অস্থির এই সময়ে কিছু স্বস্তির সুবাতাস ছড়াতে চাই, আমি ক্রমঃশ আপনারে বিলিয়ে যাই তুমি সুখী হবে বলে... ভাবতে এবং লিখতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে- ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’ বলে একজন আজম খান আর আমাদের গান শোনাবেন না। বাংলাদেশের পপসঙ্গীতের জনক, পপসম্রাট আজম খান নির্জীব অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন, তাঁকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন- এভাবে তাঁকে আর বেশীক্ষণ বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। আমরা তাঁর শেষ মুহুর্তের কিছু সময় পার করছি।
আজম খান নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধের পর দেশ গড়ায় অবদান রেখেছেন।
আজকে বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীত প্রতিবেশী দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে থাকার পেছনেও গুরুর বলিষ্ঠ ভূমিকা অনস্বিকার্য। আজম খান আমাদের তারকাদের তারকা, এমন কোনও তারকা নেই যে এক বাক্যে আজম খানের ভক্ত নয়। দেশের ১৬ কোটি মানুষের বিরাট অংশ গুরুর ভক্ত। আজম খানের গান জীবনে একবারও শোনেনি এমন মানুষ দেশে সত্যিই বিরল। তাঁর দরদি কণ্ঠ, সহজ সরল কথার গান, সুর ও ছন্দের মুন্সিয়ানা কোটি কোটি শ্রোতার মনে স্থায়ী দাগ কেটেছে।
এমনকি যে কোনদিন মনোযোগ দিয়ে আজম খানের গান শোনেনি সেও আজম খানের নাম জানে, তাঁকে ভালবাসে। একজন শিল্পীর জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া হয় না।
ব্যাক্তি আজম খান বাংলাদেশের সঙ্গীতের ভুবনের মুকুটহীন সম্রাট অথচ তাঁর জীবন যাপন কত সাধারণ! কি সাধারণ তাঁর বসনভূষণ, কি মার্জিত তাঁর মুখের ভাষা! এখনো আজম খানের নিজের কোনও গাড়ি নেই, পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া বাড়িটি ছাড়া ঢাকা শহরে কোনও স্থায়ী সম্পদ নেই। সুস্থ অবস্থায় খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীর চর্চা তারপর ব্যস্ত হয়ে যেতেন নিজের পোষা হাঁস-মুরগী-কবুতর নিয়ে। বিকেলে খেলার মাঠে শিশু-কিশোরদের সাথে ফুটবল খেলা।
সন্ধ্যায় নিজের ভুবনে বন্দি থাকতেন, নিজে নিজেকে ভাঙ্গতেন আবার গড়তেন, এভাবে তৈরী হত কালজয়ী গান-সুর।
অন্য সময় অবশ্যই আজম খানের সঙ্গীত জীবন, ব্যাক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে লিখব। আজ যে উদ্দেশ্যে লেখা শুরু করেছিলাম সেই প্রসঙ্গে আসি। আজম খান এখন যে শারীরিক অবস্থায় আছেন তাতে আমাদের আর তাঁর জন্য তেমন কিছু করার নাই। শুধু আসুন আমরা সবাই তাঁর জন্য শুভ কামনা করি, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি।
মিরাকল বলতে একটা কথা আছে, যা হওয়ার না মিরাকল হলে তা হয়ে যায়। আমাদের একটা মিরাকল চাই, মাত্র একটা মিরাকল- আমাদের প্রিয় শিল্পী, আমাদের পপসম্রাট, আমাদের গুরু, আমাদের মা-মাটির শুদ্ধ সন্তান, আমাদের আজম খান সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আবারো ফিরে আসুক। লাইফ সাপোর্ট থেকে নাকি লাখে একজন ফেরেন, আমাদের আজম খান সেই একজন হোক। আমরা তাঁর হাসি মাখা মুখটা আবারো দেখতে চাই। চাই আবারো মাইক্রোফোন হাতে গুরু মঞ্চে উঠুক, আমরা আরো একটিবার তাঁর কণ্ঠের গান শুনতে চাই।
প্লিজ একজন কেউ, যিনি পারেন, মিরাকলটা ঘটান, প্লিজ একটিবার।
খবরদার মৃত্যু তুই আমাদের গুরু থেকে দূরে থাক, আমরা আমাদের বুক পেতে রেখেছি, আমাদের কাছ থেকে কিছুতেই তাঁকে ছিনিয়ে নিতে দেব না, কিছুতেই না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।