ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ণ ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র হয়েও তথাকথিত জনগণের রক্ষক বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পাশবিক নির্যাতন ও প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আজ কারা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আব্দুল কাদের। প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের এই মেধাবী ছাত্রটি গত ১৫ই জুলাই রোজ শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১ টার দিকে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়। সেদিন তার মমতাময়ী মা ইস্কাটনে অবস্থিত আত্মীয়ের বাসায় কাদেরের একমাত্র ছোট বোনকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন। তার এই ছোট বোনটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ-তে অধ্যয়নরত। সম্প্রতি সে ইন্দিরা গান্ধী বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
বোনের এই অসামান্য সাফল্যের আনন্দকে ভাগাভাগি করে সে ইস্কাটন থেকে ফজলুল হক মুসলিম হলের দিকে ফিরছিল, কিন্তূ পথে বাধ সাধে পুলিশ, তারপর সৃষ্টি হয় আর একজন অভাগা ‘লিমন’-এর।
খিলগাঁও থানা পুলিশের ভাষ্যমতে, খিলগাঁও ফ্লাই ওভারব্রিজের নিচে একদল ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তাদেরকে পুলিশ ধাওয়া করলে, পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ককটেল নিক্ষেপ করে এবং পালিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের পিছু নেয়। এমতাবস্থায় পুলিশ সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ের সামনে থেকে দুজনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে একজন হলো আমাদের সহপাঠী আব্দুল কাদের।
গভীর রাতে যানবাহন না থাকার কারনে সে হেঁটেই ইস্কাটন থেকে ফজলুল হক মুসলিম হলের দিকে ফিরছিল, কিন্তু সে তখনও জানতো না পথিমধ্যে কতবড় বিপদ তার জন্য অপেক্ষা করছে। পুলিশের মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হবে, তাও সে জানতো না।
পুলিশের গাড়ি ধাওয়া করছিল ছিনতাইকারীদের গাড়ীকে। ছিনতাইকারীরা যখন গাড়ী থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল তাদের একজন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং তাকে প্রহার করলে সে কাদেরকে দেখিয়ে তাদের সহকারী বলে দাবী করে। তখন তারা ওই ছিনতাইকারীর বক্তব্যের ভিত্তিতে কাদের কে আটক করে।
কাদের তখন তাদের বলে, “আমি যদি তার সহকারী হই, তাহলে তাকে আমার নাম বলতে বলেন। ” এর উত্তর ওই ছিনতাইকারী দিতে পারেনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দেয়ার পর সে আরো রোষানলের স্বীকার হয়। তাকে থানায় নিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়। সকালে খবর পেয়ে তার রুমমেট তাকে দেখতে গেলে তাকেও শাসানো হয়।
সে গিয়ে দেখতে পায় যে কাদের-এর গায়ে মারধরের আলামত ছিল কিন্তু বাম পায়ে কোনো জখমের চিহ্ন ছিল না। সন্ধ্যায় তাকে পুলিশি হেফাযতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে তার বন্ধুরা তাকে দেখতে যায় এবং তারা কাদের-এর বাম পায়ে জখমের চিহ্ন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এরই মধ্যে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কাদের তার বন্ধুদের জানায় পুলিশ চাপাতি দিয়ে তার বাম পায়ে এই জখম করেছে।
রিমান্ডের আদেশ ছাড়াই শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে আব্দুল কাদের এর উপর এহেন অমানবিক, বর্বোরচিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
আমরা আব্দুল কাদের-এর বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা অভিযোগ ও মামলার আশু প্রত্যাহার দাবী করছি এবং তার এই নির্যাতনের জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচার দাবী করছি ।
এ লক্ষ্যে আগামীকাল ২৬শে জুলাই বেলা ১২ টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা এ ব্যাপারে আপনাদের সর্বাত্নক সহযোগিতা ও সদয় উপস্থিতি কামনা করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।