চিন্তা-চেতনা
ইসলাম চলমান পুঁিজবাদী বিশ্বের বাজার অর্থনীতির কোন প্যাটেন্টকৃত পণ্য নয়। ব্র্যান্ড নেম হিসেবে একে ব্যবহার করার অধিকারও শরীয়ত কাউকে প্রদান করেনি। বাণ্যিজ্যিকভাবে তো নয়ই। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবেও ইসলাম শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার শরীয়ত অনুমোদন করে না। এজন্য শরীয়তের কিতাবে কিংবা তারও আগে সাহাবায়ে কেরামের সময়ের কোন দলিল বা হাদিসে ইসলামী সমাজ বলে কোন কিছুর স্থান হয়নি।
ইসলামী আইন, ইসলামী খাদ্য বা ইসলামী পোষাক বলেও কুরআন, হাদিস বা শরিয়তে কিছু পাওয়া যায় না। শরিয়ত প্রবর্তিত হওয়ার আগে মুসলমানদেও আইন বলতে কুরআন হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের গৃহীত সিদ্ধান্তবলীর অনুসরণ করার অলিখিত নীতি সমাজে চালু ছিল। তবে শরিয়ত প্রবর্তিত হবার আগে বা পরে কখনো ইসলামী আইন শব্দ ব্যবহার হয়নি। কুরআনের বিধান, হাদিসের বিধান হিসেবে সমাজে হালাল হারমের বিধান কার্যকর ছিল। হালাল খাদ্য, সুন্নাতী পোশাক, সুন্নাতের খেলাফ ইত্যাদি শব্দ শরীয়ত প্রবর্তিত হবার পরও সমাজে চালু ছিল।
এমনকি মুসলমানদেও আমলী জিন্দেগী প্রশ্নে দার্শনিক ও তাত্তিকভাবে মুসলিম সমাজে চারটি পৃথক মাযহাবের সৃষ্টির পরও বিভক্ত মুসলিম সমাজ কোন ইসলামী নাম ধারন করেনি। তারা কেউ হানাফী হয়েছেন, কেউ শাফেয়ী, কেউ মালেকী, কেউ হাম্বলী নামে নিজেদেও পরিচিত করেছেন। নিজ নিজ ইমামদেও নামে মুসলিম সমাজ নিজেদেও বিভক্ত করেছে। কিন্তু ইসলামকে বিভক্ত করার স্পর্দা কেউ দেখায়নি। এমনকি যারা এই চার ইমামের কাউকেই অনুসরণ যোগ্য মনে করতেন না, তারা সমাজে নিজেদেরকে লা মযহাবী হিসেবে চিিহ্ণত করেছেন।
উপমহাদেশেও তারা লা মাযহাবী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। স্বাধানীতার পর তারা প্রথমে মোহাম্মদী ও পরে আহলে হাদীস নাম ধারণ করেন। কিন্তু কেউই সরাসরি নিজেদেরকে ইসলামী বলে দাবি করেনি বা ইসলামকে ব্যবহার করেনি।
বিশ্ব মুসলিম আমলী জিন্দেগীতে চার ইমামের অনুসারী হলেও কার্যত শিয়া সুন্নী দুইভাগে বিভক্ত মুসলিম বিশ্ব। কিন্তু কেউ নিজেদেও ইসলামী বলে দাবী করেনা শিয়া বা সুন্নী হিসেবেই উল্লেখ করে।
দার্শনিকভাবে প্রথম ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার দাবি তোলেন সুন্নী সম্প্রদায়ের এযুগের ইসলামী চিন্তাবিদ ইমাম ইবনে তাইমিয়া। রাজনৈতিকভাবে এ দর্শনের প্রথম বাস্তবায়ন ঘটে সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সউদের আমলে। পরবর্তীতে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানেও নব্য ইসলামী সমাজের ধারনার বিকাশ ঘটে। এরপর উপমহাদেশেও রাজনৈতিকভাবে এ ধারনার বিকাশ ঘটতে শুরু করে। এতে সবচে’ বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় শরিয়ত ও মুসলিম সমাজ।
মুসলিম খেলাফত বা সালতানাত পতনের পর বিগত শতাব্দীর শুরুতে আমরা প্রথম মুসলমানদের রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত হতে গিয়ে ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহার করতে দেখি। ১৯০৬ সালে উপমহাদেশের রাজনীতিতে মুসলিম লীগের আত্ম প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এর আগে মুসলমানরা রাজনীতি বলতে খেলাফত বা খেলাফত ফিওে পাবার আন্দোলনকে বুঝত। ধর্মীয় নেতারা তখন রাজনীতি করতেন উলামায়ে হিন্দ, উলামায়ে সিন্ধ, উলামায়ে দেওবন্দ, জমিয়তে উলামা, নিখিল ভারত উলামা লীগ ইত্যাদি নামে। এরপর শুরু হয় সরাসরি ইসলামী শব্দের ব্যবহার কওে রাজনীতি।
যেমন জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি।
বাংলাদেশে পাকিস্তান আমল থেকেই জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন থাকলেও ১৯৭২ সালে এসব দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান ও যুদ্ধকালীন সময়ে ইসলামের নামে বিতর্কীত ভ’মিকার কারণে তাদেও ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ১৯৭৬-৭৭ সালের দিকে বাংলাদেশের ওয়াজ মাহফিলগুলোর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বদলে যেতে শুরু করে। পোষ্টারগুলোতে এসময় লেখা হতে শুরু করে তিনদি ব্যাপী বিশাল ইসলামী মাহফিল, ৭দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলন ইত্যাদি।
আর একুশ শতকের বাংলাদেশে দেখছি ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, সমাজসেবা, রেডিও, টিভি, পত্রিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য সরাসরি ইসলামের নামেই পরিচালনা শুরু হয়ে গেছে। ইসলাম এর বাণিজ্যিকীকরণ কারা করলো? কোথায় এর প্যাটেন্ট নিবন্ধিত হলো? এমনকি এজন্য শরিয়াহ কাউন্সিল নাম দিয়ে শরীয়তকে পর্যন্ত ব্যবহার করা শুরু হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় বাণিজ্যেও স্বার্থে ব্যবসার উপকরণ হিসেবে মনোগ্রাম বা বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে সরাসরি ব্যবহৃত হচ্ছে, পবিত্র ক্কাবাঘর বা মদীনার রওজা শরীফের প্রতিচ্ছবি। যা শরীয়ত অনুমোদন করে না। উদাহরণ হিসেবে প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ এ যুগের মুজাদ্দেদ ড. জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন টিভির নামটি খেয়াল করি।
তাদের টিভির নাম পিস টিভি। ইসলামী টিভি নয়। অথচ পিস টিভিতে ২৪ ঘন্টা ইসলামেরই চর্চা হয়। কিন্তু কোন অন্ঠুানের নাম ইসলামী শব্দসহযোগে নয়। অতএব, বুঝ হে সুজন যে জান সন্ধান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।