৬৫ বছরের প্রবীণ কৈলাস সিং ১৯৭৪ সালে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে এ পর্যন্ত একটি দিনের জন্যও তিনি গোসল করেননি। শুধু তাই নয়, এতগুলো বছর কোন নাপিতকে স্পর্শ করতে দেননি তার চুল বা দাড়ি-গোঁফ। তার ৬ ফুট দীর্ঘ চুল নির্বিঘ্নে বেড়েছে। নিজের বিচিত্র এ সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কৈলাস সিং বলেন, তিনি এক সন্ন্যাসীর কাছে গিয়েছিলেন।
ওই সন্ন্যাসী তাকে বলেছিলেন, তার উপদেশ অনুসরণ করলে কৈলাস একটি সৌভাগ্যবান পুত্র-সন্তান লাভ করবেন। যে বংশের ধারাকে টিকিয়ে রাখবে। অথচ, সন্ন্যাসীর সেই ভবিষ্যদ্বাণী দীর্ঘ ৩৭ বছরেও সফল হয়নি। কারণ, কৈলাস একে একে ৭টি কন্যা-সন্তানের জনক হয়েছেন। এতো কিছুর পরও তাকে দমাতে ব্যর্থ হয়েছেন সবাই।
কৈলাস সিংয়ের স্ত্রী কলাবতী দেবী (৬০) বলেছেন, আমার স্বামীর এ ধরনের অবিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্তের কথা শোনার পর আমি তাকে তিরস্কার করেছিলাম। এক পর্যায়ে কান্নাকাটিও করেছিলাম। এমনকি তার সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমাবো না বলেও তাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম। কলাবতী দেবী বলেন, তিনি আমার স্বামী। সে কারণে আমার এর বেশি আর কিছু করার ছিল না।
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা একবার জোর করে তাকে নদীতে ফেলে গোসল করানোর প্রচেষ্টার কথাও স্বীকার করেন। স্ত্রী কলাবতী জানান, তিনি আমাদের সঙ্গে একরকম লড়াই করেই পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, এরপর থেকে বহুবার চেষ্টা করেও তাকে গোসল করাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমার স্বামী বলেন, তিনি মরতেও রাজি, তবে গোসল কিছুতেই করবেন না। শুধু একটি পুত্র-সন্তানই তার এ কঠিন ব্রতকে ভাঙতে পারে।
বহু বছর পার হয়ে গেছে। এখন আমি এতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। অবশ্য যত দুর্নামই থাকুক, কৈলাস সিং যে নিজেকে পরিষ্কার রাখার কোন চেষ্টাই করেন না, তা ঠিক নয়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি অগ্নিস্নান বা আগুনের উত্তাপে গোসল করেন। এরপর গাঁজা সেবন করেন, হিন্দু শিব দেবের পূজা করেন ও আগুনের চারপাশে নৃত্য করেন।
তার বিশ্বাস, এতেই পরিচ্ছন্নতা বা পরিশুদ্ধি অর্জন করা যায়। ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের প্রচণ্ড গরমে সারাদিন ধরে গরু চরিয়ে ও মাঠের কাজ শেষে ঘর্মাক্ত শরীরে ঘরে ফেরেন কৈলাস। আর তারপর চলে অগ্নিস্নান। গ্রামের মানুষ ও প্রতিবেশীরা তাকে প্রায়ই তিরস্কার করলেও তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, সাইকেল চালিয়ে গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় শিশুরা আমাকে দেখে তিরস্কার করে।
গোসল না করার জন্য বহু মানুষ আমাকে তিরস্কার করেন। তবে আমার এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হবে না। কারণ, এটা আমার নয়, ঈশ্বরের ইচ্ছা। অবশ্য, কৈলাসের ১৬ বছরের মেয়ে পূজা জানায়, পিতার অদ্ভুত সিদ্ধান্ত তাকে আরও জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। পূজা বলে, আমার স্কুলের বন্ধু-বান্ধবরা আমার পিতাকে এক নজর দেখতে ও সাক্ষাৎ করতে বেশ আগ্রহী।
তিনি কিভাবে বিনা গোসলে এত বছর বেঁচে আছেন, তাও জিজ্ঞেস করে। প্রথমদিকে রাগ হলেও, পরিবারের সদস্যদের কাছে ব্যাপারটা এখন স্বাভাবিক। যত যাই হোক, কৈলাস সিংয়ের শেষ কথা, আমার কোন পুত্র-সন্তান নেই। আর তাই, আমি আর কোনদিন গোসল করবো না। তবে, হয়তো পুনর্জন্মের পর আমি আবার গোসল করবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।