চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি...
বিকেল তিনটা। রাসেল ও মৃদুল এসে পৌছেনি। রিঙকু বেশ উত্তেজিত। বড় বোন প্রেমে পড়েছে এটা জানতে পেরে ছোটভাইয়ের কি করা উচিৎ? তাও যদি ছোট্টুর মতো একটা সন্ত্রাসীর সাথে হয়? বাবা-মাকে জানানো যায় কিন্তু সেটা ঠিক হবে না। তাহলে কি করা যায়? বিহিততো একটা কিছু করতেই হবে? হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না।
রাসেল আর মৃদুলের সাথে এ ব্যপারে পরামর্শ কি ঠিক হবে? হাজার হলেও একান্ত পারিবারিক ব্যাপার। ওরা যদি আদারওয়াইজ নেয়? তারপর আছে আজকের স্কুলের ঘটানো পেজগি। ঘটনাটির কথা মনে করে রিঙকুর মন ভালো হয়ে গেল। অনেকদিন পর জম্পেশ এক মজা করা গেছে।
রাসেল আর মৃদুলকে দেখা গেল।
দুজনই হাসছে। মৃদুল রিঙকুকে দেখে হাসি আরও বি¯তৃত করে।
'কি রে রিঙকু-কাহিনী কি?'
'কাহিনী তো তগো কাছে'
'যাই কস্ ধরা পড়লে... কইলাম খবর আছে'
'নাহ। পড়ার চান্স কম' রাসেল দাবী করে।
'ক্যামনে?' রিঙকু এবং মৃদুল দুজনেই জিজ্ঞেস করে।
'এক বড় আপার মাথায় যদি কিছু না খেলে, আর আমরা তিনজন যদি কাউরে কিছু না কই, তাইলে ধরা পড়মু না'
'ক্যা কবির স্যার রে গনায় ধরতাছস না যে' মৃদুলের জিজ্ঞাসা।
'কবির স্যারও কুল পাইবো না, স্যার গম্ভীর আর রাগী কিন্তু...'। রাসেল বৃদ্ধাঙ্গুলী নাচিয়ে দেখায়। তারপর বলে, ভয় শুধু বড় আপারে নিয়া।
'তাইলে রিক্সতো ফিফটি ফিফটি'।
'শুধু কাইলকার দিন গেলে সব ঠান্ডা' রাসেলের মত।
'ক্যামনে'
'কাইল বিষ্যুদবার। আর শনিবারে স্কুলে শিক্ষা-অফিস থাইক্যা ইনেক্সপেক্শনে লোক আসবো' মৃদুলের আনন্দিত কন্ঠ।
'কিন্তু...' রিঙকুর চিন্তিত উচ্চারণ।
'এইহানে আবার কিন্তু কি?'
'মফিজ স্যার যেমনে চেত্ছে বেটা'
'ব্যপার না, বড় আপার মাথা ঠান্ডা হইলেই বেবাক ঠান্ডা'
'হ ঠান্ডা হওয়া নিয়া কথা'
'তিনি যেমনে তাড়াতাড়ি রাগ হয়, তেমনে ঠান্ডাও হয় তাড়াতাড়ি'
'হইলেই ভালা'
'নো চিন্তা।
চুপচাপ থাক, পানি কদ্দুর গড়ায় দেহি'
'ধরা পড়লে?' মৃদুলের জিজ্ঞাসা।
'তর যা হইবো আমাগোও তাই হইবো'
'হ্হ'
***
হাসু ভাই পান মুখে দিলেন তারপর একদলা চুনসহ বোঁটাটিও মুখে পুড়লেন। চাবিয়ে মুখের নিয়ন্ত্রিত পাল্লায় আনতে সময় নিলেন। 'তোমরা কি শক্তির নিত্যতা সূত্র পড়ছো?'
'পড়ছি হাসু ভাই' রাসেল জবাব দেয়।
'রিঙকু! তুমি এইরম চুপচাপ ক্যান?'
'না হাসু ভাই-এম্মি'
'তো শক্তির মতোন জ্ঞানেরও নিত্যতা সূত্র আছে'
'এইডা কে কইছে'
'এইডা হাসু মিয়ার কথা'
'ও আইচ্ছা'
'হেইডা কেমনে'
'বিশ্বে জ্ঞান সীমিত।
মানুষ নতুন কোন জ্ঞান তৈরী করতে পারে না। সে শুধু খুইজ্জা বাইর করতে পাড়ে'
'ক্যান হাসু ভাই, এই খুইজ্জা বাইর করাডাইতো আবিষ্কার, আর আবিষ্কার মানেই তো নতুন জ্ঞান তৈরী' রাসেল ধরে বসে।
'এই যেমন কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেন। এই খানে কলম্বাস কি আমেরিকা তৈরী করছিলো না খুইজ্জা বাইর করছে'
'খুইজ্জা বাইর করছে'
'আমি তো এইডাই কইতাছি। আমেরিকাতো আগে থেইক্কাই বর্তমান ছিল'
'আপনের কথা একদিক দিয়া বিচার করলে এমন মনে হয়' রিঙকু বলে 'কিন্তু... '
'কিন্তু কি?'
'আমেরিকা আবিষ্কার আর রেডিও-টেলিভিশন আবিষ্কার কি এক জিনিস'
'দ্যখো আসল কথা হইলো অভিজ্ঞতা, একটা অভিজ্ঞতা অর্জন আর অপরটা অভিজ্ঞতার প্রয়োগ'
এই যুক্তির কাছে থ হয়ে গেল তিনজন।
ওদিকে হাসু ভাইয়ের মধ্যে একটা চাপা আনন্দ। তিনি মনে মনে ভাবছেন, 'যাক এই বিচ্ছুগুলার মুখে ছিপি দেয়া গেল'। মৃদুলের কাছে হাসু ভাইকে মাসুদ রানার সবচেয়ে বড় শত্রু পাগল বিজ্ঞানী কবীর চৌধুরীর মতো মনে হতে লাগলো।
'অভিজ্ঞতার বাইরেও অনেক কিছু আছে' রিঙকু পাল্টা যুক্তি দেখাতে চেষ্টা করে।
'কিচ্ছু নাই'
'অলৌকিক ব্যপার গুলা?'
'অলৌকিক বইলা কিছু নাই'
এবার রিঙকুর চোখে মুখে রৌশনাই ফুটে ওঠে।
সে বলে 'কি যে কন হাসু ভাই; আমাগো চারপাশে হাজার হাজার অলৌকিক ঘটনা আছে যার কোন ব্যখ্যা আপনে দিতারবেন না'
'হ, দিতারবেন না' মৃদুলও একমত প্রকাশ করে।
'আরে ব্যপারটাতো এই খানেই গিট্টু লাগছে। আমরা যেই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা দিতারি না ওইডারেই অলৌকিক কই। কারণ অভিজ্ঞতা নাই, খুইজ্জাও বাইর করতে পারি না'
'যেমন?'
'যেমন... ধরো এই কাঁচের গেলাসটা আমি উপর থাইক্কা ফ্যেললাম, কি হইবো?'
'ভাইঙ্গা যাইবো'
'হ। ভাঙ্গবো'
'এই রকম আরো দুইডা ফ্যেললাম?'
'ভাঙ্গবো'
'এই রকম একশটা ফ্যেললাম?'
'একশটার মধ্যে দুই-চাইরটা নাও ভাঙ্গতে পাড়ে' এবার রাসেল মত প্রকাশ করে।
'হ, দুই-চাইরটা নাও ভঙ্গতে পাড়ে। ' হাসুভাই একটু দম নিলেন। আবার শুরু করলেন, 'এইযে তোমরা কইলা গেলাসগুলা ভাঙ্গবো এইডা তোমরা অভিজ্ঞতা থাইকা কইলা, যেহেতু তোমরা জানো কাঁচের জিনিস ভাঙ্গে। কিন্তু রাসেল জানে কখনো কখনো ভাঙ্গে না, যদি সেইটা বিশেষ কায়দায় পড়ে। আবার রিঙকু জানে না এই ব্যপারটা।
এখন যদি রিঙকুর সামনে এমন ঘটনা ঘটে যার বিজ্ঞান সম্মত ব্যখ্যা সে দিতারে না- তাইলে সেইটা রিঙকুর কাছে অলৌকিক হইতে পারে, কি পারে না?' হাসু ভাই গুরুত্বপূর্ণ গুরুগিরি শেষ করলেন।
(চলবে...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।