আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এতিম, অসহায়, দুস্থদের টাকা ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন জামায়াত-শিবির কর্মী পালনে দিয়েছে ॥ ৪শ' কোটি টাকা (সুত্র জনকন্ঠ)



আর্ত মানবতার সেবার নামে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পুনর্বাসনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মুনাফার আড়াই শতাংশ, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুদান এবং জনগণের কাছ থেকে আদায় করা জাকাতের টাকায় পরিচালিত ফাউন্ডেশনটি মূলত জামাতপন্থী সংগঠনের কর্মকা- সম্প্রসারণ এবং শিবিরের নেতা-কর্মীদের কর্মসংস্থানের জন্য অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং জামায়াত ঘেঁষা বিভিন্ন সংগঠনকে ফাউন্ডেশনের পৰ থেকে ৪শ' কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এতিম, অসহায় এবং দুস্থদের প্রাপ্য অর্থে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ডিগ্রী অর্জনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই অতি গোপনে এ ধরনের কর্মকা- চলে এলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন নিয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করা হয়েছে। সেখানে কিছুটা অনিয়ম ধরা পড়েছে। তবে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য পুনরায় তদন্ত করা হচ্ছে। সূত্রে জানা গেছে, আর্ত-মানবতার সেবা, শিৰাসম্প্রারণ, গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষার বিকাশ সাধন, আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ, শিল্প, সাতিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ সাধন, ইসলামী মতাদর্শের প্রচার ও গবেষণামূলক কর্মকা-ে উৎসাহদান এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের লৰ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাসত্মবে ঘটছে এর উল্টো ঘটনা।

এ ফাউন্ডেশন থেকে হাতে গোনা দু'একটি বিষয় ছাড়া অধিকাংশ ৰেত্রেই জামায়াতের সঙ্গে জড়িত সংশিস্নষ্ট সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে অনুদান এবং আর্থিক সহায়তাসহ একাধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি সম্প্রতি সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ আসার পরেই ফাইন্ডেশনের সামগ্রিক কর্মকা- নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদনত্ম শুরম্ন করেছে। তদনত্মের প্রাথমিক পর্যায়ে রিপোর্টে এসব চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের বিরম্নদ্ধে প্রাথমিকভাবে যে তদনত্ম হয়েছে তাতে অনেকটাই অনিয়ম পাওয়া গেছে। অথর্াৎ ইসলামিক ব্যাংক ফাউন্ডেশনের কর্জে হাসানা অর্থের নামে যাদের সাহায্য করা হয়েছে তারা সুস্থ, সবল এবং ধনাঢ্য ব্যক্তি।

কিন্তু দুস্থ, অসহায়, হতদরিদ্র এবং যাদের কোন সহায় সম্বল নেই তাদের কর্জে হাসানা দেয়ার কথা। কিন্তু তাদের সহায়তা করা হয়নি। এছাড়া একাধিক প্রতিষ্ঠানকে কর্জে হাসানা দেয়া হয়েছে যার কোন অসত্মিত্বই নেই। অসত্মিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে নামেবেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এর পরিমাণ ৪শ' কোটি টাকার বেশি হবে।

তিনি বলেন, ইসলামিক ব্যাংক ফাউন্ডেশন যাদের আর্থিক সহায়তা করছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই জামায়াতের নেতা, কমর্ী এবং অঙ্গ সংগঠনের লোক। তবে প্রাথমিক এ তদনত্মে পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়নি। ফলে দ্বিতীয় দফায় আবার তদনত্মের কাজ চলছে। এটি শেষ হলেই ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সকল কর্মকা- ও অনিয়ম-দুনর্ীতির চিত্র বের হয়ে আসবে। সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিম থেকে চিহ্নিত কর্জে হাসানা বাবদ দেয়া অর্থের ব্যাপারে যে সকল প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অনেক সংগঠন বাসত্মবে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মূলত ইসলামী ছাত্রশিবিরের ব্যানারে যাকাত, অনুদান এবং ইসলামী ব্যাংকের লাভের অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। ছাত্রশিবিরের শিৰা বিভাগ এডুকেশন এইড নামে পরিচালনা করা হয় শিৰা সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে। এডুকেশন এইডকে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণে অর্থ প্রদান করা হয়। জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের বর্তমানে ১১ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। এই পর্ষদ চাচ্ছে ফাউন্ডেশনকে ব্যাংক থেকে আলাদা করতে।

এটাকে তারা এনজিও হিসেবে দেখাতে চান। যেকারণে এনজিও বিষয়ক বু্যরো এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানি থেকে লাইসেন্স নেয়া হয়েছে। ফাউন্ডেশনকে এনজিও হিসেবে দাঁড় করতে পারলে জামায়াতের স্বার্থে এটিকে ব্যবহার করা যাবে। ইসলামী ব্যাংকের অর্থে গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক থেকে আলাদা করার জন্যই প্রথম পদৰেপ হিসেবে সার্ভিস রম্নল পরিবর্তন করা হয়েছে। বিদেশী অর্থ ছাড়করণের স্বার্থে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)- এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য এনজিও বু্যরো ও জয়েন্ট স্টক থেকে লাইসেন্স নেয়া হয়েছিল।

লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শিৰা কার্যক্রম প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র শিৰাথর্ীদের লেখাপড়া, বৃত্তি প্রদান এবং এককালীন অর্থ দেয়ার কথা। কিন্তু দু'একটি ৰেত্রে দরিদ্র শিৰাথর্ীদের সহায়তা করা হলেও অধিকাংশ ছাত্রশিবিরের নেতাকমর্ীদের দেশ-বিদেশে বড় বড় ডিগ্রী লাভ করার ৰেত্রে অর্থ ব্যয় করা হয়। অনেক ৰেত্রে বিদেশে ব্যারিস্টারি পড়তেও ফাউন্ডেশনের অর্থ প্রদান করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, বেসরকারী যত ফাউন্ডেশন রয়েছে সেগুলো ব্যাংকের তত্ত্বাবধান ও নিয়ম অনুযায়ীই পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন পরিচালিত হচ্ছে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ সংগঠনের এক শীর্ষ নেতার কথায়। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনকে ব্যাংক থেকে আলাদা করতে পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন নজরদারি বা মনিটরিং থাকবে না। এ সুযোগে ফাউন্ডেশটিকে জামায়াতের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করা যাবে। সার্ভিস রম্নল পরিবর্তন করায় ইসলামী ব্যাংকের সার্ভিস রম্নলে নিয়োগ পাওয়া বর্তমানে কর্মরত প্রায় ৬৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বেশি ৰতিগ্রসত্ম হয়েছেন।

এ রম্নলে সংশিস্নষ্টদের ইনসেনটিভ বোনাস, হাউস ইনভেস্টমেন্ট, সার্ভিস বেনিফিটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তার দাবি ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের নয়, ইসলামী ব্যাংকের নিয়মিত কর্মকর্তা হিসেবে তাদের আত্মীয়করণ করা হোক। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ আবদুল হান্নানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে নির্বাহী পরিচালক (ইনচার্জ) ফজলুর রহমানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোন মনত্মব্য করতে রাজি হননি। তাঁর অধীনস্থ মোতাকাবি্বর নামের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, 'ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের বিষয় কথা বলতে হলে আপনার অফিস থেকে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ আবদুল হান্নানের বরাবরে আবেদন করতে হবে।

আবেদন পাওয়ার পরেই আপনার বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করা হবে। বিষয়টি ক্লিয়ার?' এভাবে জনকণ্ঠের এ প্রতিবেদককে পাশকাটিয়ে গেছেন ফাউন্ডেশনের একাধিক কর্মকর্তা। ভুক্তভোগীরা জনকণ্ঠকে জানান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যাকাত, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদান, শরীয়তের দৃষ্টিতে সন্দেহমুক্ত নয়-ইসলামী ব্যাংকের এরূপ আয়। এসব আয় ব্যাংকের মুনাফার অনত্মভর্ুক্ত না করে জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করার জন্য ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব প্রকল্প থেকে আয় এবং ইসলামী ব্যাংকের মুনাফার আড়াই শতাংশ ফাউন্ডেশনে প্রদান করা হয়েছে।

এসব অর্থ সমাজের দুস্থ ও অসহায় এবং নিঃস্বদের প্রদান করার কথা। কিন্তু এটি ব্যয় করা হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী সংগঠনের দাওয়াতী কাজে। সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রশিবিরসহ জামায়াতের একাধিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে থেকে শুরম্ন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের কাছে অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশিস্নষ্ট বিভাগ থেকে ইসলামী ব্যাংক কোন অর্থ ফাউন্ডেশনে প্রদান না করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে ইসলামী ব্যাংক বোর্ডে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একজন পরিদর্শকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

যাতে করে ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড থেকে অর্থ পাশ করিয়ে ফাউন্ডেশনে প্রদান করতে না পারে। ফলে এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকের কোন অর্থই ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে প্রদান করা হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রদান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আঃ মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন ইসলামী ব্যাংকেরই একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তবে এটি নিয়ে বিভিন্ন মহল যা বলছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং অসত্য।

তিনি বলেন, আমাদেরও অনেক ভুল রয়েছে। তবে তা ঠিক করার জন্য কাজ করছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমি জানি। তিনি আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংকের দৃষ্টিতে যেসব আয় বৈধ নয় তা ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে দেয়া হচ্ছে। তবে ব্যাংকের মুনাফার আড়াই শতাংশ দেয়ার যে কথা হচ্ছে তা ঠিক নয়।

যাঁরা বলছেন তাঁরা ঠিক বলছেন না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.