Raindrops falling from heaven.. Will never wash away my misery..
জীবনে অদ্ভূত প্রেমের ঘটনা অনেক শুনেছি কিন্তু বাস্তবে প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য কিংবা দূর্ভাগ্য কোনটা জানি না সেটা আমার আগে কখনও হয় নি। কিন্তু আজকে সেই দূর্ভাগ্য বলব নাকি সৌভাগ্য, তার সম্মুখীন আল্লাহ আমাকে করিয়ে দিলেন।
আমি যে কলেজে পড়ি সেটা একটা কম্বাইন্ড কলেজ। আমি প্রথম যেদিন কলেজে যাই সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি ছিল, তবু নতুন কলেজে যাও্য়ার উত্তেজনায় বৃষ্টি মাথায় করেই কলেজে উপস্থিত হয়েছিলাম। যথারীতি বৃষ্টির কারনে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি অনেক কম ছিল।
তারপর দিন আমার সেই অদ্ভূত প্রেমিক প্রেমিকার সাথে দেখা হয়েছিল। এমনিতে অদ্ভূতের কিছু ছিল না, অদ্ভূত বলছি একারনে যে পুরো ক্লাসেই প্রচলিত ছিল যে ছেলেটা মেয়েটাকে আসলে ভালবাসে না। তখন চিন্তা করতাম যে মেয়েটা এত বোকা কেন? ক্লাসের সবাই জানে, ছেলেটা ওকে ভালবাসে না, অভিনয় করছে তো মেয়েটা কেন বোঝে না।
তারপর আস্তে আস্তে ওদের দুজনের সাথেই আমার ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে, ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠার একটা কারনও সম্ভবত আছে, ক্লাসের সবাই মেয়েটাকে বুঝানোর চেষ্টা করত যে ছেলেটা ওকে ভালবাসে না, ধীরে ধীরে এভাবে অনেকের সাথেই ওদের তিক্ত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমার সাথে সেরকম কিছু ছিল না, আমি ভর্তি হয়েছিলাম ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস অর্ধেক হওয়ার পরে।
যখন ওদের সাথে আমার বেশ ভাল একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেল, আমি ওদেরকে কাছে থেকে জানলাম তখন ওদের দেখে আমার কোন ভাবে মনে হয় নি যে ছেলেটা আসলেই ছলনা করছিল। আমিও একসময় ভাবতে শুরু করলাম ক্লাসের সবার নিশ্চয়ই কোন ভূল ধারনা আছে। ক্লাসের অনেকে আমাকে ওদের সাথে মিশতে নিষেধও করেছিল, আমিও ভাবতাম ওদের দুজনের মাঝে আমার না থাকাই হয়ত ভাল, আমি ওদেরকে একটু এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু তারপরেও ওদের ঝগড়া হলে কীভাবে যেন ঝগড়া মেটানোর দায় আমার ঘাড়েই এসে পড়তে লাগল।
একদিন একটা ঝগড়া মিটানোর মাঝে সুযোগ পেয়ে সবুজ আমাকে হঠাৎ করে বলল, তোমার সমস্যা কি তুমি বার বার আমাদের ঝগড়া মিটাও কেন? আমি কষ্ট করে ঝগড়া লাগাই আর তুমি বার বার এসে সব ঠিক করে দাও।
আমি একটু অবাক হয়েই প্রশ্ন করি, মানে কি?
তখন সবুজ আমাকে বলে, আমি তোমাকে এখন এমন কিছু একটা বলব যা শুনলে তোমার ধারনা বদলে যাবে।
তুমি আমাকে কি এমন বলবা? আমি প্রশ্ন করি।
আমি নদীকে ভালবাসি না, সবুজের উত্তর।
তাহলে তুমি ওর সাথে কেন আছ?
তুমি নিশ্চয়ই ক্লাসে আমার নামে অনেক কথা শুনেছ?
হ্যাঁ শুনেছি। সেগুলো কি সত্যি? তুমি কি আসলেই ওরকম?
আমি তুমি যা শুনেছ তেমনও না, আমাকে যেমন দেখছ তেমনও না।
তাহলে তুমি কেমন?
আমি আমার মত মতন।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, তাহলে তুমি কেন নদীর সাথে আছ? তুমি ওর সাথে চিটিং করতেছ কেন?
তুমি আমার নামে যা শুনেছ আমি আসলেই ওতটা খারাপ ছিলাম, আমার সাথে অনেক মেয়ের রিলেশন ছিল। এখন নেই। এসব শুনে নদী একবার আমাকে অপমান করেছিল। তাই আমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমন করেছি।
কিন্তু এখন দেখছি ও অনেক ভাল একটা মেয়ে ও আসলেই আমাকে অনেক ভালবাসে, এখন আমি ওকে ভালবাসতে পারছি না ওকে ছাড়তেও পারছি না।
তুমি ওকে বলে দাও তুমি ওকে ভালবাস না, তুমি ওর ক্ষতি কেন করছ?
না আমি এটা বলতে পারব না, নদী আমাকে অনেক ভালবাসে, আমার ভয় হয় আমি ওকে এভাবে বললে ও নিজের কোন ক্ষতি করে ফেলবে।
তাহলে আমি বলি?
তুমি বললে ও বিশ্বাস করবে না। এখন পর্যন্ত অনেকে চেষ্টা করেছে।
যাই হোক সেদিনের মত কথা আর এগোয় নি, আমি এসব নদীকে বলতে গিয়েও বলতে পারি নি কারন ও কখনওই বিশ্বাস করত না।
তবে আমি পরোক্ষভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতাম প্রায়ই। ও তেমন গুরুত্ব দিত না।
যাই হোক তারপর থেকে অনেক কথাই শুনতাম, পরে একসময় জানলাম সবুজের অন্য একটা মেয়ের সাথে অনেকদিন ধরে সম্পর্ক রয়েছে। সবকিছু জেনেও আমার কিছু করার ছিল না। কারন অন্ধ প্রেম যাকে বলে ঠিক সেটাই ছিল নদীর মাঝে।
সেকেন্ড ইয়ারে ওঠার পর আমরা তিন জন একই সাথে কেমিস্ট্র পড়া শুরু করি। একদিন কেমিস্ট্রি স্যারের বাসা থেকে বের হওয়ার পর হঠাৎ করে সবুজ আমাকে পিছন থেকে ডাক দেয়, বলে আমাকে তুমি ২ টা নেইল পলিশ কিনে দাও।
আমি তোমাকে কোথা থেকে নেইল পলিশ কিনে দিব?
সামনে এত বড় মার্কেট দেখছ না? ওইখান থেকে কিনে দাও।
পরে আমি ওখান থেকে সবুজকে ৪ টা নেইল পলিশ কিনে দেই। পরে জানতে পারি নেইল পলিশ গুলো নদীর জন্য ছিল না, ছিল তার অন্য প্রেমিকার জন্য।
কিন্তু নদীর বিশ্বাস এতটাই দৃঢ় যে এটাও ওকে এটাও বিশ্বাস করানো অসম্ভব ছিল। যাই হোক আমাকে সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হল। আমার মনের মাঝে খচ খচ করত, আমি জেনেও কিছু করতে পারছিলাম না।
গতকালকে হঠাৎ করে একটা ব্যাপার নিয়ে ওদের দুজনের মাঝে প্রচন্ড ঝগড়া হয়, আমি ইচ্ছে করলে ওদেরকে বুঝিয়ে ঝগড়া মিটিয়ে দিতে পারতাম কিন্তু কেন যেন ইচ্ছে করল না।
কলেজ ছুটি হওয়ার পর একটা ব্যাপার নিয়ে ওদের ঝগড়াটা আরো খারাপ রূপ নেয়।
সবুজ অনেকটা বাজে ভাষাতেই নদীকে অনেক কথা বলে। আজকে কলেজে যাওয়ার পর এগুলো শুনে আমি প্রথম থেকে যা যা জেনেছি সব নদীকে বলে দেই।
জানি না কীভাবে যেন আজকে ও সব বিশ্বাস করে, ছুটির পর সবুজ কে ডেকে সব কথা জিজ্ঞেস করে নদী( আজকে সবুজ কলেজে আসেনি) সবসময়ের মতই সব অস্বীকার করে সবুজ, এমনকি আমি ওর সামনে সব কথা বলা পরেও।
শেষ পর্যন্ত বেশী দেরি হয়ে যাওয়ায় আমি বাসায় চলে আসি। কিছুক্ষন পর নদীর একটা মেসেজ পাই "Everything is over"
সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হল সে আজকে নদীকে যা যা বলেছে, সে নাকি নদীকে আসলেই ভালবাসে।
সে সারাজীবন নদীকে ভালবাসবে, এমনকি এসব বলতে বলতে সে কেঁদে ফেলেছে।
সে কখনও আর কাউকে ভালবাসবে না, কলেজ শেষ হওয়ার পর কোনদিন তার মুখ সে নদীকে দেখাবে না, কিন্তু সে যখন অনেক বুড়ো হয়ে যাবে তখন সে একদিন নদীর সাথে দেখা করবে এটা প্রমান করার জন্য যে সে আসলেই ভাল ছিল।
এসব শোনার পর নদী তাদের সম্পর্কের মাঝে সব কিছু ঠিক করে ফেলতে চায় কিন্তু সে ঠিক করতেও রাজি হয় না।
সব কিছু শোনার পর সত্যি বলতে আমি নিজেই কনফিউজড হয়ে গিয়েছি যে আমি যা শুনেছি তা কি আসলেই সত্যি ছিল? নাকি আমিই ভূল দেখেছি বা শুনেছি।
এই পুরো ঘটনাটা বাস্তব শুধু নাম গুলো ছাড়া।
এই ঘটনা থেকে আমি শুধু এটাই এখন পর্যন্ত বুঝলাম না কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা। সব থেকে বড় প্রশ্ন সবুজ যদি নদীকে নাই ভালবাসবে তাহকে সে বার বার কেন এত অভিনয় করত? এমনি আজকেও! আবার সে যদি আসলেই সে নদীকে ভালবাসত তাহলে সবুজ নিজেই কেন সবাইকে বলে বেড়াত যে ও নদীকে ভালবাসে না? অমিমাংসিত রহস্য!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।