আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সচেতনতার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধ সম্ভব

গণমাধ্যমকর্মী, চেয়ারম্যান - উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান, সদস্য সচিব - সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন।

সচেতনতার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধ সম্ভব শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ব্যাপারী পাড়ায় বাস করে মাফিয়া। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মাফিয়া যেন বদলে যায়। বিয়ের পর মাঝে মধ্যেই শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত মুহূর্তগুলো তার মনে পড়ে।

কিন্তু পিছনে ফেরার সুযোগ নেই। স্বামী-সংসার নিয়ে তার জীবন চলতে থাকে। স্বামী কৃষি কাজ করতো। আর মাফিয়া বেগম সারাদিন পার করে দিত গৃহস্থালীর কাজে। দেখতে দেখতে তার ৬ বছর পার হয়ে যায়।

এর মধ্যে মাফিয়ার ঘরে এসেছে ৩টি মেয়ে ও ১টি ছেলে ’পুনাই’ (সন্তান)। তার স্বামী সোলায়মান মিয়া এখন ঢাকায় রিকশা চালায়। ক’দিন পর পর সে টাকা পাঠায়। তা দিয়েই তাদের সংসার চলে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।

তাই বাচ্চাদের চেহারার মধ্যে অপুষ্টির ছাপ। তাদের রোগাক্রান্তও মনে হয়। অন্যদিকে মাফিয়ার শরীরের অবস্থাও ভালো নয়। অর্থাৎ সে বাল্যবিবাহের কুফল বলে নিয়ে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় অধিবাসীর মতে, অনুন্নত এলাকা হওয়ায় এখানে বাল্যবিবাহের প্রবণতা অনেক বেশী।

তাই মাফিয়ার মতো অনেকেই বাল্যবিবাহের শিকার। তবে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় আগের চেয়ে বাল্যবিবাহ কিছুটা কমে আসছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রোপটে বাল্যবিবাহ একটি ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সমাজের অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে যেসব তের সৃষ্টি হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বাল্যবিবাহ। ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ে এবং ২১ বছরের কম বয়সী ছেলের বিবাহকেই বাল্যবিবাহ হিসেবে ধরা হয়।

১৯২৯ সালে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুযায়ী বাল্যবিবাহ বলতে বাল্যকাল বা নাবালক বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে বিবাহকে বুঝায়। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন (সকল ধর্মাবলম্বীর েেত্র প্রযোজ্য) অনুযায়ী নাবালক-নাবালিকাদের মধ্যে বিবাহ করা অথবা বিবাহে সাহায্য করা অপরাধ। এই আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়ে এবং ২১ বছরের কম বয়সের ছেলে বালক-বালিকা হিসেবে গণ্য। বিয়ের েেত্র বয়সের সীমা বৃদ্ধি পেলেও বাল্যবিবাহ অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সের নিচে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের বিয়ে এখনো হচ্ছে। বিশ্বের সব সংস্কৃতিতেই বিয়ে আনন্দময় এবং সাধারণত ধুমধামের সঙ্গে তা সম্পন্ন হয়।

কেননা, প্রাপ্ত বয়সীদের জন্য বিয়ে জীবনের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু বাল্যবিবাহের প্রচলিত রীতিতে আনন্দ বা উৎসব করার সুযোগ কম হয়। কারণ বর ও কনের মধ্যে বিয়ের অনুভূতি কম থাকে। এছাড়া একটি মেয়ে বা ছেলের শৈশবের সমাপ্তি ঘটে এই বাল্যবিবাহে। শিা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পরিপূর্ণ বিকাশের মৌলিক অধিকার থেকে একজন কিশোর-কিশোরী বঞ্চিত হয় এই বাল্যবিবাহের কারণে।

বাল্যবিবাহ আমাদের দেশে এক ধরনের সামাজিক অনাচার বলা যায়, এজন্য যে-বাল্যবিবাহের কারণে একটি কিশোরী মানসিকভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে না। কম বয়সে মা হওয়ার কারণে সে শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ে। আবার তার গর্ভের নবজাত শিশুর জীবনও হুমকির মধ্যে পড়ে। এর ফলে দেশে মা ও নবজাত শিশুর মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের কারণে ২০ শতাংশ মেয়ে ১৫ বছর বয়সের আগেই গর্ভবতী হয়।

আর এজন্য মা এবং শিশু যেসব মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে তা হলোÑ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়া ও কম ওজনের শিশুর জন্ম দেয়া, আবার অনেক েেত্র প্রসবের সময় মা ও সন্তান দু’জনেরই মৃত্যুর আশংকা থাকে। প্রতি বছর গর্ভধারণ ও প্রসবকালীন জটিলতার কারণে কমপে ৬০ হাজার কিশোরী মা মৃত্যুবরণ করে। সাধারনত: বাল্য গর্ভধারণ, কিশোরী মায়েদের পুষ্টিহীনতা, রক্ত স্বল্পতা, সুচিকিৎসার অভাব প্রভৃতি কারণে তাদের নিরাপদে মা হওয়ার স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। তাই মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধ করতে হলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আরো সোচ্চার হতে হবে। সহস্রাব্দের উন্নয়ন ল্যমাত্রা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার মাতৃমৃত্যুর হার বর্তমানে প্রতি লাখে ২৯০ থেকে নামিয়ে ২০১৫ সালের মধ্যে ১৪৩ জনে নামিয়ে আনা এবং নবজাতকের মৃত্যু প্রতি হাজারে ৩৭ থেকে ২১ জনে নামিয়ে আনার লে কাজ করে যাচ্ছে।

দেশে প্রসবজনিত কারণে মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়েও নানান উদ্যোগ রয়েছে। এতে অনেকটা সফলতাও এসেছে। এজন্য আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সফলতা আসায় বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক পুরস্কৃতও হয়েছে। মাতৃমৃত্যু এবং শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে পিতা-মাতা, স্বামী এবং অভিভাবকদের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

বিশেষ করে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে তাদের আরো সচেতন হতে হবে। একথা সত্য যে, বাল্যবিবাহ সংকুচিত করে দেয় নারীর পৃথিবী। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত বাল্যবিবাহ চলছে। কোনো কোনো অভিভাবক বাল্যবিবাহের পরিণতি না জেনে বিয়ে দিচ্ছেন কিশোরী মেয়েকে । আবার কেউ কেউ আইন জেনেও আইনের বিধি-নিষেধ পাশ কেটে কিশোরী মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন।

এই বাল্যবিবাহের কারণে জাতি তথা দেশের মারাত্মক তি হচ্ছে। কেননা, এই বাল্যবিবাহের কারণে দেশে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাল্যবিবাহের প্রতিরোধে নারী নিজেই সচেতন হয়ে উঠলে এবং তার সঙ্গে আমাদের সুশীল সমাজ ও রাষ্ট্র্র এ বিষয়ে জোরালো পদপে নিলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এতে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত হবে। একজন সুস্থ সবল মা সুস্থ সন্তানের জন্ম দেবে, গড়ে উঠবে সুস্থ একটি জাতি।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.