আমার জানালার বাইরে রয়েছে আরেকটি বড় জানালা। নিচে বারোতলা অট্টালিকার ছাদ, ডানে এক বিশাল অট্টালিকা, বামে আরেকটি আর ওপরে আমার জানালার শেড; এই হচ্ছে সেই জানালাটির ভৌগোলিক অবস্থান। আয়তনে খুব একটা বড় নয়, বড়জোর আড়াই হাজার বর্গডিগ্রী। তবে এর বিশেষত্ব এর গভীরতায়; আর জনসংখ্যায়। হাজার আলোকবর্ষ থেকে কয়েক মিটার; চিল-চড়ুই-কবুতর থেকে উরসা মেজর; জানালাটির ব্যাপ্তি এতটাই গভীর।
জানালাটিতে সারারাত ধরে মঞ্চস্থ হয় নানা ধ্রুপদী নাটক । কখনোবা মহাবীর পারসেয়াস এসে উদ্ধার করে রাজকুমারী এন্ড্রোমিডাকে; কখনো অমর বীর পোলাক্স তার প্রাণপ্রিয় ভাই ক্যাস্টর এর জন্য নিজের অমরত্ব বিসর্জন দেয়; কখনো যুগশ্রেষ্ঠ শিকারী অরিয়ন প্রাণ হারায় এক তুচ্ছ বৃশ্চিকের বিষে। যখন নাটকের অভিনেতারা হয়ে পরে ক্লান্ত-অবশ্রান্ত, মেঘেরা এসে টেনে দেয় পর্দা। দর্শকদের অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষায় রেখে বিশ্রাম নেয় পাত্র-পাত্রী। পর্দা সরলে যায়গা করে নেয় নতুন কোন ঘটনা, নতুন সব চরিত্র।
পুরো জানালা-মঞ্চের গ্যালারীতে অনেকগুলো আসন থাকলেও দর্শক আমি একা। যেন আমার একার জন্যই মঞ্চস্থ হচ্ছে সবকিছু। এভাবেই চলে আমার জানালা-দর্শন। কোনদিন রাত বারোটা থেকে একটা, কোনদিন এগারোটা থেকে বারোটা, কোনদিন হয়তো সারারাত।
নির্জন গ্যালারীতে হঠাৎ একদিন আগমন ঘটে নতুন দর্শকের।
এতদিন এক্সক্লুসিভ সুবিধা ভোগ করতে থাকা আমি হালকা ইর্ষান্বিত হই, আবার অনেকটাই পুলকিত হই একাকীত্ব ঘোচার আনন্দে। নতুন দর্শকের সাথে এন্ড্রোমিডার অদ্ভুত মিল। বারান্দার গ্রীল ধরে আকাশের পানে তাকিয়ে থাকা সহদর্শক মনে করিয়ে দেয় লোহিত সাগরের তীরে শেকলে বাঁধা বন্দীনি রাজকুমারীর কথা। পারসেয়াস হবার খুব ইচ্ছা জাগে মনে। জানালার একঘেয়ে প্রাচীন চরিত্রগুলো প্রতিস্থাপিত হয় মর্ত্যের আধুনিক চরিত্র দ্বারা।
এভাবেই চলতে থাকে প্লে ইন আ প্লে। একসময় সেই ভাবনাকে বড় ছেলেমানুষী বলে মনে হয়। হয়তো পারসেয়াসের অবহেলার কারনেই, হারিয়ে যায় মর্তের এন্ড্রোমিডা, আকাশের এন্ড্রোমিডাকে অনন্য করে। আড়াই হাজার বর্গডিগ্রী জানালায় চলতে থাকে পুরনো সব নাটক। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।