আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলেম সমাজ চাই ‘‘তেতুঁল তত্বের’’ প্রবক্তা ‘শফি সাহেব’ গ্রেফতার হোক

আহমদ শফী কোন আলেম না। আলেমে ’ছু বা ভ- আলেম’- মাওলানা আব্দুল মান্নান স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইসলামকে বিকৃত করে নারীদের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও ন্যক্কারজনক বক্তব্য দেয়ায় হেফাজতের আমির আহমদ শফীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত। শফীকে একাত্তরের গণহত্যাকারী মুজাহিদ বাহিনীর নেতা, ধর্মের লেবাসধারী ভ- ও জঙ্গীদের হোতা অভিহিত করে দেশের সুন্নি সম্প্রদায়ের এ ঐক্যবদ্ধ সংগঠন বলেছে, শফীর বক্তব্য সংবিধান, নারী, তথা পবিত্র ইসলামবিরোধী। শফী ইসলামকে অপমান করেছে। ইসলামের বিধান অনুসারে তার বিচারের মাধ্যমে ইসলাম ও মহানবীর পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে।

রবিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে একই দাবিতে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, পীর-মাশায়েখ ও আলেম সমাজ অভিযোগ করেছে জেএমবি, হয়কাতুল জেহাদ, হিজবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন এক হয়ে হেফজতে ইসলামের নামে কাজ করছে। রাজাকার, আলবদরসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হলে অবশ্যই একাত্তরের গণহত্যাকারী মুজাহিদ বাহিনীর নেতা শফীর বিচার ট্রাইব্যুনালে করতে হবে। বৈঠকে ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম সমাজ দেশের সুন্নি সম্প্রদায়ের কোটি কোটি মানুষসহ শান্তিপ্রিয় মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জামায়াত-হেফাজতসহ তাদের মদদপুষ্টরা দেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান বানাতে চায়। এরা ইসলামকে জঙ্গী বানাতে চায়।

এরা আগামীতে ক্ষমতায় আসলে দেশে পবিত্র ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশে সুন্নি সম্প্রদায়সহ শান্তিপ্রিয় মুসলিম জনেগোষ্ঠীর কেই রক্ষা পাবে না। এদের বিরুদ্ধে সকলে সোচ্চার হোন। মনে রাখবেন, ১৯৭১ সালে আজকের জামায়াত-হেফাজতীরাই ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করেছিল। পল্টনের একাটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘ইসলামের দৃষ্টিতে নারীশিক্ষা এবং বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা এমএ মতিন।

সংগঠনের সদস্য মাওলানা স উ ম আব্দুস সামাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। বক্তব্য রাখেন লেখক ও গবেষক মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, পীরে তরিকত সৈয়দ জাহান শাহ মুজাদ্দেদী, মাওলানা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী, পীরে তরিকত মাওলানা হারুনুর রশিদ রেজভী, পীরে তরিকত গাজী ওয়াহেদ সাবুরী, ছিটকা গাউছিয়া দরবার শরীফের গদ্দীনশীল পীরেতরীকত শাহ্ এসএম আকতারুজ্জামান মাইজভা-ারী, অধ্যাপক এমএ মোমেন, মোহাম্মদ আবদুল মতিন, ফিরোজ আলম খোকন, গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকির হোসেন, গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর সভাপতি আলহাজ রহমত আলী, খাজা ফারুক আহমাদ, গোলাম মাহমুদ ভূঁইয়া মানিক, অধ্যক্ষ আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মাওলানা আখতার হোসেন চৌধুরী, আবু নাসের মোহাম্মদ মুসা, মোহাম্মদ নুরুল হক চিশতি, জাফর আলম সিদ্দিকী, জয়নুল আবেদীন, অধ্যাপক মামুনুর রশিদ, মাওলানা সোলায়মান খান রব্বানী, মাওলানা মাহবুবুল হক আলকাদেরী, মাওলানা শাহ মহিউদ্দীন হামিদীসহ সারাদেশ থেকে আসা সুন্নি সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। শুরুতেই নেতৃবৃন্দ বলেন, নারীশিক্ষাসহ পুরো নারী সমাজের বিরুদ্ধে হেফাজতের আমিরের দেয়া অশ্লীল বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, কোরান-সুন্নাহ্র অপব্যাখ্যা করে উচ্চচশিক্ষার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে মুসলিম নারীদের পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। হেফাজতের আমির আহমদ শফীর সম্প্রতি যে ভিডিওফুটেজ প্রচারিত হয়েছে তাতে তিনি মেয়েদের ক্লাস ফোর-ফাইভের বেশি না পড়ানোর যে নসিয়ত করেছেন তা মুসলিম নারীদের বিরুদ্ধে এ মহাষড়যন্ত্রেরই ধারাবাহিকতা মাত্র।

এক সময় যে ওহাবীরা ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানদের ইংরেজী শিক্ষা থেকে হারাম ফতোয়া দিয়ে বিরত রেখেছিলেন, যার রেশ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। সরলপ্রাণ মুসলমানরা ওহাবীদের কথায় বিশ্বাস করে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে চাকরি এবং নেতৃত্ব থেকে এমনভাবে পিছিয়ে গিয়েছিল যে, আজও সে অবস্থানে পরিপূর্ণভাবে বহাল হতে পারেনি। এখন চলছে মুসলিম নারীদের পিছিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র। আহমদ শফী প্রদত্ত নারীবিষয়ক তেঁতুল তত্ত্বকে ইসলামের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং কুরুচির পরিচায়ক ওহাবী তত্ত্বের পুনরাবৃত্তি বলে মতপ্রকাশ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বলেছে, শফী নারীকে ইসলামের প্রতিপক্ষ বানানোর এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছেন এবং নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও লম্পট হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা চালিয়েছেনÑ যা ইসলামের অপব্যাখ্যা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা এমএ মতিন বলেন, ধোঁকাবাজ হেফাজত-মওদুদিবাদীদের হাত থেকে ঈমান-ইসলাম রক্ষা প্রতিটি সুন্নি মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব।

ইসলামের নামে কারও ওপর আঘাত, হত্যা কোরান-হাদিস অনুমোদন করে না। এ ধরনের আঘাতকারী ও হত্যাকারীদের প্রতিহত করার সময় এসেছে। হেফাজত-জামায়াতীরা প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা, ইসলামের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। চার দেয়ালের অভ্যন্তরে জঙ্গী প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ইসলামের নামে নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না।

তিনি বলেন, হঠাৎ আহমদ শফী আমাদের ইসলামের রক্ষাকারী হয়ে গেছেন। কিন্তু কে এই শফী? তার সংগঠনই বা কি? একাত্তরে এই সংগঠনের এখনকার নেতারাই ছিল গণহগত্যায় জড়িত। পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একাত্তরের আলবদর, আলশামস, রাজাকারের মতো মুজাহিত বাহিনী গঠন করে এই শফীরা গণহত্যা করেছে। ধর্মের নামে আমাদের মা-বোনদের নির্যাতন করেছে। এরা এখানও দেশকে পাকিস্তান, আফগানিস্তান বানাতে মাঠে নেমেছে।

এমএ মতিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মুজাহিদ বাহিনীর বিচার ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পরিপূর্ণ হবে না। অবিলম্বে দেশ, ইসলাম, সংবিধান, নারীবিরোধী হেফাজতের আমিরেকে গ্রেফতার করে বিচার করতে হবে। হেফাজতকে জঙ্গী সংগঠন অভিহিত করে তিনি বলেন, জেএমবি, হরকাতুল জেহাদ, হিজবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন এক হয়ে হেফাজতে ইসলাম গঠন করেছে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী এ অপশক্তি আগামীতে ক্ষমতায় আসলে দেশে পবিত্র ইসলাম ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশে সুন্নি সম্প্রদায়সহ শান্তিপ্রিয় মুসলিম জনগোষ্ঠীর কেই রক্ষা পাবে না।

এদের বিরুদ্ধে সকলে সোচ্চার হোন। মাওলানা স উ ম আব্দুস সামাদ বলেন, নারীদের বিরুদ্ধে অশ্লীল বক্তব্য দিয়ে শফী সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। ইসলামের নামে অশ্লীল কথা বলে ইসলামকে অপমান করেছেন। মহানবীকে অপমান করেছেন। এই শফীর খুঁটির জোর কোথায়? একাত্তরের এই লোক মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।

সরকারের কাছে আজ মুজাহিদ বাহিনী ও তার নেতাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। তিনি প্রশ্ন করেন, মতিঝিলে সমাবেশের নামে, অবরোধের নামে হাজার হাজার কোরান পোড়ানো হলো তবু কেন সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না? গবেষক ও ইসলাম ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা এমএ আব্দুল মান্নান বলেন, নারীকে ঘরে বন্দী রাখতে চায় হেফাজতী আহমদ শফী। তাঁর বক্তব্য নারী ও ইসলামবিদ্বেষী। এই আহমদ শফী কোন আলেম না। সে আলেমে ‘ছু বা ভ- আলেম।

শাহ্ এসএম আকতারুজ্জামান মাইজভা-ারী বলেন, আমরা নারীদের সঙ্গে নিয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। পীরে তরিকত গাজী ওয়াহেদ সাবুরী হেফাজতের আমিরকে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বলেন, তার নোংরা বক্তব্যের জন্য অবিলম্বে তদন্ত করে বিচার করুন। সে মা-বোনকে নিয়ে যে কথা বলেছে তার বিচার হতে হবে। আহমদ শফীর পক্ষে জাতীয় সংসদে বিএনপি নেতা-নেত্রীদের দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেন গাজী ওয়াহেদ সাবুরী। মাওলানা আবু সুফিয়ান আবেদী আলকাদেরী বলেন, আহমদ শফীকে আমি সুচিকিৎসা করার পরামর্শ দিচ্ছি।

তবে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করুন। সে কোরান সুন্নাবিরোধী চেহারা প্রকাশ করেছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.