দ্য ইনভিজিবল
নদীটা যেখানে বাঁক নিয়েছে
ঠিক সেখানেই ক্যাম্পাস
মফস্বলের নিরিবিলি স্নিগ্ধ ছায়া
এড়িয়ে গেছে সব কোলাহল
ডাকাতিয়া নামের সেই নদী আজো বহমান
শীতের কোন আলোছোঁয়া ভোর
একা একা হেঁটে আসা একটি নবাগত তরুণী
আড়ষ্ট চোখে মুখে অবিরাম অস্থিরতা
কালো গহীন আঁধার চোখ
হয়তো খুঁজে ফেরে চেনা মুখ
'এই যে' ডাক পেড়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ায়
চোখে সাহসের দীপ্তি
'আমি অনিন্দিতা'-স্বপ্রতিভ উল্লেখ
-আপনাকে মনে হয় আমি চিনি
-আমারও মনে হয়
-আমাদের মহল্লার দক্ষিণে বাড়ীটাতে থাকেন,তাইনা?
ওই যে সামনে একটা ঘেরা বাগান'
উড়ে যায় একটা শালিক
একলা শালিক
দিনও চলে অবিরাম অবিরত
পরিচয় জেগে উঠে বন্ধুত্বে
আগ্রহ উদ্দীপনা আর সীমাহীন আকাংখা
অনিন্দিতা প্রতিদিনের সঙ্গী করে আমায়
ক্যাম্পাসে চলাচলে
সুখ দু:খ হাসি কান্নার সব কাহিনী জমে উঠে
বাবা নেই তার
গত হয়েছেন বিগত ক'বছর
মা এখনো শক্ত সুন্দর আর সাবলীল
অনিন্দিতা বলে উঠে 'আমরা শুধু দু'বোন
পেরে উঠছিনা আর কালো থাবার বিপরীতে
এলাকার সব'চে প্রভাবশালী লোকটার কুনজর
মাকে গ্রাস করতে চায়
সাথে বাবার রেখে যাওয়া সম্পদের কানাকড়িও'
আমি শিওরে উঠি
ক্ষোভ প্রকাশ করি
অনিন্দিতা আমাকে শান্ত হতে বলে
আমিও বলি 'আচ্ছা সব ঠিক হয়ে যাবে'
অনিন্দিতা আবার নিজেই প্রতিবাদ করে উঠে
'কিভাবে হবে? সবাই কুত্তাটার চামচা'
কুত্তাটা বাড়ী এসে মা'কে জোর করে
মা নালিশ করেছিল
কেউ এগিয়ে আসেনি
ভাবে- মা-ই নষ্টের মূল
কোথায় যাব,কার কাছে যাব'
আমাদের সমাজগুলো কুত্তায় ভরে উঠছে
চারপাশে অস্থির অসুখ
বিশ্বাস আর ভালবাসা দন্ড
একতারা ভেঙে কালসাপ হয়ে উঠে ফণা
কেউ সাহসের নেই
এক আলোছোঁয়া দিনে ক্যাম্পাসে আসি
ক'দিন আসিনি
কোথাও অনিন্দিতা নাই,ক্লাসে, নদীর পাড়ে বটগাছতলে
-শুনছিস,অনিন্দিতাকে নাকি জ্বিনে ধরেছে
আমি চমকে উঠি
-হ্যাঁ,তাই। এখন সে কাউকে চিনেনা
ওদের বাড়ীতে কেউ গেলে কামড়ে দেয়'
অবাক চাহনি দিয়ে চলে যাই
অনিন্দিতা!
-দেখতো বাবা! মেয়েটার কেন এমন হল(কেঁদে উঠেন অনিন্দিতার মা)
আমি এগিয়ে যাই
-'কত ডাক্তার,কবিরাজ বৈদ্দ শেষ'
সরল হাসি দিয়ে আমায় বলে উঠলো অনিন্দিতা 'গো টু হেল'
আমি হাত রাখি তার মাথায়
চুপ করে থাকি
বিশ্বাস হয়না টলটলে দু'টি চোখের ভিতরের দিকে তাকালে
চলে আসার আগে
ঠিক বারান্দার শেষ কোণে
অনিন্দিতা ডেকে উঠে 'শোন'
দৌড়ে যাই
'আমায় ভয় পাসনে
এছাড়া আমাদের কোন উপায় নাই
গল্পটা ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে
চায়ের কাপে,মুদির দোকানে
এখন কুত্তাটা আমাদের বাড়ীমুখী হয়না
জ্বীনের ভয়,খোদার নয়'
দিন যায় পাখির পালকের মত উড়ে উড়ে
অনিশা'র বিয়ে হয়
দুরে কোথায়
আবার আরো বেশি একা হয়ে পড়ে অনিন্দিতা,মা
সাহস সঞ্চার করে 'কুত্তাটা'
আমাদের সময়গুলো ব্যস্ত হয়ে উঠে
চলে আসি শহুরে ব্যস্ততায়
পড়াশোনা....ইত্যাদি
অনিন্দিতা লড়াই চালায়
তারা এখানের কেউ নয়
লোকে বলে 'ভাসানি'
কেউ এগিয়ে আসেনি
একদিন শুনা যায়
পাখিদের মুখে আর প্রজাপতির ডানায়
অনিন্দিতা নেই
অপমানিতা হয়ে,সব হারিয়ে
সে উড়ে গেছে অন্য কোথায়
খুন হয়েছে একটি লালগোলাপ
এখন সারাবেলা নি:সঙ্গ ডাকাতিয়া পাড়
বাঁকা আমগাছটার নীচে দোলনাটা
এবং একটা অথর্ব
যে লিখে যায় কাহিনী
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।