আমি নির্ভীক, আমি দূর্জয়, আমি চিৎকার করে সত্য বলি... একটা গল্প বলেই শুরু করি।
একটা ৮-৯ বছরের বাচ্চা একটা কাগজের মানচিত্র নিয়ে খেলছে। খেলতে খেলতে সে মানচিত্রটা ছিড়ে ফেলেছে। তার বাবা এটা দেখে তো খুব রাগ করল। ছেলেটাকে বলল, তুমি মানচিত্রটি ছিড়লে কেন? এখন তোমাকে আধঘণ্টা সময় দিচ্ছি, তুমি যেভাবে পার মানচিত্রটা জোড়া দাও।
ছেলে তো পড়ল মহা বিপাকে।
আধঘণ্টা পর বাবা এসে দেখে ছেলেটা ঠিকই মানচিত্রটা জোড়া দিয়ে ফেলেছে। বাবা তো অবাক! বাবা জিজ্ঞেস করল, তুমি তো মানচিত্রটা চেনো না, তুমি এটা জোড়া দিলে কিভাবে? ছেলে বলে, বাবা, আমি মানচিত্র জোড়া দেই নি, মানচিত্রের পেছনে একটা মানুষের ছবি ছিল, আমি সেই ছবিটা জোড়া দিয়েছি, মানচিত্র এমনিতেই জোড়া লেগে গেছে।
গল্প শেষ। এবার আমি আমার মূল টপিকে ফিরে আসি।
অনেকেই বলে আমি তো চুনোপুঁটি, আমি দেশের কাজে কিভাবে লাগতে পারি। তাদের জন্যে উপরের গল্পটা। আমার কথা হচ্ছে তুমি নিজে নিজেকে গড়ে তোল, দেখবে দেশটা ঠিকই গড়ে উঠেছে।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি নিজেকে একজন পূর্নাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। আমি দিন-রাত পড়াশুনা করবো, একাডেমিকালি ভালো ফলাফল করবো, কিন্তু আমার ভিতরে মানবিক গুনাবলি পরিস্ফুটিত হবে না, তাহলে সে শিক্ষার আদৌ কি কোনো মূল্য আছে? মনিষী প্রমথ চৌধুরী বলেছেন-
“শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল্যবোধের পরিবর্তন।
”
জ্ঞানের কথা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে। আমি আমার কথায় ফিরে আসি।
আমি শুধু পড়াশুনা করেই যাব, আর আমার চোখের সামনে দিয়ে অন্যায় হয়ে যাবে আর, আমি তার প্রতিবাদ করবো না তা হলে তো আমার পড়াশুনাই বৃথা। আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শুধু ভুলই করিনি, আমি অপরাধ করেছি। সরকার আমার পেছনে চার বছরে ৭-৮ লাখ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে, আমি আমার দেশকে কি দিচ্ছি? আমি এ সিটটিতে ভর্তি হওয়ার কারনে আর একটা ছেলে বঞ্চিত হয়েছে।
আবার মানচিত্রের গল্পে ফিরে আসি। আমি যদি আমার নৈতিক শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে জেতে না পারি, তাহলে মানচিত্রের পেছনের মানুষটাকে আমি জোড়া দিতে পারব না। তার চোখদুটোকে আমি অন্ধ করে ফেললাম। সে তার সামনে ঘটে যাওয়া অন্যায়-অপরাধ কিছুই দেখতে পারবে না। এতে দেশের মানচিত্র ফুটো হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ তো আর এমনি এমনি দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় নি।
ভিসি স্যার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না করালে দেশের ক্ষতি হয়, আমি একটা ক্লাস না করলে দেশের ক্ষতি হয়, ফুড ডিপার্টমেন্টের ছেলেরা ১১ মাস ক্লাস না করলে দেশের ক্ষতি হয়, কিন্তু আমি যদি নৈতিকতা না শিখি তাহলে কি দেশের ক্ষতি হয় না? কোনটা বড়, ১ ঘণ্টার একটা ক্লাস না করা নাকি ২৫-৩০ বছরের কর্মজীবনে দুর্নীতি করে যাওয়া। দেশের বড় ক্ষতি কে করছে, আমি, যে একটা ক্লাস না করে অপরাধ করেছি নাকি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, যারা আমাকে নৈতিকতার শিক্ষা থেকে বঞ্ছিত করছে? দেশের এত বড় ক্ষতি করার পর তারা বিবেকের কাছে কি জবাব দেবে? নাকি বিবেক নামক বস্তুটার সাথে তাদের পরিচয় নেই?
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন অনিয়ম দেখলে আমার খারাপ লাগে। প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমি কিছু বললেই ওই একই প্রশ্ন-
“তোমার আইডি কত?”
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭০০ ছাত্রের মধ্যে ১ বছরে ৫২ জনের বহিষ্কার।
বাংলাদেশের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রেকর্ড আছে কিনা আমার জানা নেই। প্রশাসন তার অযোগ্যতা ঢাকার জন্য বহিষ্কারাদেশ দিয়েই যাচ্ছে। এই নোটটার জন্য আমার উপর বহিষ্কারাদেশ চলে এসে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। তবুও বিড়ালের গলায় কাউকে না কাউকে ঘণ্টা বাঁধতেই হবে।
যেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু করার থাকে না সেখানে তাকে নাকি ঘৃণা করতে হয়।
আমরা তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে না পারি, তাদেরকে অন্তত সমর্থন না দেই, ঘৃণা করতে শিখি। আমারতো মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিবেক না থাকলেও আমাদের আছে। আমরা বিবেকের এ দায় এড়াব কিভাবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।