হাজার শোকর, আমরা আর পাকিস্তানি নই। মুক্তিযোদ্ধাদের হাজার সালাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে ভাষাশহীদ আর সেনাদের, মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আমরা স্যালুট করি লক্ষ-কোটি বার, এ জন্য যে পাকিস্তান নামের পরিচয় থেকে আমাদের তাঁরা রক্ষা করেছেন আজ থেকে ৪০ বছর আগে। আমরা পরম শান্তিতে, অপার আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে আছি, সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এ কথা কেন আসছে, পৃথিবীর কাউকেই তা বুঝিয়ে বলতে হবে না। যে কেউ বুঝবেন, অনেক আগে থেকেই পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটা না-রাষ্ট্র হয়ে গেছে।
প্রতিদিন সেখানে বোমা ফাটে, মসজিদে, উপাসনালয়ে, সরকারি অফিসে, পুলিশের দপ্তরে, সেনাসদস্যদের গাড়িতে। সেখানে বৃহত্তম প্রদেশটির গভর্নরকে মেরে ফেলেন তাঁর নিজেরই দেহরক্ষী, কারণ, কর্তা ব্ল্যাসফেমি আইনের সংস্কার চেয়েছিলেন। রক্ষক যদি ভক্ষক হয় কে করিবে তবে রক্ষা! সেখানে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট টিমের ওপর হামলা চালানো হয়, সেটা কেন, যারা হামলা করেছে, হয়তো একমাত্র তারাই তার কারণ জানে, আর জানে, সর্বজ্ঞ পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা—আইএসআই।
এ এমন এক স্বাধীন রাষ্ট্র, যেখানে ওসামা বিন লাদেন বছরের পর বছর রাজধানীর উপকণ্ঠে সেনা এলাকার পাশেই অট্টালিকার ভেতর সংসারধর্ম পালন করে যান আর পাকিস্তানের গোয়েন্দারাও তা জানেন না, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাঁর খবর রাখে না, সরকার থাকে পুরো অন্ধকারে। তারপর আমেরিকার সেনারা হেলিকপ্টার নিয়ে হামলা করেন সেখানে, ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে তা অবলোকন করেন বারাক ওবামা, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে সেই খবর অ্যাবোটাবাদের বেসামরিক প্রতিবেশী সবার আগে ছড়িয়ে দেন, কিন্তু পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ঘুম ভাঙে পরের দিন টেলিভিশনে ওবামার বক্তৃতা শুনে, ‘বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে।
পাকিস্তান আমাদের সহযোগিতা করেছে। ’ পাকিস্তান বলে, না, আমরা সহযোগিতা করিনি। কেউ আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে তো করব! আমাদের কিছু জানানো হয়নি। ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে ওই অনুপ্রবেশকারীরা পাকিস্তান ত্যাগ করার পর পাকিস্তানিদের হুঁশ হয়, আমাদের দেশের মাটিতে বিদেশি সেনারা এসে অভিযান পরিচালনা করে ফিরে গেলেন। হায় হায়, এ যে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন।
তাঁরা হুংকার ছাড়েন, আরেকবার এই ঘটনা ঘটলে কিন্তু দেখে নেব। হুংকার বাতাসে মিইয়ে যাওয়ার আগেই আমেরিকার চালকবিহীন বিমান এসে হামলা করে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে। হত্যা করে মানুষকে। সর্বশেষ খবর: পাকিস্তানের পার্লামেন্টে আমেরিকার লাদেন অভিযান তথা পাকিস্তানের ওপর হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। এ ধরনের হামলা আরেকবার চালানো হলে পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে ন্যাটো বাহিনীর রসদ আফগানিস্তানে যেতে দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে পার্লামেন্টে সর্বসম্মত প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।
আর বিন লাদেন হত্যা অভিযানের পর থেকেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। অন্য দিকে যুক্তরাজ্যের এক সংবাদপত্রের খবর, পাকিস্তানের পরমাণু বোমা পাহারা দেওয়ার জন্য সেখানে সেনা নিয়োজিত করার কথা ভাবছেন বারাক ওবামা। আর মানুষ মরছে পাকিস্তানে। যেখানে সেখানে যখন তখন বোমা ফাটছে। নিরীহ পাকিস্তানিরাই তাতে মারা মরছে, নির্বিচারে! নির্বিচার কথাটার মধ্যে বিচার কথাটা আছে! বিচার! পাকিস্তানে মানুষ মারতে বিচার লাগে নাকি!
এই যখন অবস্থা, তখন পাকিস্তানের একজন পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপকের সম্প্রতি প্রকাশিত একটা সাক্ষাৎকার নজরে এল।
ইসলামাবাদের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ বছর ধরে নিউক্লিয়ার ফিজিক্স বিষয়ে অধ্যাপনা করছেন ড. পারভেজ আমিরালি হুদভয়। তিনি মনে করেন, সব অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তচিন্তার মানুষকে হত্যা করার পর জঙ্গিরা একে অপরকে হত্যা করতে থাকবে, এক গোত্র আরেক গোত্রকে, এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে, এক মতবাদের লোক আরেক মতবাদের লোকদের, একজন ফতোয়াবাজ আরেকজন ফতোয়াবাজকে; পরস্পরকে মেরে সম্পন্ন করার পর ইউরোপের ৩০ বছরের যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি আসতে পারে।
বর্তমানে পাকিস্তানের যে অবস্থা, তাতে আমাদের বারবার করে সালাম জানাতে হবে সেই সব মানুষকে, যাঁরা আমাদের এনে দিয়েছিলেন ১৯৭১, যাঁদের মাধ্যমে আমরা আজ বাস করছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে। স্বাধীনতার চার দশক পূর্তির বছরে এ কৃতজ্ঞতাবোধে আপ্লুত হয়ে আছে হূদয়।
সুত্রঃ প্রথম আলো ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।