সহজ কথা বলতে ভালোবাসি , সহজ পথে চলতে ভালোবাসি তিনি শুধু আমার শিক্ষিকাই নন, পারিবারিক ভাবেও আমাদের অনেক কাছের একজন মানুষ....একজন অত্যন্ত ভাল ও আন্তরিক প্রকৃতির মানুষ। শুধু তাই নয়, তার কাছেই আমার লেখাপড়ার হাতে-খড়ি। আমি জানি, আমার জীবলে তার অবদানের প্রতিদান কোন কিছু দিয়েই পূরণ করা যাবেনা....তারপরও তার প্রতি কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্ব্বরুপ তারই একটি লেখা আজ ব্লগে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো.....লেখাটি হুবহু নিম্মে তুলে ধরলাম ......
" হে অতীত, তুমি হৃদয়ে আমার কথা কও, কথা কও "
আজ দীর্ঘকাল পর পুরোনো দিনের কত কথাই না মনে পড়ছে । আমার অতীতকে বলা যায় স্ব্বর্ণযুগ। সেই সময়গুলো কেবল আনন্দে আর সুখেই কাটতো আমাদের পারিবারিক জীবন।
যথাসময়ে আমরা ভাইবোনেরা স্কুলে ভর্তি হই। আমার ভাইবোনেরা বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রী। আমার স্কুলে বিজ্ঞান পড়বার সুযোগ না থাকায় আর্টস এ পড়াশোনা করি । শিক্ষিত পিতা উৎসাহ দিলেন। তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেছিলেন।
তিনি বললেন, "ঠিক আছে....একজন তো আমার লাইনে আসুক । কারণ দর্শন শাস্ত্র সকল বিদ্যার গুরু "।
আমি আজ দার্শনিক তত্ত্ব কথায় যাবোনা । কেবল আমার সেই একটি আনন্দপূর্ণ ঘটনাটি তুলে ধরতে চাই। যথাসময়ে এম,এ ফাইনাল পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলাম।
পরীক্ষাগুলো মোটামুটি ভালই হলো। তবুও অন্তরের শংকা দুর হয়না ।
তখনকার দিনে আমাদের বাসার দরজার নীচে দিয়ে হকার পত্রিকা নিয়ে যেতো। সেই সময় একটি মজার ঘটনা ঘটেছিলো। আমার ছোট ভাই, যিনি বর্তমানে একজন শল্য চিকিৎসক ( অষ্ট্রেলিয়াতে বসবাসরত), তার সাথে কোন একটা কারণে ( এখন মনে নাই) কথা বলতামনা বেশ ক'দিন ।
সে প্রথমে খবরের কাগজটি হাতে পায় । কাগজ খুলে দ্যাখে দর্শন বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে। তাতে প্রথম শ্রেনীতে বেশ কয়েক জনের সাথে আমার নাম - কাজী ফিরোজা ওমর বানু - ও আছে। সে তো আনন্দে আত্মহারা....ভুলে গ্যালো তার সাথে আমার আড়ীর কথা । দৌড়ে এসে বললো, " আপু, এই যে তোমার রেজাল্ট দিয়েছে....দ্যাখো....তুমি প্রথম শ্রেনী পেয়েছো "।
খবর শুনে বড় ভাই খাটে বসে সংগীত চর্চা করছিলেন, তিনি থামলেন....এবং কাগজ দেখে আমাকে অভিনন্দন জানালেন। আমার মেজো ভাই ও ছোট বোন দৌড়ে এলো , আম্মা রান্নাঘর থেকে এলেন। সবাই আমাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানালো । আম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন । আনন্দধারা বইতে থাকলো আমাদের বাসায় ।
এমন সময় আমার আব্বা, যিনি একজন স্কুল শিক্ষক হওয়ায় একটি ক্লাসে পড়িয়ে অপর ক্লাসে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে প্রিন্সিপাল সাহেব ডেকে বললেন, " পত্রিকা দেখেছেন স্যার ? আজ আর আপনাকে ক্লাস নিতে হবেনা । বাসায় যান, আপনার মেয়ে এম.এ তে ভাল রেজাল্ট করেছে, আজ আপনার সবচেয়ে আনন্দের দিন"। আব্বার আদর অনেক পেয়েছি, তবে সেদিনের আদর টা আজও ভীষন মনে পড়ে। আব্বা তখনই বাসায় এসে আমার মাথাটা তার বুকে নিয়ে অনেক আদর করলেন এবং খুব খুশী হয়ে আমার জন্য দোয়া করলেন ।
আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী সবাই এই সংবাদে আমাকে অনেক অভিনন্দন জানালো ।
অনেকে মিষ্টি নিয়ে দ্যাখা করতে এলেন । বাসাতেও একই আয়োজন । কিছুক্ষন পর আব্বার উপদেশ মতো আমি ডিপার্টমেন্টে গ্যালাম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সালাম করতে এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য দোয়া নিতে ।
সেই সুখময় স্মৃতির কথা কি ভোলা যায় ? সে দিনগুলোর কথা মনে করে আজও পথ চলি । আমার অতীত, সব পাবার অতীত, মা-বাবা'র শ্রম, ভাইবোনের ভালবাসা, আত্মীয়-স্বজনের আশীর্বাদ, বন্ধু-বান্ধবের শুভাকাংখা আমাকে বারবার ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই সুদূর অতীতে ।
কবি গুরুর ভাষায়,
" আমি যাহা দেখিয়াছি, আমি যাহা পাইযাছি
এ জনম সই
জীবনের সব শূন্য, আমি যাহে ভরিয়াছি
তোমার তা কই ?"
আমি আশা করবো, আমার জীবনের এই ছোট্ট আনন্দ ঘটনা যদি ভবিষ্যতে আমার পরবর্তী প্রজন্মের কাউকে উৎসাহিত করে ভাল করে পড়াশোনা করবার এবং পরীক্ষায় ভাল ফলাফল লাভ করবার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়, তবে সার্থক হবে আমার এই লেখা । সবাইকে ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ.......
(আগে) কাজী ফিরোজা ওমর বানু
(পরে) ফিরোজা রশীদ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।