ভালকে সমর্থন এবং খারাপকে বর্জন করতে শিখুন ।
সচেতনতার অভাবে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে নীরব ঘাতক ব্যাধি থ্যালাসিমিয়া। সে তুলনায় এ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো অপ্রতুল। চিকিৎসা ব্যয়ও রয়ে গেছে সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ থ্যালাসিমিয়া নামক রক্তশূন্যতাজনিত রোগে আক্রান্ত।
এ ছাড়া প্রতি বছর নতুন করে থ্যালাসিমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে ৭ হাজারেরও বেশি শিশু।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, থ্যালাসিমিয়া রোগের জীবাণুবহণ করছে এমন লোকের সংখ্যাও এক কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যা মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশের বেশি।
এ অবস্থায় দেশে আজ রোববার পালিত হচ্ছে বিশ্ব থ্যালাসিমিয়া দিবস ২০১১। থ্যালাসিমিয়া বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রতিবছরের ৮ মে আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালন করা হয়।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- 'বাঁচার সমান সুযোগ'। মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবাসহ অন্যান্য সেবা পাওয়ার সমান সুযোগ, থ্যালাসিমিয়া রোগকে গুরুত্ব দেয়া এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি জন্য এ বছর এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, থ্যালাসিমিয়া একটি বংশগত রোগ। জন্মগতভাবে বাবা-মা'র থেকে সন্তানের দেহে এ রোগের বিস্তার ঘটে। যদি বাবা-মা উভয়ে দেহে থ্যালাসিমিয়ার জীবাণু থাকে তবে তাদের সন্তানেরও এ রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে।
যদি যেকোনো একজনের দেহে এ রোগের জীবাণু থাকে তবে সন্তানের দেহে এ জীবাণু বিস্তার করবে; কিন্তু সে থ্যালাসিমিয়ায় আক্রান্ত হবে না। তাই এ রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ সহজ বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা. মো. আবদুর রহিম শীর্ষ নিউজ ডটকমকে বলেন, পারস্পরিক বিবাহের মাধ্যমে থ্যালাসিমিয়া রোগের বিস্তার বাড়ছে। এ জন্য বিবাহের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্তে এ রোগের জীবাণু আছে কিনা তা স্ক্রিনিং করে নিশ্চিত হতে হবে। যদি উভয়েই এ রোগের বাহক হন তবে এদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে বিরত থাকতে হবে।
ইতিমধ্যে এ রোগের বাহক বিবাহিত দম্পতির করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, এসব রোগীদের গর্ভস্থ ভ্রূণ পরীক্ষা করে সন্তান নেয়া উচিত। 'হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস' নামে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সহজে থ্যালাসিমিয়া সনাক্ত করা যায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলিটিন (২০০৮) সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ভর্তি ৪ থেকে ১৪ বছর বয়সী রোগীদের শীর্ষ ১০টি রোগের মধ্যে থ্যালাসিমিয়া একটি। চিকিৎসকদের মতে, থ্যালাসিমিয়া রোগটি সংক্রামক নয়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তি চাইলে সমাজের সকল কাজে অংশগ্রহণ ও সম্পৃক্ত হতে পারেন।
রোগের লক্ষণ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মঞ্জু মোরশেদ এ সম্পর্কে বলেন, থ্যালাসিমিয়া রোগে আক্রান্ত রোগী বেঁচে থাকার জন্য দেহে যথেষ্ট পরিমাণ রক্ত উৎপাদন করতে পারে না। ফলে রোগীর দেহে মারাত্মক রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আক্রান্ত রোগীর গায়ের রং ফ্যাকাসে হয়ে যায়। রোগী দুর্বলতা অনুভব করে। ঘন ঘন রোগের সংক্রমণ, জন্ডিস, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।
সাধারণত ২ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা: দেশের থ্যালাসিমিয়া রোগের চিকিৎসার জন্য সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র ঢাকা শিশু হাসপাতালে একটি পূর্ণাঙ্গ থ্যালাসিমিয়া সেন্টার রয়েছে। রোগীর চাপে এখান থেকেও পর্যাপ্ত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ব্যয়বহুল চিকিৎসা: থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, থ্যালাসিমিয়া রোগ নিয়ে বেঁচে থাকা সাড়ে তিন লাখ রোগীর মধ্যে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে এক থেকে দেড় লাখ রোগী।
বেঁচে থাকতে এসব রোগীদের নিয়মিত রক্ত নিতে হয়। চিকিৎসকরা জানান, থ্যালাসিমিয়া রোগীদের প্রতি ২ থেকে ৪ সপ্তাহ পর পর রক্ত নিতে হয়। রক্ত নেয়ার ফলে এদের দেহে লৌহ জনিত বিষক্রিয়া দেখা দেয়। এই অতিরিক্ত লৌহ অপসারণের জন্য একটি পাম্পের সাহায্যে পেটের চামড়ায় এদের প্রতি দিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা করে ডেসফেরল নামক একটি ইনজেকশন নিতে হয়। এছাড়া আসুনরা, ডেসিরক্স, কেলফার নামক মুখে খাওয়ার ওষুধ সেবন করতে হয়।
এসব ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে গরিব রোগীদের পক্ষে এ গুলো সেবন করা সম্ভব হয় না। এ রোগের স্থায়ী চিকিৎসা হলো বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট্যাশন। এটিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, একজন থ্যালাসিমিয়া আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে ১১ থেকে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়। অধিকাংশ গরীব রোগীর পক্ষে যা সম্ভব হয় না।
ফলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয় তাদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থ্যালাসিমিয়া রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে রক্ত পাওয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থ্যালাসিমিয়া রোগের চিকিৎসা সহজলভ্য করতে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে থ্যালাসিমিয়া প্রতিরোধে বিশেষ ইউনিট স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম বাড়াতে হবে।
এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যনীতি ও সরকারের পঞ্চবার্ষিকী স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন বলেও মত দেন তারা।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।