সংশোধিত সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেবেন খালেদা জিয়া। এই শিরোনাম দিয়ে দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশন করেছে। যারা করেনি তারা সংবাদের প্রথম চার লাইনে এটি ছেপেছেন।
খালেদা জিয়া সংবিধানে সমালোচনা করতে পারেন। তিনি এ সংবিধান মানবেন না।
তা বলতে পারেন। তার জোট যদি ক্ষমতায় যায় তিনি এটি সংশোধন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেন অথবা নুতন সংবিধান নির্মান করতে পারেন। যদি তিনি দুই তৃত্বীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় যান।
এটি হচ্ছে সংবিধান সংশোধনের গণতান্ত্রিক পন্থা। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে খালেদার দল বর্তমান শাসক দলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে আন্দোলন করে নিজে এবং নিজের দলকে একটি গণতান্ত্রিক দলে পরিণত করেছিলেন।
সে কারণে বর্তমান নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি একজন গণতন্ত্র মনা নেত্রী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু হঠাৎ তিনি সংবিধান নিয়ে এমন এক মন্তব্য করে বসলেন যেটা গণতান্ত্রিক ভাষা নয় মোটেই। তিনি আওয়ামীলীগের ওপর রাগ ঝাড়তে গিয়ে। সংবিধাদের ওপর রাগ ঝেড়ে দিলেন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেবেন।
একজন রাজাকার বা মৌলবাদীরা বললে এটি মানাতো। কিন্তু তিনি বা তাঁর দল কি ওই তাদের সমগোত্রীয়। যে কথা দেশের মৌলবাদীরা বলবে সেটি দেশ নেত্রী নিজে বলছেন।
একটি দেশের সংবিধান কি জিনিস । সেটি আমাদের দেশের নেতা নেত্রীরা বোঝে না দেখে এমন বেফাঁস মন্তব্য শুনতে হয়।
তিনি যে ভাষায় সংবিধানকে আক্রমণ করেছেন। তাতে আওয়ামীলীগ লাভবান হয়েছে। এখন অতীত ইতিহাসের রেকর্ড বাজিয়ে বিএনপি নামক দলটির অগণতান্ত্রিক আচরণের ইতিহাস নূতন করে সবার মাঝে মনে করিয়ে দেওয়ার সুযোগ তিনি বিরোধীদের দিলেন।
ভুলে যাবার নয়। চক্রান্ত ও ষরযন্ত্র করেই তো বিএনপি'র জন্ম।
পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল আবার সেই পিছনের দরজা দিয়েই পতন হয়েছে বিএনপির।
আপোষহীন নেত্রী অন্তিম মুহূর্তে উত্তম মধ্যম খাওয়ার ভয়ে আপোষ করে ফেলেন। বিগত ওয়ান এলিবেন হচ্ছে সাম্প্রতিককালের উত্তম উদাহরণ। তারও আগে ১৯৯৫-৯৬ তেও তিনি ওই একই কাজ করেছিলেন। মানবেন না, মানবেন না বলে, তিনি সবকিছু মেনে নিয়েছিলেন।
সংবিধান কে তিনি ছুড়ে ফেলবেন। যে সংবিধানে তার স্বামীর সংশোধনী বর্তমান থাকে সেটিকে তিনি গ্রহণ করতে চান না। বিসমিল্লাহ কে তিনি ছুড়ে ফেলবেন । রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে তিনি ছুড়ে ফেলবেন। তার কথায় তো এটাই বোঝায়।
তিনি যেরকম বক্তব্য দিয়েছেন তাতে এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক। অনেকে বলবেন তিনি লাগাম ছাড়া বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলতে চাচ্ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতা ছুড়ে ফেলবেন।
সত্যিই কি তিনি সেরকমটা বলতে চেয়েছিলেন ? উত্তর না। তিনি ভেবেচিন্তেই বলেছিলেন এ সংবিধান তিনি মানবেন না।
তিনি বাংলাদেশের জন্য নতুন এক সংবিধান তৈরি করবেন। সেটি আগামী দশম জাতীয় সংসদে তৈরি করে দেশবাসীকে উপহার দিবেন। যেহেতু তিনি রাজাকার-জঙ্গি জোটের নেত্রী। সেহেতু তিনি বাংলাদেশে কে একটি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সংবিধান দেবেন।
দেশে আল্লাহ 'র আইন বাস্তবায়ন ও কুরানিক সংবিধান তিনি জাতিকে উপহার দিবেন।
তার জোট সঙ্গীদের এজেণ্ডা তিনি তাদের নেত্রী হিসেবে বাস্তবায়ন করবেন। যে দলগুলোর সাথে তার আঁতাত তাদের প্রেরণায় তিনি সেদিন এদেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলার ভাষণ দিয়েছিলেন।
আজ দেশের কোনও সংখ্যালঘুর মুখ দিয়ে যদি এমন ধরনের উক্তি বের হতো তাহলো তাকে যে দেশ ছাড়া হতে হতো সেটা হলফ করে বলা যায়। কিন্ত খালেদার মত ব্যক্তিরা এসব বললে কিছু হয়না। সংবিধান পরিবর্তন করার পদ্ধতি জানা সত্ত্বেও তিনি বর্তমান সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিতে চাইছেন।
দেশের একটি শ্রেণী তো বহু আগেই এ সংবিধানকে অস্বীকার করে আল্লাহ 'র আইন ও আল্লাহ 'র সংবিধান বাস্তবায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে বসে আছে। এখন তারা বিএনপি ঘাড়ে ভর করে সেটাই করবে? নাকি বিএনপি তাদের ঘাড়ে চরে সেটা বাস্তবায়ন করবে? সেটাই আগামীতে দেখার বিষয়।
মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের শক্তি বিবেচনায় বিএনপি' দল হিসেবে ততটা শক্তিশালী নয় যতটা ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতা কর্মীদের মাঠ পর্যায়ে আছে। বিগত কয়েকটি হরতালে দেখা গেছে বিএনপি'র মাঠ কর্মীরা পুলিশের ঠ্যাঙানির ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ডাকা হরতালের প্রথম দিনে ফতুল্লা-কাঁচপুর রণক্ষেত্র।
যেখানে বিএনপি'র ডাকা হরতালে তাদের চীফ হুইপ পুলিশের প্যাদানিতে ধরাশায়ী হয় সেখানে মোল্লাদের ডাকা হরতালে সরকারের দুই পুলিশ মোল্লাদের প্যাদানীতে ধরাশায়ী। ধর্ম ভিত্তিক দলগুলো দেখিয়ে দিয়েছে যে বিএনপি'র চাইতে তারা রাজ পথে বেশি শক্তি রাখে।
তাই খালেদা জিয়া ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ওপর ভরসা করে তাদের কে উৎসাহ প্রেরণা দিতে বর্তমান সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দেবার মত কথা বলছেন। যাতে আগামীতে এই মোল্লাদের জোড়ে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার কার যায়। ক্ষেত্র বিশেষে আমিনী-কামিনীদের থেকে চার পাঁচ আত্মঘাতী জঙ্গি ভাড়া করে যদি বিরোধী কয়েকজন নেতাকে ফেলে দেওয়া যায় বা বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায়।
তাহলে তো আরো ভালো। তাই আজ জঙ্গিদের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে খালেদা জিয়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে মুখে যা আসে তা বলে যাচ্ছেন।
পুনর্মুদ্রিত সংবিধানে কি থাকলো, আর কি বাদ গেলো, তা যদি সরকারের গুটি কতেক বুদ্ধিজীবী ও সরকারের লোক জানে তবে তারাই এর অনুচ্ছেদ গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারে। অন্যরা সেটি করতে পারবে না। তাই দেখা যাচ্ছে কতিপয় কলাম লেখক পুনর্মুদ্রিত সংবিধানের অনুচ্ছেদ নিয়ে যুক্তিনির্ভর আলোচনা সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের মারফত জানা যায় পুনর্মুদ্রিত সংবিধানে আদিবাসীদের জাতিসত্তা স্বীকার না করে শুধু বাঙালী জাতি সত্তাকে স্বীকার করা হয়েছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রের সকল কাজের ভিত্তি হবে সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তয়ালার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস। সেটি মুছে ফেলা হয়েছে।
জানিনা কোন বিবেচনায় এ দুটো বাদ গেলো। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ যদি রেখেই দেওয়া যায় তবে আল্লাহ ওপর আস্থা বিশ্বাস কি দোষ করলো ? বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ যদি রেখে দেওয়া যায় তবে বাঙালী জাতির পাশাপাশি চাকমা, মগ, মুরং, গারো সর্বোপরি পাহারী জাতির বিভিন্ন উপজাতিকে স্বীকৃতি দিলে কি কোনো ভুল হতো ? মনে রাখতে হবে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাহারীরাও রক্ত দিয়েছে।
চাকমা রাজার রাইফেল দিয়ে পাকিদের খতম করার ইতিহাস কেউ ভুলে যায়নি।
সংবিধান সংশোধনে ত্রুটি বিচ্যুতি যাই থাকুক। সেটি সংশোধন করার পদ্ধতি আছে। সে মোতাবেক সেটি সংশোধন করা যেতে পারে। ছুড়ে ফেলে দিয়ে সংবিধান সংশোধন করা যায় না।
বি:দ্র আমার লেখাটি প্রকাশ করার মুহুর্তে সুরঙ্জিত সেন গুপ্ত এর ওপর একটি প্রেস কনফারেন্স করে ফেলেছেন। আজ সবকিছু দ্রুত ফাঁস হয়ে যায়। আমি এটি লিখেছি সকালে আর উনার বক্তব্য বিকালে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।