"প্রত্যেক সত্ত্বাকে মৃত্যু আস্বাদন করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, নিঃসন্দেহে সে হল সফল। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। " আল ইমরান,আয়াত ১৮৫
বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তির রয়েছে বিচিত্র ধরন।
দেশের আনাচে-কানাচে, অফিস-আদালতে, অলি-গলিতে, পথে-ঘাটে, বাসে-ট্রেনে বাসাবাড়িতে সর্বত্রই ভিক্ষুকদের অবাধ বিচরণ। বিশেষত রাজধানী ঢাকায় সদা-সর্বদা বিচিত্র রকমের ভিক্ষুক চোখে পড়ে। এসব ভিক্ষুকের মধ্যে অনেকে বিকলাঙ্গ। এদের সবাই কিন্তু আজন্ম বিকলাঙ্গ নয়। একটি সংঘবদ্ধ দল শিশু-কিশোরদের অপহরণ করে নির্মমভাবে তাদের বিকলাঙ্গ বানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করে।
এদের ভিক্ষার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের সিংহভাগ চলে যায় সেই সংঘবদ্ধ দলের হাতে। বিকলাঙ্গ ভিক্ষুকরা পায় খুবই সামান্য। অথচ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে সওয়াবের আশায় ভিক্ষুকদের দান করেন। ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করাকে ইসলাম আদৌ অনুমোদন করে না। আকস্মিক বিপদে পড়লে সে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য বাধ্য হয়েই অন্যের কাছে হাত পাততে হয়।
কিন্তু আজীবন জীবিকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেওয়া অত্যন্ত নিকৃষ্ট কাজ। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ভিক্ষাবৃত্তিকে মোটেই পছন্দ করতেন না। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন_ তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে চলে যাক, পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে নিয়ে আসুক এবং তার চেহারাকে আল্লাহ তায়ালার আজাব থেকে রক্ষা করুক এটিই তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি থেকে উত্তম। লোকে তো তাকে দান করতে পারে আবার না-ও করতে পারে। (মুসলিম শরীফ)
তিনি আরও ইরশাদ করেন_ যে ব্যক্তি সদা-সর্বদা ভিক্ষাবৃত্তি করে সে কেয়ামতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার মুখমণ্ডলে কোনো গোশত থাকবে না।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করে মেহনত-মজদুরী করে উপার্জন করতে উৎসাহিত করেছেন। জনৈক ভিক্ষুককে তিনি ভিক্ষাবৃত্তি বর্জন করে মেহনতের মাধ্যমে উপার্জন করতে সহায়তা করেছিলেন। ঘটনাটি আমাদের সবারই জানা থাকার কথা। তবে এখানে আরেকটি বিষয় খোলাসা করা দরকার। তা হচ্ছে_ ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করলেও প্রকৃত বঞ্চিত, হতদরিদ্র, এতিম, অনাথ, অসহায় মানুষকদের খুঁজে বের করে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা ধনীদের কর্তব্য স্থির করেছে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে_ 'তাদের সম্পদে ভিখারি ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে। ' এ জন্য পেশাদার ভিক্ষুকদের নয়, প্রকৃত বঞ্চিত ও অসহায়দের সাহায্য-সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য বটে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন_ তিন ধরনের লোক ছাড়া অন্য কারও জন্য ভিক্ষা করা বৈধ নয়। আহত, অধিক ঋণগ্রস্ত ও বৃদ্ধ দরিদ্র। (বায়হাকী) সুস্থ ও উন্নত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে আমাদের কাজ করা উচিত।
কর্মবিমুখতা দূর করে ভিক্ষকদের কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। ভিখারিদের ভিক্ষা দিয়ে সহানুভূতি প্রকাশের চেয়ে তাকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করাই তার জন্য প্রকৃত হিত কামনা। হজরত মুহাম্মদ কর্তৃক জনৈক ভিক্ষুককে কাঠুরিয়ার কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা থেকে আমরা সে শিক্ষাই পাই। আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক রয়েছে যারা শিক্ষা করাকে উপার্জনের একটি সহজ পন্থা মনে করে। ভিক্ষাবৃত্তি করে সামর্থ্যবান হওয়ার পরও তারা ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকতে চায় না।
ঢাকা শহরে এমন অনেক ভিখারিই রয়েছে গ্রামে যাদের বাড়িঘর, জমিজমা সহায়সম্পদ রয়েছে। আমরা তাদের ভিক্ষা দেই। অপরদিকে বহু প্রকৃত দরিদ্র, অসহায় মানুষ অভাব-অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ জন্য প্রকৃত দরিদ্র, অসহায়দের যেমন সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে, তদ্রূপ যারা ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা বানিয়ে ফেলেছে_ তাদের এ পেশা থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে।
লেখক : খতিব, মোহাম্মদিয়া দারুল উলুম জামে মসজিদ, রামপুরা, ঢাকা।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সৌজন্যে।
এ সংক্রান্ত আমার আগের একটি পোস্ট, আগ্রহীরা চাইলে দেখতে পারেন।
ভিক্ষা করে কোটিপতি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।