স্বার্থেই আমাদের করতে হবে। কিন্তু উপরে আমি ইউরোপীয় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির জঙ্গিবাদের যে খতিয়ান দিলাম তারে নিয়া সিনেমা বানাইতে আপনের আপত্তি কেন? কিন্তু যদি পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের জঙ্গিপনাকে আড়াল কইরা, বিশ্বব্যাপী তাদের অত্যাধুনিক মিলিটারি আগ্রাসনকেন্দ্রিক জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্করে লুকাই রাইখা আপনে যদি কেবল মুসলিম দেশগুলার উগ্রপন্থিদের জঙ্গিবাদী বলে চিহ্নিত করে একের পর এক “দ্য পোট্রেইট অফ জিহাদ” (যেখানে বাংলাদেশের ভেতরে উগ্র ইসলামপন্থিদের কার্যকলাপ দেখানো হয়েছে), “জিহাদ উইথাউট বর্ডার” (যেখানে তিনি মূলত আলোকপাত করেছেন পাকিস্তানে ধর্মীয় মৌলবাদিদের জঙ্গি রূপ সম্পর্কে)বানাইতে থাকেন তাইলে কারোরই আর বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না যে আপনে এখন জর্জ বুশের যুদ্ধপুত্র হিসেবে নিজেরে অধিষ্ঠিত করেছেন, মানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের “ওয়ার অন টেরর” প্রোজেক্টের একজন বঙ্গদেশীয় মতাদর্শিক সৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। তো এইসব সিনেমা আবার বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদ ও জঙ্গিবাদের পবিত্র ভূমি ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রদর্শনীর পর ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে আপনে বলে উঠেন, “জঙ্গি জিহাদিদের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে কাজ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা , আর্থ-সামজিক অগ্রগতি এবং সভ্যতার নিদর্শনগুলো সব কিছুর জন্যে একটা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই নেটওয়ার্ক; বাংলাদেশ , পাকিস্তান কিংবা ইন্দোনেশিয়া , মিশর কিংবা তুরস্ক যে রাষ্ট্রের কথাই বলুন না কেন , এই ছবিগুলো নির্মাণের ভেতর দিয়ে তিনি চেষ্টা করছেন সেই সব দেশের প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোকে সমন্বিত করার।
আর এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গেও সম্পর্কিত। “ সবশেষে জঙ্গি মৌলবাদ দমনে আমেরিকার সহায়তা কামনা করে আপনে বলেন এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারে"। [সুত্রঃ Click This Link
বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের অত্যাধুনিক মিলিটারি আগ্রাসনকেন্দ্রিক জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্ক যে “ওয়ার অন টেরর” এর আড়ালে দেশে দেশে (ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, লিবিয়া, সিরিয়া, মালি......) আগ্রাসন, গণহত্যা, লুণ্ঠন চালিয়ে যাচ্ছে তাতে করে আপনের কি মনে হয় না এইসব দেশের আর্থ-সামজিক অগ্রগতি ব্যাহতই না শুধু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে নিমিষেই? আপনের কি মনে হয় না এইসব দেশের সভ্যতার নিদর্শনগুলো ধংস হয়ে যাচ্ছে নির্বিচার বোমা হামলায়? আপনের কি মনে হয় না এর মধ্য দিয়ে দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল শাসক গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসীন হয়ে জনগণতন্ত্রের বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়ার শর্ত তৈরি হচ্ছে? তাইলে “পশ্চিমা অত্যাধুনিক মিলিটারি আগ্রাসনকেন্দ্রিক জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্ক” এর বিরুদ্ধে না গিয়ে আপনে কি করলেন? আপনে ইসলামী (?) জঙ্গিবাদের দমনের জন্য সাহায্য চেয়ে বসলেন পশ্চিমা জঙ্গিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের হোতা আম্রিকার কাছে!বাংলাদেশি জঙ্গিদের দমনে বা প্রতিরোধে আম্রিকার সাহায্য কামনার কি অর্থ হতে পারে- মানে আপনে বাংলাদেশরে আম্রিকার “ওয়ার অন টেরর” বা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের পরবর্তী ক্ষেত্র বানাতে চান? সেজন্যই আপনে আম্রিকার মাটিতেই সিনেমা প্রদর্শন করে তাদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে বাংলাদেশ জঙ্গিপনায় ভইরা গেছে, এখনই বাংলাদেশের জঙ্গি দমনে আম্রিকার সাহায্য দরকার!
জনাব কবির, আপনার জানা আছে বাংলাদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার বিভিন্ন দিক বর্তমানে কি পরিমান ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের ৫৫% গ্যাস এখন মার্কিন কোম্পানি শেভ্রন এর দখলে। আর বঙ্গোপসাগরের গ্যাস ব্লকসমূহের অধিকাংশ মার্কিন কোম্পানি কনকোফিলিপস এর কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে।
উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) অনুযায়ী ৮০% গ্যাসের মালিকানা এসব মার্কিন কোম্পানির! সম্প্রতি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট (টিকফা) চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ চুক্তির মাধ্যমে এদেশের বাজার পুরাপুরি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানির দখলে নিয়ে যেতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া এ অঞ্চলের গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিপুল জ্বালানি সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিককালে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের নৌবাহিনীর উত্তরোত্তর প্রভাব বৃদ্ধি এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক স্বার্থের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে । সে কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে একটি মোর্চা গড়ে তোলা যুক্তরাষ্ট্রের নয়া কৌশল।
পরাশক্তি হিসেবে চীনের অগ্রগতি ঠেকানোর জন্য বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে মার্কিন উপস্থিতি জোরদার করতে বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে অবস্থান করে খুব সহজেই বাংলাদেশের নিকট-প্রতিবেশী দেশগুলোর উপর যেমন প্রভাব খাটানো সম্ভব, তেমনি সম্ভব চীনের আঞ্চলিক আধিপত্য ঠেকিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। তাই বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লবী রাজনৈতিক শক্তির নয়া উত্থানের আশংকা করছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে কোন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঠেকানোর লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে একটি সন্ত্রাসবিরোধী মোর্চা গঠন আমেরিকার পরিকল্পনায় রয়েছে।
আগামীতে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে বাধ্য হলে দক্ষিন এশিয়া এবং দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার উপর মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখার তাগিদে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবিরোধী মোর্চা গঠন খুবই দরকার হবে আমেরিকার জন্য। তাই অ্যাকুইজেশন ও ক্রস সার্ভিসেস অ্যাগ্রিমেন্ট (আকসা) স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক খাতে সহায়তার নামে বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করে দক্ষিন এশিয়ার উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাইলে বাংলাদেশে অথবা বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য যেখানে যুক্তরাষ্ট্র তার গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজির কারনেই মরিয়া, সেখানে “বাংলাদেশ জঙ্গিবাদের আস্তানা” (আসলে তা হেজিমনিক প্রচারনা কি না তা ভাববার বিষয়) এটা প্রমান করার জন্য সিনেমা বানিয়ে এবং খোদ আম্রিকায় প্রদর্শন করে আপনি কেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন আরও পাকাপোক্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে অজুহাত তুলে দিচ্ছেন?আপনি কেন বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের পরবর্তী ক্ষেত্র বানাতে চান? আপনি না মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক দাবি করেন নিজেরে? তাইলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনের অজুহাতে আম্রিকারে বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাবার জন্য মতাদরশিক হাতিয়ার তুলে দিচ্ছেন কেন? আগামীতে যদি বাংলাদেশে মার্কিন আগ্রাসন আরও জোরদার হয়, বঙ্গোপসাগরে যদি মার্কিন সামরিক ঘাটি তৈয়ার হয়, তাইলে এর জন্য আপনি নিজেও দায়ি থাকবেন আপনের এসব সাম্রাজ্যবাদী অপতৎপরতায় ইন্ধন দেয়ার জন্য!বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর খানিক তৎপরতা আমরা দেখছি তা বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্সির দায়িত্ব পালন করছে বলেই আমরা মনে করি। পুরা দক্ষিন এশিয়ার উপর মার্কিন আধিপত্য বজায় রাখতে হলে এখানকার অঞ্চলগুলাতে জঙ্গিবাদ রয়েছে প্রমান করার দরকার আছে আম্রিকার জন্য তবেই এই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অজুহাতে এখানে মার্কিন আগ্রাসনের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত করা যাবে, এ কারনেই আমরা দেখি তালেবান, আল কায়দা সহ নানান উগ্রপন্থিদের সহায়তা করছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। আপনে জঙ্গিবাদের হোতা আম্রিকারেই বলছেন এখন জঙ্গিবাদ দমনের জন্য, আপনের জানা উচিত বাংলাদেশ তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানসহ জে এম বি’র আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের খানিক উগ্রপন্থাকে বাংলাদেশ নিজেই সামাল দিতে সক্ষম, তার জন্য সাম্রাজ্যবাদী আম্রিকার কোন হেল্প আমাগো দরকার নাই, কেননা তাতে করে বাংলাদেশের উপর মার্কিন খবরদারি আর আগ্রাসন তাইলে নিরঙ্কুশ হইয়া যাবে! জঙ্গি দমনের নাম কইরা ইরাক, আফগানিস্তান এর মত বাংলাদেশ যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট হোক তা আমরা চাই না!আম্রিকারে আপনি চেনেন ভাল করেই, জঙ্গি দমনের নাম কইরা সে জঙ্গিদের আরও উস্কানি দিবে যেন আম্রিকার আধিপত্ত বিস্তারের পথ প্রশস্ত হয়!
জনাব, শাহরিয়ার কবির, আমি আপনের সাথে আবার একমত ধর্মীয় উগ্রপন্থা রোধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গেও সম্পর্কিত, কিন্তু আপনে সেই চেতনা রক্ষা করতে কার কাছে ধর্না দিচ্ছেন? কার সাহায্য কামনা করছেন? জামায়েতে ইসলামিকে উগ্রপন্থি জঙ্গিবাদি বলে আপনে আবার সৌদি- মার্কিন বলয়ে আবদ্ধ জামাতের বিরুদ্ধে একশন নেয়ার জন্য আম্রিকার সাহায্য চাচ্ছেন কেন? আপনে দয়া করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক শত্রু (যারা ৭১ এ পাকিস্তানকে সাহায্য করেছে, সপ্তম নৌবহর পাঠানোর হুমকিও দিছে) মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ধারস্থ হবেন না! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।