আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নন্দিত নিন্দিত সমালোচিত দিন বদলের বিচারপতি।

আমাদের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে আমরা অনেক হাস্য রসাত্নক ঘটনা দেখেছি। সরকারের পরিবর্তনে একটি বিচারের ভিন্ন ভিন্ন রায় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমাদের বিচারালয় সব সময় সকল অবৈধ শাসকের শয্যাসঙ্গীর ভুমিকা পালন করতে দেখেছি। সর্বশেষ গত সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে বিশেষ আদালতের বিচারকদের মনোচিকিৎসকের ভুমিকা আমাদের ভাবিয়েছে। মনোচিকিৎসক বলছি এজন্য তখন বিচারক কথিত রাজনৈতিক দুর্নীতিবাজদের চেহারার দিকে তাকাতেন, আর রায় দিতেন, লোকটা যত বছর বাচবে তত বছর জেল।

দেশের বিচারাঙ্গনের ইতিহাসে সর্ব্বোচ্চ নন্দিত নিন্দিত সমালোচিত নাম বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। সরকারী দলের মতে- বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, বিশ্বের ২০ জন শ্রেষ্ঠ বিচারপতির একজন। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে নিয়ে গেছেন। ‘বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ইতিহাসে খায়রুল হক স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিরোধীদলের মতে- নন্দিত নয় নিন্দিত হয়ে বিদায় নিয়েছেন দেশের ঊনিশতম প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক।

একযুগের বিচারিক জীবনে গণমানুষের ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলা জট কমাতে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো নিষ্পতির দিকে তার নজর ছিল বেশী। এসব মামলা দ্রুত শুনানি করে ধারাবাহিকভাবে রায় দিয়ে গেছেন। মামলার রায় সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক হওয়ায় তিনি হয়ে উঠেছেন সরকারের আস্থাভাজন। এর ফলে তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায় করে বর্তমান সরকারের আমলে আপিল বিভাগে নিয়োগ পান এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘেনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি হন। এতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও বিতর্কিত হয়েছে দেশের বিচার বিভাগ।

সংবিধানকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে দেশ ও জাতিকে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি হিসেবে গত সাত মাসের দায়িত্ব পালনকালে তিনি আদালতকে ব্যবহার করে একের পর এক বিতর্ক উসকে দিয়েছেন। যার ফলে দেশের রাজনৈতিক মাঠ হয়ে উঠছে উত্তপ্ত। দেশে চলমান সাংবিধানিক শূন্যতার যে অভিযোগ এর জন্য দায়ী তিনিই। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করার মাধ্যমে এই সাংবিধানিক শূন্যতার সূচনা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল,সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে করা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল,সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের করা সপ্তম সংশোধনী বাতিল, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক স্বীকৃতি, নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূসকে অপসারণের সরকারি আদেশকে বৈধতা দেয়া,বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে দায়ের করা লিভ টু আপিল না শুনেই তিনি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়া এবং দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক কে সাজা দেয়ার ঘটনা তার সময়েই ঘটেছে। সরকার পক্ষে অভূতপূর্ব নজিরবিহীন রায় দেয়ার ঘটনায় বর্তমান সরকার নিজেই চরম অভিভূত। আওয়ামীলীগের অনেকেই তার রায়ে হতভম্ব। আওয়ামীলীগ নিজেই এতটুকু আশা করেনি। বিচারপতি তাদের পক্ষে রায় দিবে এটা তারা জানতো।

কিন্ত এতবেশী পক্ষপাতিত্ব করবে এটা সরকার ভাবেনি। তার রায়ে প্রধাণমন্ত্রী ও বিব্রত হয়েছেন। ঢাকার একটি সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারপতিদের প্রতি সব ধরনের ভয়-ভীতি, রাগ-অনুরাগ ও আবেগ পরিহার এবং সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিচারকার্য পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। দেশের আইনজীবীদের শীর্ষ সংগঠন সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশন অভিযোগ করেছে প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালনের গত সাত মাসে এ বিএম খায়রুল হক বিচার বিভাগকে ধ্বংস করতে যা কিছু করার সবই করেছেন। বারের পক্ষ থেকে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতার জন্য তাকে দায়ী করে বলা হয়েছে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে এটা করা হয়েছে।

অথচ মুন সিনেমা হলের সম্পত্তির জন্য পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করার দরকার ছিলনা আবার তিনিই পঞ্চম সংশোধনীর নিজের পছন্দমত কিছু ধারাকে বৈধতা দেন। বারের পক্ষ থেকে এজন্য এবিএম খায়রুল হককে অমার্জনীয় এ অপরাধের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা না হওয়ার ঘোষণা দাবি করা হয়েছিল। বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে এক কথায় মূল্যায়ন করতে একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে বার সভাপতি বলেন, তিনি ভদ্র এবং চালাক লোক। বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে সাম্ভব্য সব কিছু তিনি করে গিয়েছেন। নির্দ্বিধায় তিনি আপনার গলায় ছুরি চালিয়ে দেবেন আপনি টেরও পাবেন না।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশের একটি প্রতিষ্ঠানও দলীয়করণের বাইরে নেই। সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগকেও আওয়ামী লীগের অংশে পরিণত করা হয়েছে। বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে অধিষ্ঠিত হয়ে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক পুরোটা সময় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হাইকোর্টের কোনো একটি ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের বিপক্ষে রায় দেয়ার পরপরই তিনি ওই বেঞ্চের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে দলীয়করণের ন্যক্কারজনক অধ্যায় রচনা করেছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাহী পরিষদে গৃহীত সিদ্ধান্তই আপিল বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এ সুযোগে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকার দেশ চালায়। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক শপথ ভঙ্গ করেছেন অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেছেন, বিশ্বাসঘাতক খায়রুল হককে একদিন জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। সংবিধান নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা সৃষ্টিতে সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। বিচারপতি খায়রুল হক পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করলেও কুখ্যাত চতুর্থ সংশোধনী নিয়ে কোনো একটি কথাও বলেননি। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করতে হলে বাকশালে ফিরে যেতে হবে।

আর বাকশালের কী পরিণতি হয়েছিল তা সবাই জানে। খায়রুল হক নিম্নমানের ভাষায় এ রায় লিখেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন ভাষায় অন্য কোনো বিচারপতি রায় দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। আমারদেশের একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টে প্রকাশিত- প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। ২০০৯ সালের ২১ জুন শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রায় দেন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। রায়ে বলা হয়—জিয়া নয়, শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক।

এই রায়ের কয়েক দিন পর একজন তরুণ সংসদ সদস্য ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী চেকটি বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের কাছে তার দফতরে পৌঁছে দেন বলে জানা গেছে। ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিমকোর্ট শাখায় বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এ টাকা জমা হয়। তখন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ছিলেন। অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার দিনেই তিনি আবার ৯ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে খায়রুল হক বলেন- আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না।

আপনারা প্রধানমন্ত্রীর অফিসকেই জিজ্ঞাসা করুন। আমি রিটায়ার করেছি। প্লিজ ফর গডস সেক, লিভ মি অ্যালোন। আমাকে অ্যাম্বারাস করছেন কেন। আমরা বলতে চাই দেশের সকল মানুষকে সংঘাত সংঘর্ষের মধ্যে ঠেলে দিয়ে আপনি লিভ মি অ্যালোন বলতে পারেন না।

দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, আগামী দিনের রাজনৈতিক সংঘাত, প্রাণহানি, এবং আরেক ওয়ান ইলেভেনের উজ্জল সম্ভাবনার জন্য নিঃসন্দেহে আমাদের দিন বদলের বিচারপতি শতভাগ দায়ী। তার কর্ম তৎপরতার মধ্য দিয়ে তিনি জাতিকে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ধাবিত করেছেন। ইতিহাস কখনো তার এ আচরণ কে ক্ষমা করবেনা। সময়ের ব্যবধানে তাকে আবার এ আদালতেই বিচারের জন্য দাড়াতে হতেও পারে। আবদুল কাদের সুঘ্রাণ লন্ডন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.