বাস্তবতাময় প্রকাশ্য একথা ঠিক যে, শাহবাগের অভুতপূর্ব গনজাগরনের যুদ্ধাপরাধী বিরোধী আওয়াজ যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক সহযোগি বিএনপির কোমরে ভালই আঘাত করেছিলো। কিন্তু যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের দাবি, ধর্মীয় অবমাননা, নাস্তিক-আস্তিক ইস্যু, সর্বপরি ধর্মীয় আবেগ ব্যবহার এবং শাহবাগের প্রশ্ন বিহিন আন্দোলনকে দলীয় অনুগত্যের মোড়কে ঢেকে বিএনপি কোমড় সোজা করে দাড়ানোর চেষ্টা করছিল, হয়তো বেশ ভালো ভাবেই ঘুরে দাড়িয়েছিলো....পুলিশের গুলিতে প্রায় শতাধিক মৃত্যু, শুক্র-শনি মিলিয়ে একাধিক দিন কিম্বা একের পর এক হরতাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গুলি বিদ্ধ হওয়া সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতির টম এন্ড জেরীর খেলায় বিএনপি ছিলো চাঙ্গা, সরকার ছিলো বিব্রত....
সরকারের এই শেষ সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে দূর্বল এবং অথর্ব বিরোধীদলের অবধারিত অথচ হঠাৎ জেগে ওঠা আত্ববিশ্বাসের ধারাক্রম রক্ষায় তারা খুঁজে ফিরছিলো হরতালের অজুহাত....যে অজুহাতের ইস্যু হতে পারে-
১. দলীয় সমাবেশে পুলিশি হামলা...
২. নিজেরাই বিশৃংখলা সৃষ্টি করা...
এ ছাড়াও একটি সম্ভাব্য কারন হতে পারে- যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে টালমাটাল জামাত, রাজপথে কিছুটা দুরত্ব রাখা জোটসঙ্গী বিএনপিকে ইস্যু তৈরী করে রাজপথে রাখা....
বিএনপি আগেই ঘোষনা দিয়েছিলো- তাদের সমাবেশে ঝামেলা হলে হরতাল। সম্ভাব্য কারন-
এক. সরকারকে চাপে রাখা।
এবং দুই. হরতালের ক্ষেত্র প্রস্তুত রাখা।
কিন্তু সৌভাগ্যই হোক কিম্বা দুর্ভাগ্য, বিএনপির সমাবেশ চলছিলো শান্তিপূর্ন ভাবে।
পুলিশ ছিলো সহনশীল। হঠাৎ বিষ্ফোরন হলো ককটেল, পুলিশ ছিলো তখনো নিরব এবং ইস্যু বিহীন হাস্যকর হরতাল ডাকলো বিএনপি!!! সে সময়টা ছিলো বিএনপির জন্য হতাশার, যাদের কাংখিত এবং ঘোষিত হরতাল হচ্ছিল প্রশ্নবিদ্ধ!!
কিন্তু তারপরেই এ হরতালকে বৈধতা দিতে মরিয়া হয়ে উঠলো পুলিশ! বিএনপির অফিসে চললো লাইভ-ক্যমেরা-এ্যকসানে অবিশ্বাস্য অভিযান!!! সরকারের লাঠিয়াল পুলিশ হয়ে উঠলো বিরোধীদলের অযৌক্তিক হরতালের যৌক্তিকতার ঢাল! একে একে গ্রেফতার হলো হাইভোল্টেজ নেতা, রুমে রুমে উদ্ধার হলো ককটেট বোমা!!! অবিশ্বাস্য...........
এভাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার এবং দেশের অন্যতম প্রধান দলের অফিস থেকে ককটেল বোমা উদ্ধার অবিশ্বাস্য বাস্তবতা!! দুঃখজনক...লজ্জাজনক....নিন্দনীয়...........
তবে প্রশ্ন হলো এ দুঃখ, লজ্জা এবং এ নিন্দা আপনি কাকে জানাবেন?
এ কথা সত্য, এভাবে রাজনৈতিক নেতাদের গন গ্রেফতার কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
আবার এ কথাও সত্য, একটি প্রধানতম দলের অফিসে বিস্ফোরক প্রত্যাশা করা যায় না।
গনগ্রেফতারের নিন্দাটি প্রশ্নাতিত......এটা সরকারের ওপর, নির্দেশপালনকারী পুলিশের ওপরই বর্তায় এবং যা হরতালের যৌক্তিক অযুহাতই তৈরী করে..
আর ককটেল বোমা উদ্ধার!!! এ দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় হরতালে, মিছিলে, সমাবেশে এখনো ব্যবহার না হওয়া ককটেল গুলো পাওয়াটা একেবারে অস্বাভাবিক নয়! এটা রাজনীতিক দৈন্যতা, এটা অবশ্যই নিন্দনীয়........
কিন্তু কিছু বিষয় অবধারিতভাবেই প্রশ্নের উদ্দেগ করছে-
বিএনপির অফিসে অভিযান পরিকল্পনা কি আগেই ছিলো? কিম্বা ককটেল বোমা পাওয়ার গোয়েন্দা তথ্য কি আগেই ছিলো?
উত্তর- না ছিলো না। পুলিশের বরাতে জানা যায়-তারা আক্রান্ত বলেই কার্যলয়ে অভিযান চালিয়েছে।
অর্থ্যাৎ কার্যলয়ে বোমা পাওয়ার কোনো গোয়েন্দা তথ্য ছিলো না। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে তল্লাসি এবং মিডিয়া ট্রায়াল কেন???
এ কথা সত্য মিডিয়া ট্রায়াল সচ্ছতার প্রমান। কিন্তু এ কথাওতো সত্য, ইতিপূর্বে এক মামলায় ৩৩ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এ কার্যলয় থেকেই নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তখন কিন্তু তল্লাসি এবং মিডিয়া ট্রায়াল হয় নি!!
গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া হঠ্যাৎ করে তল্লাসি এবং মিডিয়ায় প্রচার কি সন্দেহ জাগায় না!! আর পুলিশও নিশ্চই এতো বোকা নয় যে এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে টিভি চ্যানেলের লাইভ টেলিকাস্টের হাইভোন্টেজ তল্লাসিতে কিছুই পাওয়া যাবে না, অথচ সন্ধ্যার লাইভ সম্প্রচারের ক্যামেরা মাঝরাতে তাদের জন্য টকশোকে মিষ্টি করে ফেলবে!!! চিনিতে রহস্য থাকা একেবারে অসম্ভব না।
আমি সত্যি কনফিউজড! আমি নিন্দা কাকে জানাবো এটা স্থির করতে পারলাম না! তবে সরকার এবং পুলিশকে বিএনপি নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ দিতে পারে- তাদের অযৌক্তিক হরতালকে বৈধতা দেবার জন্য....... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।