আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষিকার প্রতি কর্মস্থলে কাঠের নেমপ্লেট ছুড়ে আঘাতের চেষ্টা এবং কর্মক্ষেত্রে হয়রানি

তারিখ: ১১ জুলাই ২০১১ খ্রী; বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম বরাবর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বিষয়: কর্মস্থলে কাঠের নেমপ্লেট ছুড়ে আঘাতের চেষ্টা এবং কর্মক্ষেত্রে হয়রানি প্রসঙ্গে। জনাব, নিবেদন এই যে, আমি জাহিদা পারভীন, ইকবাল পার্ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক (শরীরচর্চা) হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমার ইনডেক্স নং : ১০৫০৪১০। গত ১৬ মে ২০১০ইং তারিখ থেকে আমি এই বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হই (নিয়োগপত্র'র সূত্র: শি/নিয়োগ (২)২০১০), নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই আজ অবধি কর্মস্থলে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হয়েছি। যা আমাকে মানসিকভাবে প্রচন্ড পরিমান হতাশ ও জীবনের প্রতি বীতশ্রাদ্ধ করে তুলছে।

উল্লেখ্য যে, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অফিশিয়াল কর্মকান্ডে আমাকে অযোচিতভাবে জড়িত করায়, নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে এ ব্যপারে আমি গত ২৪ মার্চ ২০১১ইং তারিখে বোয়ালখালী থানায় একটি ডায়েরি করি এবং ২৬ মার্চ তারিখে থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটা আবেদন করি। পরবর্তীতে তাঁরা কি পদক্ষেপ নিয়েছেন তা আমার জানা নাই। তবে বিদ্যালয় থেকে আমাকে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে '২১ দিনের রিফ্রেসার কোর্সে' অংশগ্রহণ না করতে দিলে শিক্ষা অফিস থেকে প্রধান শিক্ষককে শো'কজ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক ও সহ-প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ে সাধারণ সভা করে সভাস্থলে আমাকে অপমান ও লাঞ্ছিত করে। এবং এরপর থেকে সহ প্রধান শিক্ষক আমাকে প্রতিনিয়ত হয়রানি ও ছাত্রীদের সামনে অশ্লীল মন্তব্য করতে থাকেন।

এই প্রেক্ষিতে আমি কর্মস্থলে প্রচন্ড পরিমাণ মানসিক চাপ ও হয়রানির ভেতর থাকায় এবং প্রধান শিক্ষক, সহ-প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষক-এর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কায় গত ০৫ জুলাই ২০১১ইং তারিখে চাকুরি থেকে অব্যহতি দেই। প্রধান শিক্ষক অব্যহতি পত্র গ্রহণ করেন এবং তৎক্ষনাৎ কোন রিসিভ কপি না দিয়ে আমাকে পরদিন আসতে বলেন (এখনও ছাড়পত্র দেয়া হয় নি)। গত ০৬ জুলাই’১১ইং তারিখে দেশব্যপী হরতাল ছিল তার ভেতর আমি স্কুলে যাই। স্কুলে সেদিন উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক, সহ-প্রধান শিক্ষক, করনিক আব্দুল করিম এবং দপ্তরী তাপসী রানী। আমি ক্লাস থেকে টিচার্স রুমে যাই, আমার সাথে ছাত্রীরা আসে কারণ, তারা আমার চাকরী ছাড়ার জন্য মনখারাপ করে এবং কান্নাকাটি করছিল।

এ কারণে সহ-প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের ছুটি দিয়ে স্কুল থেকে বেড় করে দেয়; কিছু ছাত্রী যেতে না চাইলে তাদের ধমক এবং শাসানি দেয়। এরপর সহ-প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষক টিচার্স রুমে আমাকে বিভিন্ন ভাবে কুটউক্তি করে কথা বালা শুরু করে এবং ইচ্ছা করে আমার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়। এরপর সহ-প্রধান শিক্ষক জাকের হোসেন তাঁর টেবিলে থাকা কাঠের নেমপ্লেট ছুড়ে মারে, তৎক্ষনাৎ ধর্মীয় শিক্ষক নাসির সেটা ধরে ফেলে। যার কারণে আঘাতটা আমার দেহে লাগেনি। এরপর আমাকে বিদ্যালয়ের বাইরে যেতে না দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে।

এ সময় (বেলা ১২.৪৪ মিনিটে) আমি থানায় ওসিকেও মোবাইলে ঘটনাটি বলি। পরবর্তীতে উপস্থিত ছাত্রীরা আমাকে বেড় করে নিয়ে গাড়িতে তুলে দেয়। সেই মুহুর্তে আমি ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহবল হয়ে পড়ি এবং পরদিন আমার স্বামীর চক্ষু হাসপাতালে লেজার থেরাপী থাকায় তার প্রস্তুতির কারণে আমি সেইদিন কোন অভিযোগ করতে পারিনি। তাই আজ এই অভিযোগপত্র দাখিল করছি। জনাব, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে নারী হওয়ার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ভাবে চাপের মধ্যে রাখে।

এছাড়াও আমি শারীরিকভাবে ভারী মানুষ (মোটা), এ কারনে বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষকসহ অন্যান্যরা আমার অজান্তে অথবা প্রকাশ্যে অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দের সামনে এবং ছাত্রীদের নিকট নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্য করে থাকেন। জনাব, ঘটনার সূত্রপাত গত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান থেকে। ঐ অনুষ্ঠানের সফলতার দায়-দায়িত্ব নীতিগত ভাবে একজন শরীরচর্চা শিক্ষকের কাঁধে পড়ে, এবং একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে যেখানে আমি নিয়োগ প্রাপ্ত, সেই দায়িত্ব আমি পালন করতে পারিনি। আমাকে এসব কাজ থেকে বিরত রেখে তাঁরা নিজস্ব খেয়াল খুশীমতো পরিচালনা করেন। এছাড়াও এ প্রতিযোগীতার যাবতীয় বাজেট এবং খরচাদি আমাকে প্রদর্শন না করিয়ে স্বাক্ষর করতে বললে আমি তা করতে অস্বীকার করায় সেখানে তাঁরা নিজেরাই স্বাক্ষর করেন এবং আমাকে বিভিন্ন কটুবাক্য শোনান।

বর্তমান সরকার শিক্ষার উন্নয়নের স্বার্থে শিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে-করছে। এসব প্রশিক্ষণ গ্রহন করা প্রতিটি শিক্ষকের অবশ্যই কর্তব্য কিন্তু আমার নামে শিক্ষা অফিস থেকে চিঠি এলেও এসব প্রশিক্ষণে আমাকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না। এরূপ শারীরিক শিক্ষকদের এক প্রশিক্ষণে আমাকে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার কারণে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শাও নোটিশ পায়। আর এ কারণে আমার প্রতি তাদের হয়রানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও আমি চট্টগ্রাম অঞ্চলের না হওয়ার কারণে আঞ্চলিকতার শিকার হচ্ছি।

এসমস্ত কারণে আমাকে বর্তমানে প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে থাকতে হয়েছে। নিয়োগের পর আমার বেতনের সরকারি অংশ পাওয়ার যাবতীয় কাগজপত্র দিতে ইচ্ছে করে দেরী করে, যার ফলে আমার এমপিও পেতে বেশ কয়েক মাস দেরী হয়েছে। এছাড়া নিয়োগের পর আমাকে জানায় যে আমাকে আমার দায়িত্বের সাথে সাথে একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন কম্পিউটার শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হবে; এবং এই বাবদ আমাকে বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতন ১২০০/-(বার শত) টাকা মাত্র প্রদান করা হবে। কিন্তু নিয়োগপএে এই বেতনের কথা উল্লেখ ছিল না। পরবর্তীতে ঐ বেতনের পরিমাণ প্রধান শিক্ষক অস্বীকার করেন।

নির্ধারিত হয় ৬৫০/-(ছয় শত পঞ্চাশ) টাকা মাত্র। এছাড়াও যেহেতু শরীরচর্চা শিক্ষককে স্কাউট শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার নির্ধারিত ১৫০/-(একশত পঞ্চাশ) টাকা দেয়ার কথা কিন্তু তার কোন উল্লেখ ছিল না। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসা করলে জানানো হয় ঐ বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতনের মধ্যেই তা রয়েছে। গত ১২জানুয়ারী২০১১ইং তারিখে লাইব্রেরীয়ান ও কম্পিউটার শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে আমি একটি আবেদন করি কিন্তু প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য সহকর্মীবৃন্দ (বিশেষতঃ সহ-প্রধান শিক্ষক) আমাকে চাপের মুখে এ কাজ করতে বাধ্য করছে। উল্লেখ্য যে, লাইব্রেরীয়ানের দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমাকে সহ-প্রধান শিক্ষক (আগে তাঁর দায়িত্বে লাইব্রেরী ছিল) কোনরুপ বইয়ের তালিকা সরবরাহ করেনি এবং তালিকা নাই বলেও জানিয়েছেন।

এখনও কোন তালিকা তৈরী করা হয়নি। এরূপ অবস্থায় আমার নিকট হতে লাইব্রেরীর চাবি বুঝিয়ে না নিয়েই গত জানুয়ারী থেকে আমাকে লাইব্রেরীয়ানের সন্মানী বাবদ ১৫০/- টাকা বিদ্যালয়ের সম্মানী কর্তন করে। এবং গত ০৩ মে ২০১১ইং তারিখে প্রধান শিক্ষক আমাকে কোন রূপ লিখিত না দিয়ে এক প্রকার জোড় করেই হাত থেকে চাবি ছিনিয়ে নেয়। অতএব জনাব নিবেদন এই যে, একজন শিক্ষক হিসেবে এই অবস্থার প্রেক্ষিতে সহ-প্রধান শিক্ষক জনাব জাকের হোসেন এবং ধর্মীয় শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে আমাকে সন্মানজনকভাবে দেশের শিক্ষক হিসেবে বসবাসের সুযোগ করে দিয়ে বাধিত করবেন এবং বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা করবেন। নিবেদক জাহিদা পারভীন সহকারি শিক্ষক (শরীরচর্চা) ইনডেক্স নং : ১০৫০৪১০ চট্টগ্রাম ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.