আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাহিনী!!!!

বলতে চাই..জানাতে চাই...

কোন এক স্কুল অনুত্তীর্ন বলেছিলেন "পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়" । তখন অনেকেই তাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে ছাড় দেয়নি। এক পক্ষ সংবিধানের দোহাই দিয়ে সরকারের অধীনে নির্বাচনে অনড় আর এক পক্ষ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন এবং সেই সরকারের অধীনে মেয়াদ পূর্তির আগেই নির্বাচনের দাবীতে রাজপথে মিছিল মিটিং, হরতাল, অসহযোগ আন্দোলন, লাগাতার হরতাল /ধর্মঘট প্রভৃতিতে সারাদেশে তোলপাড় করছে। এক পর্যায়ে বিরোধীদলের সংসদ থেকে গণ পদত্যাগ। সরকারের সংবিধান সংশোধনের জন্য একদিকে পর্যাপ্ত সদস্য নেই অন্যদিকে সরকারের মেয়াদ শেষ।

তাহলে কে নির্বাচন করবে? বিগত সময়ে এরশাদ সরকার গণআন্দোলনের মুখে মাঝপথে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন এবারও কি সেরকম হবে? তাহলে ত্ত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাশ করবে কে? এরকম জেদাজেদির ভিড়ে শেষ সময়ে এসে সরকারী দল সংসদ মেয়াদ শেষে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে একটি নির্বাচন দিলেন..ঘোষনা দিলেন এই সংসদের একমাত্র কাজ হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাশ। বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহন তো দূরে থাক এরকম নির্বাচনেরই বিপক্ষে ..এদিকে সরকার দলের এক কট্টরপন্থী অংশ নির্বাচনে জিতলে আরো এক মেয়াদে থাকার পক্ষে। এরকম একটি পর্যায়ে ১৯৯৬ সালের বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন..যে সংসদ অধিবেশন মেয়াদ ছিল এক রাত দুই দিন। আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই নির্বাচনে আমার এলাকার সরকার দলীয় প্রার্থীর অধিকাংশ পোস্টারে কততম সংসদ নির্বাচন এবং তারিখ লিখা ছিলনা..স্থানীয় নেতাদের মুখে শুনেছি, পোস্টার পরের নির্বাচনেও যাতে ব্যবহার করা যায় সেজন্যই এ ব্যবস্থা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাশ করে সরকার সংসদ ভেঙ্গে দিলেন এবং আইন অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ত্ব দিলেন।

নির্বাচন হলো ..আওয়ামীলীগ জিতল এবং সরকার গঠন করল। চারদিকে তখন বাংলাদেশের এই পদ্ধতিকে গণতন্ত্র সুরক্ষার রক্ষাকবচ এবং রোল মডেল হিসেবে ঘরে বাইরে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারী দল , বিরোধী দল এমন কি সুশীল সমাজ ও এর কৃতিত্ত্ব নেওয়ার জন্য তখন আহলাদে গদগদ। বিদেশেও তখন কোথাও কোথাও বাংলাদেশ মডেলের সরকারের কথা আলোচনা করতে শোনা গেছে। কিন্তু বেশি দিন লাগেনি পিরিতের রস কমতে...।

নির্বাচনে হারলে বা হারার সম্ভাবনা থাকলে সব দলই এবং উহাদের চামচারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান এবং পদ্ধতিকে দোষারোপ করতে ছাড়েননি। তারা শুধু পেচিয়ে পেচিয়ে সেই স্কুল অনুত্তীর্ণ ছাত্রীটির মতই বলেছেন.... শিশু ও পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয় এখন তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে সাংবিধানিক পদ এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কে কলুষিত করা হচ্ছে। ভালো লোক এক বিবৃতিতেই খারাপ হয়ে যাচ্ছেন...খারাপ লোক এক বিবৃতিতেই ফেরেশতা হয়ে যাচ্ছেন। গতকাল আবার যিনারা এই সরকারের এতদিন প্রধান ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও হবেন তারা এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন কে অবৈধ ঘোষণা করলেন। এতদিনের অবৈধ ঘোষনা কৃত সংশোধনিগুলো ছিল সামরিক সরকারের আমলে করা ।

কিন্তু ত্রয়োদশ সংশোধণী কি সামরিক সরকার করেছিল? এর পিছনে একপেশে হলেও একটা সংসদ নির্বাচন ছিল..সংসদ ছিল ....অপরপক্ষে একটা বিরাট জনমত ছিল..যা এর পক্ষে আন্দোলনকারী দলগুলোই বলত? তাহলে এটা অবৈধ হবে কেন? তবে দেশের স্বার্থে , গণতন্ত্রের স্বার্থে এটার প্র্যাকটিস না করার অনুরোধ করা যেতে পারে(দুই মেয়াদের জন্য অনুমতি অবশ্য দিয়েছেন!!!)...কিন্তু অবৈধ হয় কি করে? তাহলে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন এবং নিন ১. অন্যতম রায় প্রদানকারী পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হলে তিনি কি অবৈধ আইনের অবৈধ সরকার প্রধান হবেন? ২. এতদিন যেসব প্রধান বিচার পতি এই অবৈধ সরকারে অংশীদার হয়েছেন তারা কি অবৈধ হবেন আর তাদের করা নির্বাচন? ৩. এই সংশোধনীর জন্য দেশে যে আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে তাতে যারা নেতৃত্ত্ব দিয়েছেন তাদের কি বিচার হবে? ৪. ঐসব আন্দোলনের জন্য দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে এবং যারা শহীদ হয়েছেন...রাস্তায় উলঙ্গ হয়ে সম্মান-সম্ভ্রব হারিয়েছেন তাদের কি হবে এবং এর দায় কে নিবে? ৫. রাজপথে রক্ত, গুলি ,হত্যা, নিহত, আহত....অসহযোগের ফলে কৃষকের ফসলের দাম না পাওয়া..সর্বোপরি অর্থনীতির বারোটা বাজানো সেই সব পক্ষে বিপক্ষের নেতা-নেত্রী, চেলা-চামুন্ডাদের বিচার হবে না কেন? ৬. আইন বহির্ভুত ভাবেও এদেশে খুবই নিকটবর্তী একটি সরকার ছিল তাকে স্বতঃ প্রনোদিত হয়ে/বা কেউ অবৈধ ঘোষনার চেষ্টা করছেন না কেন? সব কিছুর শেষে একটিই প্রশ্ন আমরা আপনাদের মতো পরিবেশ পরিস্থিতিতে রং পরিবর্তনকারী নেতা-নেত্রী, বুদ্ধিজীবি, আইনজীবি, বিচারক, সুশীল সমাজ আর চেলা চামুন্ডার দ্বারা আর কত গিনিপিগের মত ব্যবহৃত হব?..আর কত নিগৃহীত হয়েও আমরা আপনাদের সুরে সুর মিলিয়ে আপনাদেরকেই প্রভূ বলে মানব? সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবার প্রতি সদয় হউক

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.