কিছুই লিখতে পারিনা। পুরাই বকলম বলতে পারেন। শুধু পোস্ট পড়তে আসি। সামুতে ঢুকলে যে কিভাবে সময় পার হয়ে যায়। সবাই এত ভাল লিখে দেখে মনে হয়, আহা আমিও যদি এদের মত লিখতে পারতাম মসজিদে জুতা চোরের খপ্পরে পরেনি এমন মানুষ মনে হয় খুব কমই আছে।
আমি মুসলিমদের কথা বলছি যারা কমপক্ষে জুমার সালাত আদায় করে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বেলায় এরকম ঘটে কিনা আমি সঠিক জানিনা তবে আমার ধারনা সবাই মসজিদের জুতা চুরির ব্যপারটা জানে। আমি নিজেও একবার জুমার সালাত আদায় শেষে বের হয়ে আবিষ্কার করি আমার জুতা চুরি হয়েছে এবং সেটা খুব সম্ভবত ২০০৬ সালে। এখন আমি জুতা চুরির দায়ে কাকে অভিযুক্ত করবো? চোরকে নাকি মসজিদ কে? নাকি মসজিদ যারা পরিচালনা করে তাদেরকে!!!! মসজিদ পরিচালনা কমিটির কি চোর বানিয়েছে? ন্যুনতম জ্ঞান বুদ্ধি থাকলে নিশ্চয়ই বুঝা উচিত দোষ মসজিদ বা পরিচালনা কমিটির না।
গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুক হোমপেজ, নিউজ চ্যানেল, পত্র পত্রিকা, ব্লগ এমনকি মানুষের মুখে একটা কথা যেন খুব বেশি শুনতে পাচ্ছি এন এস ইউ (NSU) কি জঙ্গি উৎপাদনের একটি কারখানা? "নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কি জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য?" টাইপ হেডলাইন করে মুখরোচক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে নানা পত্র পত্রিকায়।
ঘটনা এখানেই থেমে নেই, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসী উৎ্পাদনের ক্ষেত্র কি-না, তার সত্যতা যাচাইয়ের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশে বলা হয়, ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার রয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থী। ইতিপূর্বে ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িত বলে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ওই ঘটনায় হামলাকারীদের এখনো গ্রেফতার করা হয় নাই। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয় নাই।
অন্য প্রতিবেদনেও অভিযোগ রয়েছে যে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসী উত্পাদনের ক্ষেত্র।
এই দুই ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং ব্যবস্থা নেওয়ার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। ব্যপারটা মসজিদ কেন চোর উৎপাদনের ক্ষেত্র কিনা জিজ্ঞাসা করার মতো হলোনা? তের হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী যেখানে অধ্যয়নরত রয়েছে, পাঁচ ছয় জনের জন্য পুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত তা আমার মাথায় আসে না!
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সর্বপ্রথম সরকার অনুমদিত বেসরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। গত দুই দশকে অত্যন্ত সুনামের সাথে উচ্চশিখায় একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে এন এস ইউ। লাখো শিক্ষার্থী এন এস ইউ থেকে উচ্চ শিক্ষা শেষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেশ বিদেশে, কাজ করে যাচ্ছে নামকরা সব প্রতিষ্ঠানে।
শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে এখানে চলছে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সামাজিকতা, জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা। তিন বছরেরও অধিক সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত থাকার কারনে এতটুকু গ্যারান্টি সহকারে বলতেই পারি, ন্যায়নীতি বিবর্জিত কোন কার্যকলাপের শিক্ষা কোনোদিন আমরা কোন শিক্ষকের কাছ থেকে পাইনি।
আজ আমাদের এই প্রতিষ্ঠানের নামে নানা জায়গায় বিষেদাগার ছড়ানো হচ্ছে? এন এস ইউ এর সার্বিক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। আমি সবার কাছে বিনীতভাবে অন্যান্য পাবলিক ইউনিভার্সিটির দিকে তাকাতে বলছি। ভাল করে খেয়াল করুনতো অন্যান্য পাবলিক ভার্সিটির সাথে এন এস ইউ এর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অনুপাত কতো? কই অন্য কোনও ভার্সিটি কে তো ঢালাওভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে না।
যখন অন্যান্য ভার্সিটিতে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, শিবিরের তাণ্ডব দেখতে হচ্ছে দেশবাসীকে তখন দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্যে পুরো এন এস ইউ কে দায়ী করা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
পিতামাতার উদ্বেগ, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশীদের নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে রীতিমতো বাধ্য হয়েই লিখতে বসলাম। কয়েকটা সন্তানের মধ্যে একজনের অপকর্মের জন্য যেমন বাবা মা কে দায়ী করা যায়না তেমনি হাজারো শিক্ষার্থীর মাঝে গুটি কয়েকজনের জন্য পুরো প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করবেন না। এন এস ইউ এর জঙ্গিগুলো অত্যন্ত ভদ্র থাকায় এখনও তারা সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করছে। বাড়াবাড়ি মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে মনে হয়না সহ্য করা সম্ভব হবে।
আর একটি মন্দ কথা যেন আমাদের প্রিয় ভার্সিটির নামে না শুনি, দেশের এই নামকরা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আর একটা লিখা যেন আমাদের না পড়তে হয়।
কয়েকজনের অপরাধ সবার ঘাড়ে চাপিয়ে দিবেন না। যদি তার ব্যতিক্রম হয় তবে জেনে রাখুন বাংলার ইতিহাসে ছাত্ররা যতবার জেগে উঠেছিল কেউ তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি কোনদিন পারবেও না।
লেখাটি এন এস ইউ অথবা অন্যান্য প্রাইভেট ভার্সিটির সবাইকে শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি। শেয়ার করে, কপি পেস্ট করে, ওয়াল, টাইম লাইনে যে যেখানে পারেন ছড়িয়ে দিন আমাদের মেসেজ। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবার যেন থাকে শক্ত অবস্থান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।