I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.
প্রথমবার যা লিখেছি
এবছর নভেম্বরে জাইবা তিনে পা দেবে। কিন্তু তখন তো ওকে স্কুলে দেওয়া যাবেনা। স্কুলগুলোতে ভর্তি হয় জুলাইয়ে, তখন আবার ওর বয়স তিনের চেয়ে বেশি হয়ে যাবে। আমি এবার স্কুল থেকে ফর্ম নিতে গেলাম, আমার মেয়েকে তিনের আগেই স্কুলে দিতে চাই। এবছরেই।
কিন্তু স্কুল থেকে আমাকে ফর্ম দিলোনা। সামনের বছরে প্লে-গ্রুপ, তারপরে নার্সারি, তারপরে কেজি-ওয়ান-টু, এরপরে আসে ক্লাস-ওয়ান।
তারমানে ক্লাস ওয়ান শুরু করবে তারা ৭ বছর বয়সে। জাইবার ক্ষেত্রে সেটা ৭ বছর আট মাস।
দেরী হয়ে যাচ্ছেনা? আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম চার বছরে; সেটাই ছিল কেজিওয়ানে।
৬বছরে গিয়ে উঠলাম ক্লাস ওয়ানে। বয়স হিসেবে ইংলিশ মিডিয়ামে আমার মেয়েরা এক বছর পিছিয়ে যাচ্ছে মনে হয়। অথচ স্কুলে ভর্তি হচ্ছে তারা সেইইই তিন বছর বয়সে। তবে মেইন্সট্রিমে আসতে চারটা বছর পার করার মানে কী? আমি যদি মেয়েকে দেরীতে ভর্তি করাতে চাই, নার্সারি বা কেজিতে, সেই উপায় নেই। কারণ সিটগুলো প্লেগ্রুপে থাকতেই ভর্তি হয়ে যায়।
স্কুলে যখন জিজ্ঞেস করি মাত্র তিনে বাচ্চারা স্কুলে গিয়ে কী শিখবে? প্রেশার পড়েনা ওদের উপর? তখন স্কুল থেকে বলা হয় প্লেগ্রুপে বাচ্চারা খেলে, ছবি আঁকে, ছড়া শেখে জড়তা কাটানোর জন্য। তাই যদি হয় তবে মাঝে মাঝে তারা নার্সারিতে একজন দুইজন বাচ্চাকে রীতিমত পড়া-টড়া ধরে ইন্টারভিউ নিয়ে ঢোকায়, দেখলাম!! যেন সেই বাচ্চা প্লেগ্রুপে না-পড়ে অনেক পিছিয়ে আছে! আর এমন যদি হয় প্লেগ্রুপের সময়টা আমার বাচ্চা অন্য কোনও স্কুলে যায়নি, ঘরেই বসে ছিল তবে তো তার ফর্মই আমলে নেওয়া হবেনা। ইন্টারভিউতে ডাকা দূরে থাক।
ক্লাস টু পর্যন্ত আমি পড়েছিলাম পাড়ার এক কিন্ডারগার্টেনে। মডেল-কেজি স্কুল ছিল স্কুলটার নাম।
বেড়ার ক্লাসরুম, টিনের চালা দেওয়া সেই স্কুলে খুব মায়া-মায়া একটা ভাব ছিল। টিচারদের ‘আপা’ বলে ডাকতাম। কিছু হিন্দু টিচার ছিলেন। শুনতাম তাঁদের অন্য টিচাররা ডাকছেন নীলিমাদি/শচিদি এভাবে। আমরা ওনাদের ডাকা শুরু করলাম নীলিমাদি-আপা, শচিদি-আপা এইভাবে।
স্কুলের সামনে বড় একটা মাঠ ছিল। অনেক পরে একদিন সেই স্কুলে ঘুরতে গিয়ে দেখি বড় মাঠটা ছোট হয়ে গিয়েছে। অথচ মাঠের আকার আয়তন কিন্তু আগের মতই আছে। ছোটবেলার চোখে যে মাঠকে বিশাল মনে হতো, বড়বেলার চোখে তার মাপ কমে গিয়েছে। সেই স্কুলে আমার ১৭ বছরের বড় ভাই থেকে শুরু করে আমার আড়াই বছরের ছোট ভাই পর্যন্ত একনাগাড়ে পড়েছিলাম।
ক্লাস ফোরের পরে সেই স্কুলের ছাত্ররা বেশিরভাগ ভর্তি হতো সরকারী উচ্চবিদ্যালয়ে আর মেয়েরা বেশিরভাগ যেত খাস্তগীরে।
সেই স্কুলে শুরু করেও কিন্তু আমার বা আমার ভাইবোনের প্রাথমিক শিক্ষায় কোনওভাবেই অন্যকোনও নামী স্কুলের চেয়ে কমতি ছিলনা। তার প্রমাণ মিলেছে যখন এই আমরাই অন্য স্কুলে গিয়ে ভাল ছাত্রীদের মধ্যে নিজেদের নাম লেখাতে পেরেছি। আমার সেসময়কার বান্ধবীরা পরে দেখেছি খাস্তগীর থেকে স্ট্যান্ডও করেছে।
আবার আজকালকার স্কুলগুলোর সাথে তুলনা চলে আসে।
খুব কি কেউকেটা হয়ে যাচ্ছে আমাদের বাচ্চারা তিন বছর বয়স থেকে এমন নামীদামী স্কুলে পড়ে? তবে হ্যাঁ মেয়েদের আমার বাসায় পড়াতে হয়না। যা পড়ার স্কুলেই পড়ে আসে, বাসায় নিজে নিজেই হোমওয়ার্ক করে। তবুও যেন মনে হয় বিশাল কোনও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। বেড়ার ক্লাসরুমে বসে টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ শুনতাম। মাঝে মাঝে ছাদের ফুটো দিয়ে টপটপ করে একদুইফোঁটা পানি ক্লাসে পড়তো।
স্কুলে গিয়ে দুটো ছড়া বলতে শিখেছিলাম অন্যদের কাছ থেকে।
‘আমাদের ইস্কুল দুই/তিন তলা
টিফিনেতে খেতে দেয় পাউরুটি কলা।
আমাদের মাস্টার আইএবিএ পাশ।
লেখাপড়া না করলে মারে ঠুশঠাশ!’
মনে হতো ঠুশঠাশ মার খাওয়াটা কোনও ব্যাপারই না। সত্যি আসলেই কোনও ব্যাপারই ছিলনা টিচারদের হাতে মার খাওয়াটা।
স্কুল ছুটি হলে হৈহৈ করে সবাই একসাথে বলে উঠতাম
‘ছু—টি !!
গরম গরম রু—টি!
এককাপ চা
সবাই মিলে খা—
খেয়ে চলে যা—!!’
এই ছড়া বলতে পারার মধ্যে যে দিলখোলা আনন্দ সেটা গল্প করে আমার মেয়েদের বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তার চোখে স্বপ্ন এঁকে দেওয়া ছাড়া এর বেশি আমি আর কিছুই করতে পারিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।