যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে.
১।
সকাল ১০ টা।
নিজের রুমে বসে গল্পের বই পড়ছিল রাজেশ। সাধারণত এই সময়ে সে বাসায় থাকে না। তবে আজকে সে বাসায় আছে।
তার এই অসময়ে বাসায় থাকাটাকে কেউ তেমন ভালভাবে নিতে পারি নি। এদিকে মা এসে ৩/৪ বার ঘুরেও গিয়েছেন। কিন্তু রাজেশ কিছু হয় নি এটা বলে দিয়েছে তার মা কে।
গল্পের বই পড়তে পড়তে কখন যে বেলা হয়ে গেল তা টেরই পেল না রাজেশ। এদিকে তার বাহিরে যেতে হবে।
ক্লাস আছে তার দুপুর ২ টায়। তাই রেডি হয়ে নিল সে চটজলদি। ইদানিং একটা নতুন অভ্যাস হয়েছে তার। কানে হেডফোন গুজে রাখে। যতটুকু সময় পায় ততটুকু সময় সে রেডিও শুনতে থাকে।
এ মুহুর্তে সে শুনছে -
“প্রেমের গভীরে আছে মন
মন তুমি ভিজো সারাক্ষণ
মন তুমি জান কি
ভালবাসার ঢং
মন তুমি ভাসালে ওই নীল আকাশে
সাদা মেঘের হাওয়ায় ভালবাসায়। "
এই গানটি ইদানিং বেশ শোনানো হচ্ছে। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে থাকে রাজেশ। শুনতে শুনতে সে কোথায় জানি হাড়িয়ে যায়। কল্পনায় ভেসে যেতে থাকে সে।
কোন এক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সে এই গানটি গাইতে থাকে। আর সাথে থাকে তার স্বপ্নের রাজকন্যা। প্রতিবার গানটি শুনলেই সে এমন আনমনা হয়ে যায়।
২।
ভোর ৬ টা।
“তুমি আমার সুরে সুরে
থাকছো নীল জুরে
স্বপ্ন মাখা কল্পনায়
দিগন্তের একই ঠিকানায়। ”
সকাল সকাল এমন সুরেলা কন্ঠের গান শুনে কেউ ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। রাজেশ পারে নি। কি এক আকর্ষনে তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে যেদিক থেকে ভেসে আসছে গানের সুর। কিন্তু কোন কুলকিনারা করতে পারে না সে।
বলাই বাহুল্য এটা রাজেশ এর প্রিয় গান।
হঠাৎ করেই গান গাওয়া থেমে গেল যেন। রাজেশ এবার ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে ক্লাস এ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সেই সময় আবার গান এর সুর শুনতে পেল।
“বাতাসে কান পেতে থাকি
এই বুঝি ডাকছো তুমি
আকাশে চোখ মেলে থাকি
এই বুঝি পাঠালে চিঠি।
একবার বলি বার বার বলি
বলি যে লক্ষ্য বার
তুমি আমার প্রিয়তম
তুমি যে আমার। ”
এই গান এর সুরে সুরে রাজেশও গলা ছেড়ে গাইতে লাগলো। হুট করেই রাজেশ তার গিটারটা বের করে বারান্দায় গিয়ে বসলো। তার আজ ক্লাস এ যেতে ইচ্ছা করছে না। গিটারটা নিয়ে টিউন করতে থাকলো।
অনেকদিন এটার যত্ন নেয়নি রাজেশ। আর তাই ভাল মত টিউন হচ্ছে না। পরিষ্কার করে আবার টিউন করে নিল রাজেশ।
এবার গিটার এ সুর তুলতে চাইলো সে। ১... ২... ৩ বার চেষ্টার পর পরের বার প্রথম কয়েক লাইন করে ফেলল রাজেশ।
গিটার এর তালে তালে গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করলো সে। কলেজ জীবনে রাজেশ খুব ভাল গিটার বাজাতে পারতো। কিন্তু এখন আর তেমন সময় পায় না বলে বাজায় না।
৩।
রাজেশ এখন ও কুল কিনারা করতে পারে নি প্রতিদিন সকাল বেলা এত মিষ্টি কন্ঠে কে গান গায়।
আজ ও তার ব্যতিক্রম হয় নি। এদিকে রাজেশ যে বাসায় থাকে সেটা ৩ তলা। আর তারা থাকে ২ তলার ডান পাশে। আর বাম পাশে থাকে নতুন এসেছে ১৫ দিন আগে এক পরিবার। রাজেশ এদেরকে এখনো দেখে নি।
চেনেও না। তবে রাজেশ এর মা আর বাবা দুজনে ইতিমধ্যে তাদের সাথে ভাব জমিয়ে ফেলেছে। সেই পরিবারে আছে ইভা নামে তাদের এক মেয়ে। যে কি না কলেজ এ পড়ে।
মাঝে মাঝে সেই মেয়েকে নিয়ে তারা রাজেশ এর বাসায় গল্প করতে আসে।
দেখতে নাকি খুবই সুন্দরী। এটা রাজেশ এর মা তাকে বলেছে। এ ব্যপারে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় নি রাজেশ। তারপরও নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে একটা খচখচানি রয়েই যায় তার। রাজেশ এর মা এও বলেছে ইভার মা নাকি রাজেশ এর কাছে তার মেয়েকে পাঠাবে গিটার শেখানোর জন্য।
এতে রাজেশ বেশ বিরক্ত হয় শুনে।
৪।
রবিবার বিকেল ৫ টা।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে টি ভি দেখতে বসলো রাজেশ। বাসায় আজ কেউ নেই।
তাই ফ্রীজ থেকে কিছু খাবার বের করে নিয়ে খাচ্ছে আর টি ভি দেখছে সে। এমন সময় বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই যেন চমকে উঠলো রাজেশ। অসাধারণ এক সুন্দরী মেয়ে তার সামনে দাঁড়ানো। রাজেশ যেন ভাষা হাড়িয়ে ফেললো।
কিছুই বলতে পারছিল না সে।
মেয়েটা তাই নিজেই কথা বললো আগে।
মেয়েঃ আপনি রাজেশ, তাই না?
রাজেশঃ হ্যা, কিন্তু, আপনি......?
মেয়েঃ আমি ইভা, আপনাদের পাশের বাসায় থাকি।
রাজেশঃ ও হ্যা, বুঝেছি। ভিতরে আসুন
মেয়েঃ আন্টি আছে?
রাজেশঃ না।
বাহিরে গিয়েছে। আসতে দেরি হবে।
মেয়েঃ তাহলে আমি পরে আর একদিন আসবো।
রাজেশঃ (কিছু না ভেবেই জিজ্ঞেস করলো) আপনি নাকি আমার কাছ থেকে গিটার শিখতে চান।
মেয়েঃ হ্যা, চাই।
আর আপনি খুব ভাল গিটার বাজাতে পারেন। এটা আমি জানি ।
এই বলে সে চলে গেল।
৫।
বুধবার বিকেল ৪ টা বেজে ৩০ মিনিট।
দরজা খোলা পেয়েই নক করে ভিতরে ঢুকে গেল ইভা। ততক্ষণে গিটার এ টুংটাং শব্দ করছিল রাজেশ। ইভাকে ভেতরে আসতে দেখে কুশল বিনিময় করে বসতে বললো। গিটার এর তালে তালে ইভা কে সে গান গাইতে বললো। ইভা গলা ছেড়ে গাইতে লাগলো।
প্রথম কয়েক লাইন গাওয়ার সাথে সাথেই রাজেশ বিদ্যুত চমকের মত ইভার দিকে তাকিয়ে রইল। এই কি তার সেই স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা!! মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনতে লাগল ওর গান।
এই সেই মেয়ে যে কি না প্রতিদিন সুরেলা কণ্ঠে গান গায়। যাকে রাজেশ এত খুজেছে কিন্তু কোথায় পায় নি। অথচ যাকে এতদিন খুজেছে সে কি না তার আশেপাশেই থাকে!! যাকে সে সব সময় কল্পনা করে।
ইভার সাথে সাথে রাজেশও গলা ছেড়ে গাইতে লাগলো গান। সপ্তাহে ২/৩ দিন রাজেশ এর বাসায় নিয়মিত আগমন ঘটতে থাকে ইভার। ইভা যেদিন গিটার ধরে সেদিন রাজেশ গান গায় আবার যেদিন ইভা গান গায় সেদিন রাজেশ গিটার বাজায়। এভাবে করেই চলতে থাকে।
এভাবেই ২ জনের মধ্যে ভাল একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
রাজেশ যে ইভা কে ভালবেসে ফেলেছে সেটা ইভাকে সে বুঝতে দেয় নি কখনও। হয়ত ইভাও রাজেশকে ভালবাসে। কিন্তু বলতে পারছে না লজ্জায়। এদিকে রাজেশ এর তর সইছে না আর। প্রতিনিয়ত এক চরম অস্তিরতা অনুভব করতে থাকে রাজেশ মনের ভিতর।
৬।
শুক্রবার সকাল ১১ টা।
রাজেশ সিদ্ধান্ত নেয় যে করেই হোক, আজকেই ইভাকে তার মনের কথা বলবে। বিকেলে তার বাসায় যেয়ে তারপর সব বলবে। আজকে একটা কিছু করেই ছাড়বে সে।
এদিকে বিকেল হতে না হতেই ইভা এসে হাজির রাজেশ এর বাসায়। আজকে সাথে তার মা কে নিয়ে এসেছে। ২ জনকেই আজকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। ইভার মা রাজেশ এর মায়ের সাথে কথা বলতে ভেতরে চলে গেল। আর এদিকে সোফায় ইভা আর রাজেশ বসে গল্প করতে লাগলো।
এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল হয়ত রাজেশ।
কোন কিছু না ভেবেই সে ইভাকে বলে দিল “আই, শুনো, আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। ” তোমার মত কি?
এই কথাতে ইভা একটুও বিচলিত না হয়ে বললো “আমি সেটা জানি। ”
এই বলে রাজেশের কান মলে দিয়ে “আমি রাজি” বলেই সেখান থেকে দৌড়ে বিদায় নিল ইভা।
রাজেশ খুশিতে ইয়াহু বলে জোরে লাফ মারলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।