মুহাম্মদ সামি উল্লাহ শাহেদ,বয়স ৯ কি ১০ বছর।
চার বছর বয়সে পিতা হারিয়েছে। মা অসুস্থ,দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত।
শিশুটি পিতৃ স্নেহ- তেমন পায়নি। মায়ের অসুস্থতার কারনে মাতৃ স্নেহ থেকেও বঞ্চিত।
এ প্রতিকূলতায়,এতিম-অনাথ এই বালকটি পথভ্রষ্ট হয়ে যাবার সম্ভবনাকে দূরে ঠেলে, আজ সে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ছাত্র হিসাবে মন্দ নয়।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে 'ম'আধ্যক্ষরিত বিদ্যাপীঠ নামক একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ের ছাত্র। শিশুটির করূন অসহায়ত্বতার কারনে তার দায়িত্ব নেয়-এক নিকটাত্বীয় পরিবার। শিশুটির যত্নআত্তি,অসুখ বিসুখ,লেখাপড়ার রসদ যোগায় এ পরিবার।
এ পরিবারই তার বর্তমান অভিবাবক।
সেপ্টেম্ভর'২০১২ মাস। শিশুটির বিদ্যালয়ে যাবার জুতাটি ছিড়ে গেছে। বিদ্যালয়ের পোষাকের অংশ সাদা রঙের জুতা (কেডস)। কিন্তু বিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের সাদা রঙের কেডস এর পরিবর্তে বাহারী রঙের,ডঙের বা ডিজাইনের কেডস পরে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায় বলে অভিবাবক ভাবলেন,একটু সাশ্রয়ী ব্যবহারের কথা।
কোন বাহারী রঙ বা ডঙ নয়। "সাদা রঙের মাঝে নীল রঙের আচড়" মিশ্রিত ডিজাইনের কেডস কিনলেন। শিশুটি এই কেডস পরেই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছিল।
অক্টোবর মাস এর প্রথম সপ্তাহ,'২০১২। একদিন শ্রেণীশিক্ষকা শিশুটির পায়ে ভিন্ন রঙের কেডস কেন-এ কারনে শ্রেণীতে শাস্তি দিলেন (ভিন্নরঙের কেডস কেনার দায়ে অভিবাবকের শাস্তি হওয়া উচিত ছিল) এবং এক পর্যায়ে শিশুটির পায়ের কেডসটি খুলে নিলেন।
ছুটির পরও কেডসটি ফেরত দিলেন না।
শিশুটি বাধ্যগত। নিশ্চুপ। নিরূপায়। অপমান বোধ শিশু মনে তাকে আঘাত করল।
বিদ্যালয়ের ছুটির পর- ঢাকার নোংরা আবর্জনা মিশ্রিত কংকরময়- রাস্তা দিয়ে নগ্ন পায়ে হাটতে শুরু করল। পথে ইটের টুকরার আঘাত পেয়েও চোখে পানি আনলো না। পাছে যদি রাস্তার মানুষ দেখে ফেলে।
বুক ফাটা কষ্ট নিয়ে বাসায় ফিরল। বাসায় ঢুকেই নিরব।
নিথর।
চোখ লাল হয়ে আছে। চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। মুখে কোন শব্দ নেই। কি হয়েছে বলছে না।
চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝড়ছে।
হঠাত চিতকার দিয়ে উঠল। কান্নার শব্দ তীব্রতর হয়ে উঠল।
মনে তার খুব কষ্ট। বাধভাঙ্গা ক্ষোভ।
না পাওয়ার বেদনা।
আজ কেন আব্বু নেই। বন্ধুদেরতো আব্বু আছে। আমার কেন নেই।
আব্বু থাকলে তো আজ শ্রেণী শিক্ষিকা এমন ব্যবহার করতেন না।
বন্ধুদের আব্বুর মতো, আমার আব্বু- আমাকে অনেক অনেক কেডস কিনে দিতেন। মজার মজার খাবার কিনে দিতেন,চকলেট আইসক্রিম কিনে দিতেন,রঙ পেন্সিল কিনে দিতেন,গল্পের বই কিনে দিতেন। আরো কত কি। কত আকুতি। বুকভরা আহাকার,কষ্ট।
তার যেন কেউই নেই।
না পাওয়ার বেদনা আর শ্রেণী শিক্ষিকার বিরূপ আচরণ ও আন্তরিকতার অভাবমূলক ব্যবহার শিশুটিকে ব্যথিত করবে এ জ্ঞানটুকু হয়ত ঐ শিক্ষিকার নেই। শিক্ষিকার অক্ষর জ্ঞান রয়েছে কিন্তু মানবিক জ্ঞান শূণ্য এ কথাটি তিনি তার ব্যবহারেই প্রকাশ করেছেন।
তাঁর মাঝে একজন আদর্শ শিক্ষকের গুনাবলীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
একজন আদর্শ শিক্ষককে বিভিন্ন ধনাত্বক গুনে গুনান্বিত হতে হয়।
শিক্ষাদানের আচরন,নিয়ম-নীতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করতে হয়। অর্জন করতে হয় দূরদর্শিতা। প্রজ্ঞা আর জ্ঞান এ অধিষ্ঠিত হতে হয়। স্নেহ ভালোবাসা মিষ্টিকড়া ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠদান করাতে হয়। শিক্ষককে ব্যক্তিত্ববান হতে হয়।
তাঁর ব্যক্তিত্বপূর্ন আচার অচরন,ব্যবহার,আদর্শ থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহন করবে। শিক্ষকই হন ছাত্রদের আদর্শ। আর সেখানে যদি উল্লেখিত অনভিজ্ঞ,অনুপোযুক্ত, শিশু সাইকোলোজি বিষয়ে বুঝহীন শিক্ষিকার ন্যায়,বিদ্যালয়ে শিক্ষক থাকেন-সেখানে ছাত্রছাত্রীরা কী শিখবে-ভাবতে অভাব লাগে।
তা'ছাড়া অনভিজ্ঞ,জ্ঞানহীন,প্রজ্ঞাহীন,বিবেকহীন,অবিবেচক-কিছু শিক্ষকদের কারনে শিক্ষক সমাজ কুলসিত। সেজন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক,গভনিং বডির সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের উচিত-সঠিক যোগ্যতা,উপযুক্ততা যাচাই বাছাই করে,যোগ্য,অভিজ্ঞ,যথাযথ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত,প্রজ্ঞাবান,জ্ঞানী শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়া।
তাতে অন্তত আগামী প্রজন্ম আরো সুন্দর সুশিক্ষিত পৃথিবী উপহার দিতে পারবে।
আর সেজন্য বিবেকহীন,অনভিজ্ঞ আলোচ্য শিক্ষিকাদের মত শিক্ষক শিক্ষিকাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া দরকার। যেন তাদের দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীরা নিগৃত, লাঞ্ছিত, নির্যাতিত, না হয়।
ব্লগার ভাইদের নিকট বিশেষ অনুরোধ- অন্তত একটি কমেন্ট করুন।
যাতে শিক্ষক শিক্ষিকা সহ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, গভনিং বডির সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নজর কাড়ে।
ধন্যবাদ।
২০ অক্টোবর'১২ইং
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।