আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যায়নরত!!! পছন্দ করি গান গাইতে, গান শুনতে আর ছবি তুলতে
পোলাটার সাথে প্রথম পরিচয় আজিমপুর এ। ক্লাস টু'তে পড়ি যতদূর মনে পড়ে। সাইকেল চালাইতে চালাইতে ৮১ বিল্ডিং এর সামনে গিয়ে দেখি সেও সাইকেল চালায়। আরে! এই পোলাটা স্কুলে আমাগো ক্লাসে নতুন আইসে ওই পোলাটা না? আরে তাই তো! আমারে দেইখাও হাসি দিছিলো। সাথে আন্টি ছিলো।
এসে কথা বললেন, বাসায় গেলেন। সেই থেকে শুরু - একসাথে স্কুলে যাওয়া, খেলা-ধুলা, পড়া-লেখা সব। দোস্ত মনে আছে? শুক্রবার দিন! তোরে আংকেল সকালে নামতে দিতো না। আমি যাইতাম বলে কয়ে তোরে নামাইতে। মাঝে মাঝে পারতাম, মাঝে মাঝে আমারেও তোর লগে পড়তে বসতে হইতো।
স্কুলে তো সবাই আমাগোরে ভাই মনে করতো। মনে আছে, সকাল বেলার কথা? রূপক ভাই এর কুত্তাটা নিয়ে ঘুরাঘুরি? বিকেলে সাইকেল চালানো? কখনো বাসার সামনে ক্রিকেট খেলায় ১০০-১৫০ রানের কথা? বিল্ডিং এর জানালার গ্রিল বেয়ে ৪ তলায় উঠার কথা? দুই তলার কাঁচ-টা যে তুই কয়বার ভাংছিস গুনে শেষ করা যাবে না। তুই ছিলি শালার আকাইম্মা! জানালার গ্লাস ভাংতি, মানুষের গায়ে বল মারতি। তোর বদ মেজাজী স্বভাবটা আমার ভালোই লাগে। এখনো মনে আছে হুট কইরা খেইপা যাওয়া, ঝামেলা বাঁধানো।
আফসোস, আমার লগে কোন অজ্ঞাত কারণে তোর ঝামেলা লাগতো না। অবশ্য আমার মনে হয় এই জন্য আমাগো মাঝের কুবের-গনেশ সম্পর্ক দায়ী। সব কিছুতেই আমাকে সাপোর্ট দিতি। আমি যদি কইতাম আমকে জাম কইতাম, তুই ও আমরে জাম-ই মানতি।
ক্লাস ৫ পর্যন্ত একসাথে পড়ার পর স্কুল চেঞ্জ হয়ে গেলো।
কিন্তু তাতে কি? বিকালে প্রতিদিন খেলা হইতো। আমি আর তুই এক টীমে - এটা অঘোষিত নিয়ম ছিলো সব খেলাতেই! এক লগে স্বপন স্যার এর কাছে পড়া - মনে আছে? আল্লাহর কি ইচ্ছা - এস.এস.সি - তে একই রেজাল্ট। এক সাথে গিটার কিনে শেখা শুরু করলাম। তোর রিলেশন হইলো, আমরা একই কলেজে ভর্তি হইলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস - সেকশন আলাদা।
যাই হোক কলেজে যাওয়া আসা এক সাথে তো হইতো, বিকালে খেলা তো হইতো। মনে আছে বিকালে তোরে কেমনে খেপাইতাম? সবসময় কানে মোবাইল! বোলিং করার সময়ও!!! মনে আছে অমি ভাই এর কাছে এক লগে পইড়া ২য় টার্ম এ বাঁশ খাওনের কথা? হি! হি!! হি!!!কলেজের শেষ দিকে তোর রিলেশন ভাংলো। কিন্তু আমাগো বন্ধুত্ব একবারের জন্যেও ভাঙে নাই। একসাথে হামিদের বাসায়, অমলের বাসায় মডেল টেস্ট দেওয়া, এক লগে ফাঁকি দেওয়া, এক রুমে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেওয়া। আশ্বর্য - এবারও একই রেজাল্ট! আবার ওমেকায় ক্লাস, ফাঁকি! আড্ডা, পুল খেলা, গান বাজনা, এমনকি একসাথে সিগারেট খাওয়া শুরু।
অ্যাডমিশন টেস্ট গুলার কথা মনে আছে? কি যে পেইন। কিচ্ছু পারতাম না, শুধু ঘুরাঘুরি করতে কুয়েটে যাওয়া। তারপর সিলেটে ঘুরাঘুরি। এমন হইসিলো যে তো্তি। ৩৬০০ সেকেন্ডের খবর আমি জানতাম, তুই আমার ৩৬০০ সেকেন্ড এর খবর জানতি।
হঠাৎ কি যেন হইলো! তুই এক ভার্সিটিতে আমি আরেকটা ভার্সিটিতে। হঠাৎ সব আলাদা। একা হয়ে গেলাম খুব। মনে আছে নিউমার্কেট এলাকায় একা হাটতে পারতাম না - কারণ শেষ কবে তোকে ছাড়া একা ওই এলাকায় গেছি মনে পড়ে না। কিন্তু সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়।
মনে করলাম আমিও পারবো। পারিনি! জানিনা তুই পেরেছিস কিনা। তোর কাছ থেকে ভাগতেই কিনা - হঠাৎ বাসা বদলানোর সিদ্ধান্ত জানালাম বাপ-মা কে। ভাবলাম, যে এখন একটু দূরত্ব হয়েছে, এই ফাঁকে চলে যাই - কষ্ট কম হবে। কাউকে না জানায়েই চলে আসলাম নতুন বাসায়।
তারপরই শালার তোগো পিরিত বাড়লো। আজিমপুর-টাকে এখন আরও বেশী আপন মনে হয় রে। গেলে আর আসতে ইচ্ছা হয় না। কিন্তু কি করার? আমি নিজেই নিজের নিয়তি গড়েছি।
আজ তোকে অনেক মিস করি দোস্ত।
ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আজকাল দেখা হয় না, কথা হয় না। কিন্তু সত্যি কথা জীবনে তোর মতো একটা বন্ধু পেয়ে ধন্য। সব সময় এমন থাকিস! তোরে অনেক ভালোবাসিরে বন্ধু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।