আজকাল অনলাইনে বাংলা সংস্কৃতি চর্চা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । যে কেউ ইচ্ছা করলেই তাদের আধাপাকা কিংবা মনগড়া কাব্য কাহিনী ব্লগ এ প্রকাশ করতে পারে , এর জন্য এখন আর প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয় না । আমিও এমনই একজন সাহিত্যিক । আর সেই সূত্রে সেদিন ‘বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ’ ব্লাগ এ “আনু মানুর ভাত চুরি এবং আমাদের নিউক্লিয়ার দেশপ্রেম” শিরোনামে একটা লেখা পড়ছিলাম । অনেক মন্তব্য জমা পরেছিল লেখকের পক্ষে রায় দিয়ে ।
কিন্তু আমি কোন মন্তব্য লিখতে পারি নি , এই ভেবে যে জাতি হিসেবে আমরাতো দেশদ্রোহী কিংবা দেশ ...নই। দেশকে ভালবাসি বলেই তো বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে জীর্ণশীর্ণ এ দেশটাকে কিনেছি আমরা । সামান্য অর্থ দিয়ে কেনা কোন বস্তুর প্রতি যদি আমদের পাহাড়সম ভালোবাসা থাকে , তাহলে রক্ত দিয়ে কেনা এই বাংলার প্রতি আমাদের ভালবাসা থাকবে না কেন ? হ্যাঁ ,ভালোবাসা আছে, কিন্তু একে দেখা যায় না ,ছোঁয়া যায় না শুধু অনুভব করা যায় । তবে আমাদের সেই মন আজ চির ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পরেছে । এ কথা যেমনি মিথ্যা নয়, মিথ্যা নয় “আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা ,কারো দানে পাওয়া নয়” কবিতার এই লাইন দুটো , তেমনি মিথ্যা নয় আমাদের স্বার্থপরতা কিংবা দুর্বলচিত্ত মানসিকতা ।
রবীন্দ্রনাথ হয়ত তাই বলেছিলেন,
“সাত কোটি বাঙালিরে হে স্নেহার্থ জননী রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি ”
অন্যদিকে বাঙালি জাতির কর্ণধার শেখ মুজিব ১০ জানুয়ারির ভাষণে বলেছিলেন,
“কবিগুরু মিথ্যা বলেছেন , বাঙ্গালিরা আজ মানুষ হয়েছে ”
শেখ মুজিব বেঁচে নেই, বেঁচে নেই রবীন্দ্রনাথ, তবুও তাদের এই বিশ্বাস গুলো নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে ঘরে ঘরে, মিটিংয়ে- মিছিলে । আমাদের এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করার মতো ভাষা আমার জানা নেই । তবে কাজী নজরুল কিছুটা হলেও বুঝাতে পেরেছেন এই বলে যে,
“বন্ধু! তোমরা দিলে নাক’ দাম রাজ-সরকার রেখেছেন নাম! যাহা কিছু লিখি অমূল্য ব’লে অ-মূল্যে নেন,......”
আর এর যথার্থতা প্রমাণ করতেই আজ এ দেশের কর্ণধারগণ ভীষণ ব্যস্ত সংবিধান সংস্কার, আইন প্রণয়ন এবং বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠী কিংবা ব্যক্তি কে নিয়ে আলোচনা –সমালোচনায় । ওদিকে দেশ যে রসাতলে যাচ্ছে সেদিকে দৃষ্টি খরচ করার সময় তাদের নেই । মানুষের মৌলিক চাহিদার অর্ধেকও যে সরকার পূরণ করতে ব্যর্থ তাদের দ্বারা জাতির মেরুদণ্ড সোজা করাবার বাসনা পোষণ করার কোন মানে হয় না ।
তবে যা না বললেই নয়, আমরা কিন্তু আজ কিছু কিছু দিকে অনেক দূর এগিয়ে গেছি । এই যেমন দুর্নিতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, ভারতের গোলাম হয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে গিয়ে বিদ্যুৎ কে দেশ থেকে উৎখাত করেছি এমনি আরও কত কিছু , যারা বিরুধীপান্থি টিভি চ্যানেল দেখেন তারা বিস্তারিত বলতে পারবেন । তবে আশার কথা – জাতির এই উৎশৃংখল স্রোতের বিপরীতে বয়ে চলছে আমাদের ক্রিকেটদল, বিজ্ঞানী- গবেষকসমাজ, আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি, কিংবা মুসা ইব্রাহীম, সিদ্দিকুর রহমানরা । তাই একেবারে আশাহত হওয়ার কারণও নেই , মনের মাঝে একটু একটু করে স্বপ্ন বুনে যাওয়া যায় । পৃথিবীর মাঝে বুক উঁচু করে চলার স্বপ্ন, ‘বাঙালি’ বলে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ।
যত কিছুই বলি না কেন আনু-মানুর ভাত চুরির জন্য যে আমরাই দায়ী সে কথা লুকানো যাবে না । যেই দেশের সরকার মানুষের খাদ্যের ব্যবসথা করতে পারে না সেই দেশে ভাত চুরি মানুষের মৌলিক অধিকার হাওয়া উচিত । আমাদের পিট যতক্ষণ না পর্যন্ত দেয়ালে না ঠেকবে মনে হচ্ছ তার আগে আমরা পরিবর্তনের তাগিদ আনুভব করতে পারব না । এবারও হইত জাতি সত্ত্বার উপর দোষ দেওয়া যেত তবে তার সুযোগ একদমই নেই । কেননা সে তো অসংখ্য বার তার দাপট দেখিয়েছে , এখন আমাদের পালা......।
। এবারই পরীক্ষা হয়ে যাবে আমরা কি সত্যিকারের আকবর, ঈসা খাঁ, তিতুমীর, শেরে বাংলা, শেখ মুজিবের সন্তান ? আমরা কিছুতেই হার মেনে নিতে পারি না । তাহলে বাংলার মা রুপী আত্মা আমাদের জন্য চির অভিশাপ হয়ে আসবে । তাই কালের স্রোতে গা না ভাসিয়ে জীবন সংগ্রামে নেমে আসতে হবে, মেনে নিতে হবে কবি সুকান্তের কবিতার কথা ,
“হে মহাজীবন এবার আর কাব্য নয় এবার কঠিন কঠোর গদ্য আন পদ্য লালিত্য ঝংকার মুছে যাক গদ্যের কড়া হাতুরিকে আজ হানো প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ”
নিউক্লিয়ার দেশপ্রেম বলতে লেখক ঠিক কি বুঝাতে চেয়েছেন তা বোধগম্য হচ্ছে না। কেননা সাধারণ অর্থে নিউক্লিয়ার বিশেষণ দ্বারা অতি সামান্য বুঝালেও বিজ্ঞানের সকল ছাত্রই কিন্তু এর বিরদ্ধে কথা বলবে ।
কারন তারা জানে নিউক্লিয়ার বলতে আসলে কি বোঝায় । তাহলে বলা যায় ছোট একটা নিউক্লিয়ার বোমা দিয়ে যদি একটা আস্ত নগরী নিশ্চিহ্ন করে দেয়া যায়, তবে চৌদ্দ কোটি বাঙালির মনে মনে বেড়ে উঠা নিউক্লিয়ার প্রেমকে যদি নিউট্রন কনার মতো কোন কাণ্ডারির দ্বারা একটু নাড়া দেওয়া যায় তবে বুকে হাত রেখে বলতে পারি বাঙালির আলোক স্পুলিংগে সমগ্র পৃথিবী জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে , নতুন এক ইতিহাস লেখা হবে ;যে ইতিহাসের সমগ্র পটভূমি জুড়েই কেবল থাকবে “বাঙালির নিউক্লিয়ার দেশপ্রেম । ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।