অস্থির এই সময়ে কিছু স্বস্তির সুবাতাস ছড়াতে চাই, আমি ক্রমঃশ আপনারে বিলিয়ে যাই তুমি সুখী হবে বলে...
RAB-এর গুলিতে পা হারানো লিমনের কাঁটা পায়ের ছবিটা দেখতে ভালো লাগে না। তাই লিমনের কাঁটা পায়ের জায়গাটা কালো করে দিলাম। ফটোশপে খুব সহজেই লিমনের পঙ্গুত্ব ঢাকা দেয়া যায়, সেই বানরের মতো- ‘আমরা কিছুই দেখব না’ নীতিতে চাইলে লিমনের কাঁটা পা’টা আমরা নাও দেখতে পারি। কিন্তু তাতে দোষী খুনে বাহিনীটির যাবতীয় রক্ত ঝরানো নোংরা কাজ মুছে যাবে না। এমন কোন ফটোশপ নাই যেটা দিয়ে তাদের তাবত অপকর্ম ঢাকা দেয়া যায়।
এই বাহিনীটির অনেক কাজ প্রশংসার দাবী রাখে, কিন্তু তাই বলে কি এদের সাত খুন মাফ? এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও অস্বাভাবিক নিশ্চুপ! অপকর্মের তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে খোদ অপকর্মকারীদের! সেই আলোচিত তদন্ত কমিটি অবশ্য কাজ দেখানো শুরু করেছে। প্রথম দিনই তারা লিমনকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক নির্যাতন করেছে, জোর করে কাগজে সই নেয়ার চেষ্টা করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের নাম-পদবি লুকিয়েছে। এই প্রবণতা সন্দেহজনক, আমরা দেশের সাধারণ মানুষ অসহায়বোধ করছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন একজন নারী, নারী তো মায়েরই রূপ।
একজন সাহারা খাতুন এই খুনে বাহিনীটির হর্তাকর্তা, খুবই স্বাভাবিক যে তিনি মায়ের মতই তার অধীনস্থ বাহিনীগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু যে কিশোরটি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেল, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কি তার জন্য একটুও মমত্ববোধ জাগে না? দেশের প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী; তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মতো একজন মহান নেতার কন্যা। তিনিও তো এই দুঃখজনক ঘটনার জন্য একটু উহু-আহাও করলেন না; বললেন না এই ঘৃণ্য ঘটনার তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক! প্রিয় শেখ হাসিনা, জোট সরকারের দুঃশাসনের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কেন আপনার জোট দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে তা আপনার চেয়ে ভালো আর কে জানে? আসলে রাজনীতি কার জন্য? রাজনীতিতে কি মানবিকতা দেখানো দুর্বলতার পর্যায়ে পড়ে?
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান লিমনের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আইনি লড়াই শুরু করেছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রও লিমনের পাশে দাঁড়িয়েছে, দেশের গণমাধ্যমও লিমনের পাশেই আছে। আরও পাশে আছি আমরা, দেশের ১৭ কোটি আমজনতা।
এমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই খুনে বাহিনীটির বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অপরাপর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে। এসব দেখে এখনো মনে হয় সব শেষ হয়ে যায়নি, আমরা এখনো নিজেদের মানুষ ভাবতে পারি, অন্তঃত ভাবার মতো এখনো যথেষ্ট কারণ আছে।
লিমনের এই দুর্ঘটনার পর থেকে একটা অন্ধ আতংকে ভুগছি। কিছু না করেই লিমনকে পা হারাতে হয়েছে, আর এই আমি আজ অব্দি অনেক লেখায়, মন্তব্যে, আলোচনায় এমনকি আচরণেও RAB-এর ব্যাপক সমালোচনা করেছি। কোনদিন না RAB এসে আমার হাতে গুলি করে দিয়ে যায়, আমার হাতের লেখা তো তাদের ভালো লাগার কথা না।
পরদিন RAB তার সেই বিখ্যাত নাটকীয় সংলাপ ঝাড়বে- ‘অমুক দাগি সন্ত্রাসী অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে’। আজকে এই লেখার মাধ্যমে আমি সারা বিশ্ববাসীর কাছে আমার এই আশংকার কথা জানালাম, যদি লিমনের মতই আমারও ভাগ্য খারাপ হয় আশা করবো আপনারা দয়া করে আমার পাশেই থাকবেন।
লিমনের প্রতি অন্যায়কারীদের উপযুক্ত শাস্তি হোক। আমরা কেউই এই নিষ্ঠুরতার দায় এড়াতে পারি না, দোষীদের কঠোর শাস্তি হলে অন্তঃত সেই দায় কিছুটা হালকা হবে, ভবিষ্যতে আর কেউ অমনভাবে নিষ্ঠুরতা দেখানোর সাহস পাবে না।
মূল ছবিঃ প্রথমআলো 'র সৌজন্যে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।