ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালে সই হওয়া এ সংক্রান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন করতে হলে ভারতের সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এ লক্ষ্যে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকার পার্লামেন্টে বিল তোলার উদ্যোগ নিলেও বিষয়টি আটকে আছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির বিরোধিতার কারণে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, আগামী ৫ অগাস্ট শুরু হতে যাওয়া রাজ্যসভার বর্ষকালীন অধিবেশনে আবারো বিলটি তুলবে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দল কংগ্রেস। আর এ জন্য বিজেপির সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে রাজ্যসভার বিরোধী দলীয় নেতা অরুণ জেটলির সঙ্গে দীপু মনির এই বৈঠক হবে বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় পত্রিকাটি।
স্থলসীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মোট সাত হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের মোট ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল বিনিময়ের কথা রয়েছে, যা নিয়ে বিজেপির আপত্তি। দলটি বলছে, ছিটমহল বিনিময় হলে যে পরিমাণ জমি হাতবদল হবে, তাতে ভারত প্রায় ৭ হাজার একর বেশি জমি হারাবে।
বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।
১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আওতায় এই ছিটমহল এবং সীমান্তের ‘অপদখলীয়’ ভূমি বিনিময়ের জন্য ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় প্রয়োজনীয় প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়।
ওই প্রটোকল বাস্তবায়নে ভারতীয় মন্ত্রিসভা গত ফেব্রুয়ারিতে সংবিধান সংশোধনের অনুমতিও দেয়।
রাজ্যসভার গত অধিবেশনে এ বিলগুলো উত্থাপনের উদ্যোগ নিয়েও বিজেপি ও আসাম গণ পরিষদের হুমকির কারণে ব্যর্থ হয় কংগ্রেস।
কোনো বিল পাস করতে হলে ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভায় অন্তত দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের যা নেই। আর সেজন্য বিরোধী দলের সমর্থনের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত সরকার।
ভারতীয় কংগ্রেস নেতাদের আশঙ্কা, রাজ্যসভার আগামী অধিবেশনে এ বিলটি পার করা না গেলে দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা স্থলসীমান্ত চুক্তি আরো অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যাবে, কেননা সামনে দুই দেশেই জাতীয় নির্বাচন।
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবং মনমোহনের কংগ্রেস সরকারের সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক এখন যথেষ্ট ভাল হওয়ায় এখনই অমীমাংসিত বিষয়গুলো মিটিয়ে ফেলা প্রয়োজন বলে মনে করছে দুই পক্ষই।
এবারের দিল্লি সফরে বৃহস্পতিবার আর কে মিশ্র স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন দীপু মনি। পরদিন তিনি অরুণ জেটলি ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে।
এর আগে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে ভারতের তখনকার বিরোধী দলে থাকা বাম দলগুলোর সমর্থন চেয়েছিল। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সে সময় দেবগৌড়া নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে বিষয়টি এগিয়ে নেয়ার সবুজ সংকেতও দিয়েছিলেন।
অবশ্য ২০১১ সালে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি শেষ মুহূর্তে আটকে যায় পশ্চিমবঙ্গের এখনকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কারণে।
দীপু মনি তার সঙ্গেও বসেছিলেন, কিন্তু তাতে ফল আসেনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।