আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটিকে ব্যর্থ অথবা বিকৃত করার জন্য এহেন চাতুরী ও অসাধুতা নেই, যা বিএনপি করেনি। ক্ষমতা ছাড়ার আগে (১৯৯৬) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মেনে নিয়ে সংসদে মধ্যরাতে একক গোপন অধিবেশনে সংবিধানে সংযোজন করে।
সরকারের সব দফতর (দেশরক্ষাসহ) প্রধান উপদেষ্টার তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন উপদেষ্টার হাতে থাকার কথা থাকলেও, বিএনপি সরকার ক্ষমতা দখলের কুমতলবে, দেশরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব খালেদা জিয়ার ক্রীড়নক রাজাকার রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস এর হাতে অর্পণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়মতান্ত্রিক প্রধান করা হয়।
প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় বসতে না বসতেই দলীয় রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে সেনাবাহিনীতে বিরোধ সৃষ্টি করে এবং দেশে সামরিক ক্যু ও পাল্টা ক্যু ঘটিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেই ব্যর্থ করে দিয়ে বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে আবার ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি হাবিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে যে টেলি ও বেতার ভাষণ দিয়েছিলেন, সেটির প্রচার বিলম্বিত ও পরে কর্তিতভাবে করেছিল টেলিভিশনের সংবাদকক্ষের এক কর্তাই। পরে জানা গেল, তিনি বিএনপির খাস লোক।
প্রধান উপদেষ্টা পদে যাতে তাদের আজ্ঞাবাহী বিচারপতি হাসানকে বসানো যায়, সে জন্য লোকলজ্জার কোনো ধরনের তোয়াক্কা না করে বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়স নিয়ে ধূর্ত খেলা শুরু হয়, ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার আগে বিচারপতিদের বয়স ২ বছর করে বৃদ্ধি করা হয়!
আন্দোলনের কারণে তা বাতিল হলে, নিয়ম অনুযায় পূর্ববর্তী বিচারপতি নাইম কে বা আলোচনার ভিত্তিতে অন্য কাউকে নিযোগ না দিয়ে, সরাসরি রাষ্টপতি ইআজুদ্দিন এর হাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্ব হাতে থাকায় বিএনপির বশংবদ রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্তৃত্ব নস্যাৎ করে এককভাবে (নেপথ্যে খালেদা-তারেক) শাসন চালাতে শুরু করেন। অবৈধভাবে নিজেকে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে বসিয়ে সামরিক প্রধানদের বৈঠক ডেকে বললেন, তার সরকার এখন প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার।
বারবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পদে নতুন নতুন মুখ এনে, দলীয় প্রধানের টেলিফোন নির্দেশে সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি গোটা দেশ ও জাতিকে এক মহাসর্বনামের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছিলেন। তার সরকারের নেতৃত্বে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তো হতোই না, দেশে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেত।
ওয়ান-ইলেভেন এসে দেশকে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচিয়ে দিলেও, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় বিএনপি-সৃষ্ট ছিদ্রপথ ধরেই ওই ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক চরিত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করে এটাকে সেনা পরিচালিত অনির্বাচিত সরকারে পরিণত করা হয় এবং তিন মাসের জায়গায় বেআইনিভাবে দু'বছরের বেশি ক্ষমতায় রাখা হয়। ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসল কাজ ঝুলিয়ে রেখে, তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত এমন সব কাজ করতে থাকে যা দেশে দুর্নীতি ও লুটপাট বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯৬ সালে প্রবর্তিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দোষ ত্রুটি, এর অপপ্রয়োগের ফলে ১৯৯৬ ও ২০০৬ পরবর্তী উদ্ভুত অগণতান্ত্রিক পরিস্থিথি, দুর্নীতি এবং সামরিক হস্তক্ষেপের কথা বিবেচনা করে গত ১০ মে ২০১১, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষনা করে তা বাতিলের রায় দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেমন হবে সে বিষয়ে সংবিধান সংশোধন কমিটিকে জানিয়েছিলেন বাতিলের কথা বলেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অকপট স্বীকারোক্তি "তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আমি 'নো' বলিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কী 'লুপ হোল' আছে, তা ঠিক করারই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কোর্ট না করেছে। "
সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের জন্য চাই সুষ্ঠ প্রক্রিয়া, কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারির ১৯৯৬ সালে অসাংবিধানিক ও অবৈধ নির্বাচনের মাধমে বৈধতা পাওয়া রুদ্ধদার বৈঠকে প্রবর্তিত একপেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সংবিধান, ক্ষমতায় আসার ভিত শক্ত কারি চতুর কৌশল মাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কখনোই নয়।
বিলম্বে হলেও দেশের সচেতন মহলগুলোর এখন বোধোদয় হয়েছে, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তারা চেয়েছিলেন, তা তারা পাননি এবং যেটা তারা পেয়েছেন, তাকে দু'দু'বারের টার্মেই এতটা ব্যর্থ ও বিকৃত করে তোলা হয়েছে যে, গনতন্ত্র রক্ষায় তা বাতিল ছাড়া আর কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান নাই ।
নিজের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়, আইনের শাসন এর প্রতি পূর্ণ শ্রধা দেখাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন," ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে আদালতের রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখার আর সুযোগ নেই। " এখন সময় এসেছে গণতন্ত্র সমন্নুত করার বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।