চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি...
'এইডাতো একটা বিড়াট চিটিংবাজি'
'আফনে অহনো বুঝেন নাই' মৃদুলের গলায় হতাশার সুর।
'বুঝছি বইলাই কইলাম' চঞ্চল ভাই আবারও নিরাসক্ত স্বরে বলেন। তার মুখমন্ডলে কিছুটা কৌতুক-ভাব।
'আরে, এট্টু খোজ নিয়া দ্যখেন, ডাবলু, মানিক, বাবু ওরা এহন ভরপুর টাকা পাইতাছে'
'পাইবো' চঞ্চলভাই মুষ্ঠিবদ্ধ আঙুলের ফাঁকে সিগারেট নিয়ে মহাসুখে টান দিলেন। চোখ বুঁজে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, 'কিন্তু যেইডা চিটিংবাজি-তার মইধ্যে আমি নাই, কিন্তু তোমাগো তো বাধা দিতাছি না'
'চিটিংবাজি কইতাছেন, আবার কইতাছেন যে বাধা দিতাছেন না' রাসেল এইবার যোগকরে।
'হ, চিটিংবাজিরে কি কমু, আর তোমাগো বাধা দিমু ক্যা? পরে কইবা চঞ্চলভাই আমাগো টাকা কমাইতে বাধাদিছে'
'বাধা তো দিতাছেনই, কইতাছেন চিটিংবাজি-তাইলে কি আমরা চিটিংবাজ হইতাছি'
'হ সব ঠিকই আছে, তোমরা বুঝতাছ না'
'কেমনে'
'পত্থমে তোমরা চিটিং-এর পাল্লায় পরবা পরে তোমরাই হইবা চিটিংবাজ'
'আমরা!! কেমনে?'
'এইহানে চিটিং-এর কি আছে?'
'আরে বাই এইডা একটা সিস্টেম, সিস্টেমের মইধ্যে অটোমেটিক পইরা যাইবা'
'বুঝলাম, কিন্তু কেমনে? এইডা আমাগো বুঝায়া দিবেন না'
'পুরা হিসাবে ফালাইয়া দেখ, তাইলেই বুঝবা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং মানে চিটিংবাজি। খালি চিটিংবাজি না মহা-মহা চিটিংবাজি'
'হ সারা দেশের মানুষ খুইজ্জা পাইলো না, আর আফনে একা কইতাছেন চিটিংবাজি'
'সারা দেশের মানুষ খুইজ্জা পাইতাছে না হিসাবজ্ঞানের অভাব আর লোভ এই দুইটা কারণে'
'আমাগো মসজিদের ইমামসাব, মুন্নার বাবা, মাদ্রাসা রোডের ঐ মেজরসাব, আমাগো রিঙকুর বাই পুলিশ সার্জেন্ট এরা সবাই লোভে পরছে কইতাছেন, হেরা কি কিছু বুঝে নাই?'
'কথাডা খারাপ শোনাইলেও সত্য তারা সবাই লোভে পরছে'
'নাহ। আফনার লগে আর পারলাম না' ত্যক্ত বিরক্ত মৃদুল আবারও বলে, 'নেগেটিভ কথাছাড়া আফনের কাছে কিছু শুনলাম না চঞ্চলবাই, দুইএ্যকডা পজেটিভ কিছু কন'
'তাইলে আমার কয়ডা কথার জবাব দাও'
'কন, কি কথা কইবেন'
'তোমরা এইডার পিছে এতো টেস্ট পাইতাছ ক্যান? সহজ পথে অনেক টাকার লাইগা না?'
'হ' রাসেল ও রিঙকু দুজনেই স্বীকার করে।
'এই নেটে ঢুকতে হইলে যে জিনিস কিনতে হইবো তা কি সাধারন বাজারে পাওয়া যায়? সেটা কি যাচাই করার সুযোগ আছে?'
'না'
'ঐ জিনিসটা কি আসলেই তোমার দরকার?'
'না, কিন্তু কিনলেও তো ক্ষতি নাই'
'না কিনলে ক্ষতি কি?'
'ঐ কোম্পানির সদস্য হওয়া যাইবো না'
'খালি ঐ জিনিসটা কিনলেই কি সদস্য হওয়া যাইবো?'
'না সদস্য ফি আলাদা'
'হ, এখণ আমরা হিসাবে বসমু'
'হ-হ হিসাবটা বুঝায়াদেন'
চঞ্চলভাই একটু আরাম করে বসলেন, টেবিলে ভরদিয়ে হাতের কাছে একটা সাদা কাগজ টেনে আনলেন তারপর বললেন, 'তোমাকে বলা হয়েছে মাত্র দুইজন সদস্য যোগাড় করলেই তুমি ধীরে ধীরে টাকা পেতে থাকবে এবং একসময় প্রচুর টাকার মালিক হবে,' তাঁর কথার উচ্চারণে আঞ্চলিক টান বদলে বুকিশ হয়ে উঠলো। তিনি এখন সিরিয়াস।
'হ এইডা কইছে'
'কারণ হিসেবে তারা এটুকু বলেছে যে কেবলমাত্র কোন সদস্যের মাধ্যমেই এই পণ্য কেনা ও সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হবে, তাই এ জাল যতো ছড়াবে তুমি ততো কমিশন পেতে থাকবে, তাই তো?। '
'হ তাই তো কইছে'
'সবচেয়ে মজার ব্যপার হলো পণ্য না কিনেও শুধু সদস্য ফি দিয়ে এবং নতুন সদস্য সৃষ্টি করেও তুমি এই কমিশন পাচ্ছ'
'এর মইধ্যে জালিয়াতির কি আছে? হেরা কথা রাখছে, চুক্তি অনুযায়ী কমিশন দিতাছে'
'এবং সদস্য ফি'র একটা বড় অংশ তারা নিচ্ছে’
'হ নিতাছে'
'ধরো তুমি সদস্য হলে, পরবর্তীতে ২,৪,৮,১৬,৩২ এই ভাবে জ্যামিতিক হারে সদস্য বাড়তে থাকলো, তাই না'
'তাই'
'এবার তুমি নিজেই হিসেব করে পিড়ামিড আকৃতির ছকটা তৈরী কর। এভাবে...
১. ২ - +১=৩
১. ৪ - +৩=৭
২. ৮ - +৭=১৫
৩. ১৬ - +১৫=৩১
৪. ৩২ - +৩১=৬৩
৫. ৬৪ - +৬৩=১২৭
৬. ১২৮ - +১২৭=২৫৫
৭. ২৫৬ - +২৫৫=৫১১
৮. ৫১২ - +৫১১=১০২৭
৯. ১০২৮ - +১০২৭=২০৮৭
একটি জেলা শহরে লোকসংখ্যা যদি ২,৫০,০০০জন হয় তাহলে মাত্র ১৭তম ধাপে যেয়েই এই পদ্ধতি থেমে যাবে। কারণ তখন সদস্য সংখ্যা হবে মোট ২৬২১৪৩জন এবং এর পরের ধাপে মোট ৫২৪২৮৭জন যা ঐ শহরে নেই। এ ব্যপারটি যদি আরও জনবহুল শহরে বা জেলায় হয়, ধরি তা ২০,০০০০০ জনসংখ্যার শহরে তাহলে আর মাত্র দুই ধাপে তা শেষ হবে।
'
'ঠিক আছে, এইডাতো চলতেই থাকবো'
'চলবে না। এটা একটা অসম্ভব ব্যপার'
'কেমনে, বুঝায়া কন'
'ধরা যাক তৃতীয় ধাপ থেকে প্রথম ক্রেতা বা সদস্য কমিশন পেতে থাকলো এবং সপ্তম ধাপে তার কেনা জিনিসটির দাম সম্পুর্ণ ফেরত পেল। তাহলে দেখা যায় যে, প্রথম সদস্য যখন তার মুলধন ফেরত পেল তখন মোট ২৫৫জন এই জালে ধরা পড়লো। '
'হ। হিসাবে তো তাই কইতাছে'
'এই হিসেবে তিন লাখ জনসংখ্যার কোন শহরে যখন ২৬২১৪৪ জন লোক সদস্য হবে তখন লাভবান হবে মাত্র ৪০৯৬ জন সদস্য।
আর বাকী সদস্যদের খুজে বের করতে হবে ৫২৪২৮৮ জন আগ্রহী সদস্যকে, যা অসম্ভব। আর এভাবেই খেলাটির পরিসমাপ্তি ঘটবে। '
'তার মাইনে বাকী সবাই টাকা হারাইল?'
'হ্যা'
==========
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।